স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২ মে : সারা রাজ্যে স্বৈরাচারী ও নৈরাজ্য কায়েম হয়ে আছে। এই অভিযোগ তুলে এডিজিপি -র দ্বারস্থ হলেন বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল। শুক্রবার পুলিশের সদর কার্যালয়ে গিয়ে ডেপুটেশন প্রদান করার পর দুপুরে সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বামফ্রন্টের নেতৃত্ব। উপস্থিত বামফ্রন্টের কনভেনার মানিক দে বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের অধীন রেগা শ্রমিকদের কাজ করিয়ে সময়মতো মজুরি দেওয়া হচ্ছে না।
তাই শ্রমিকদের সময় মত রেগা মজুরি প্রদান করা এবং মজুরি বৃদ্ধি করা সহ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বামফ্রন্টের শাখা সংগঠনগুলি বিভিন্ন সময় ময়দানে নেমে সরকারি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আন্দোলন করছে। পাশাপাশি শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় রেগা মজুরির দাবিতে ব্লক অফিস ঘেরাও এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি সংঘটিত করছে। তারপরও অধিকাংশ ব্লকে এখনো বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়নি রেগা শ্রমিকদের। বরং এখন শ্রমিকদের ও বামফ্রন্টের আন্দোলন ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কারণ প্রকৃত রেগা শ্রমিকদের মজুরি মন্ডল নেতাদের পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে রাজ্যে কাজ নেই।
সরকারি দপ্তর গুলিতে খালি পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞাপন চলছে। পরবর্তী সময় বেকাররা চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিলেও তাদের চাকরি হচ্ছে না। বিশেষ করে ৫০ হাজার শূন্যপদ রয়েছে বলে বিধানসভায় হিসাব দিয়েছে সরকার। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শূন্যপদ পূরণ না করায় এগুলি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে নেশা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এছাড়া বড় সমস্যা হল পানীয় জল ও বিদ্যুৎ নেই। প্রায় সময় বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের দাবিতে নিয়ে রাস্তায় নামছে মানুষ। রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করছে। পাশাপাশি তিনি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আঙ্গুল তুলেন। দিন দুপুর বেলা আগরতলা শহরে চুরি সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। অপরদিকে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। কাউকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এছাড়া নতুন করে যে জাতীয় সড়ক হয়েছে সেগুলির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হয়েছে। যার কারণে এর নয়া জাতীয় সড়ক গুলির মধ্যে বিশাল গর্ত তৈরি হয়ে আছে। গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী। অন্যদিকে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এগুলির জন্য নৈরাজ্য কায়েম হয়েছে রাজ্যে।
মানুষকে জবাব দিতে পারছে না সরকার। তিনি আরো অভিযোগ তুলে বলেন, রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় এখনো প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএমের দলীয় কার্যালয়গুলি ও নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কর্মী সমার্থকরা আক্রান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ধর্মনগর সিপিআইএম কার্যালয়ে সন্ত্রাস চালিয়েছে শাসক দল। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পাঁচজন। এর মধ্যে রতন রায়, নিরঞ্জন দেবনাথ এবং খর কুমার নাথ গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এই ঘটনার পর ধর্মনগর থানার পুলিশকে ফোন করা হলে পুলিশ ফোন ধরেনি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সদর কার্যালয়ে জানানো হলে আধঘন্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরমধ্যে ডুকলি মহকুমা কার্যালয়ে আক্রমণ করেছে দুর্বৃত্তরা। ২৯ এপ্রিল মান্দাই সিপিআইএম কার্যালয়ে আবারো আক্রমণ সংগঠিত করেছে। সেদিন রাত এগারোটার নাগাদ সিপিআইএম এই কার্যালয়ের মধ্যে আক্রমণ সংগঠিত করেছে। টায়ার এবং বস্তা ব্যবহার করে পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়।
মান্দাই থানার নাকের ডগায় এ ধরনের আক্রমণের ঘটনার জন্য শাসক দল পুরোপুরি জড়িত। তারা তাদের মধ্যে যখন সমস্যা বাড়ছে এবং মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারছে না তখন তারা এ ধরনের ঘটনা সংগঠিত করছে বলে জানেন তিনি। আরো বলেন এটা স্বৈরাচারী শাসন। এদিকে সোনাইছড়ি সিপিআইএম কার্যালয়টি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় শাসক দলের দুর্বৃত্তরা। একই সাথে গত ৮ এপ্রিল বৈদ্যনাথ মজুমদারের মূর্তি ভেঙে রামের মূর্তি স্থাপন করে তারা। এদিকে সরকার এবং পুলিশ কোন ভূমিকা নেয়নি। পুরোপুরি নির্বিকার। এর দ্বারা পরিষ্কার শাসক দল চায় না মানুষের সমস্যা নিয়ে সিপিআইএম রাস্তায় নামুক। এ বিষয়গুলো নিয়ে বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার দ্য এডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশের কাছে যান। ওনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাওয়া হয় এ সমস্যাগুলির পরেও পুলিশ যেহেতু কাউকে গ্রেপ্তার করছে না তাহলে কি বামফ্রন্টের অধিকার নেই রাস্তায় নামার।? পাল্টা তিনি বলেছেন, কেন মানুষের সমস্যা নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক দলের রাস্তায় নামার অধিকার থাকবে না? বিষয়গুলি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। আরো জানানো হয়েছে সারা রাজ্যে এই স্বৈরাচারী ঘটনাগুলি এখনো চলছে। এদিন ডেপুটেশন প্রধানকালে এবং সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএমের পক্ষ থেকে রাধিচরন দেববর্মা, সিপিআই -র সাধারণ সম্পাদক মিলন বৈদ্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা পরেশ সরকার এবং আরএসপি -র নেতা দীপক দেব।
