আগরতলা, ১৪ মে (হি.স.) : দল চাইছে ত্রিপুরায় সংগঠনের কাজে মনোনিবেশ করি, তাই আজ মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়েই এ কথা বলেন ত্রিপুরার বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব। ত্রিপুরার রাজনীতির সমীকরণ মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে বিপ্লব দেবের চমক, এর ঘোর কাটতে ত্রিপুরাবাসীর কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। এরই সাথে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন মুখ্যমন্ত্রী কে হচ্ছেন? ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বিধায়ক দলের বৈঠক শুরু হয়ে গেছে। পরিষদীয় নেতা নির্বাচনে আলোচনা চলছে বলে সূত্রের খবর।
গত বৃহস্পতিবার বিপ্লবকুমার দেব দিল্লি গিয়েছিলেন। সেদিনই তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা-র সাথে সাক্ষাৎ করেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথেও দেখা করেছেন। আজ শনিবার সকালে দিল্লি থেকে ফিরেই সোজা তিনি রাজভবনে চলে যান।
আজ তাঁর সাথে দিল্লি থেকে এসেছেন বিজেপি-র ত্রিপুরা প্রভারী সাংসদ বিনোদ সোনকর, দলের কেন্দ্রীয় নেতা অজয় জামোয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব। রাজ্যপাল সত্যদেও নারায়ণ আর্যের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করার সময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি দলের প্রদেশ সভাপতি সাংসদ ডা. মানিক সাহা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিকও ছিলেন।
রাজভবন থেকে বেরিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব বলেন, গত চার বছরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ত্রিপুরার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে ত্রিপুরায় অভূতপূর্ব উন্নতি হচ্ছে। এখন দল চাইছে ত্রিপুরার উন্নয়নের পাশাপাশি সাংগঠনিক শক্তি আরও বৃদ্ধি হোক। তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় আসার আগে থেকেই বিপ্লব দেব সংগঠনের কাজেই নিয়োজিত ছিলেন। তাই আবারও তাঁকে সংগঠনের গুরু দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হাতেগোনা কয়েক মাস সময় বাকি থাকতে হঠাৎ বিপ্লব দেবের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফার ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের গুডবুকে নাম রয়েছে বিপ্লবের। এর পেছনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ কী হতে পারে, পর্যবেক্ষক মহলের কাছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিন রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, দলের সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। দল চাইছে এখন থেকে সংগঠনে মনোনিবেশ করি। এদিন তিনি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, দল যখনই যে দায়িত্ব দিয়েছে নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করেছি। কারণ, নিজেকে সবসময় নিষ্ঠাবান কার্যকর্তা বলেই মনে করি।
তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পেয়ে ত্রিপুরাবাসীর সাথে ন্যায় হোক সবসময় চেয়েছি। রাজ্যের সার্বিক কল্যাণে সদা সচেষ্ট থেকেছি। এখন দল চাইছে সংগঠনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করি, তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাঁর বক্তব্য, সংগঠনের দায়িত্ববান কার্যকর্তা হিসেবে দলের পাশে থাকাই আমার প্রধান কর্তব্য। কারণ, সংগঠন থাকলে সরকারও থাকবে।
আজ হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী পদে বিপ্লবকুমার দেবের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিপ্লব দেবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে, ত্রিপুরায় সংগঠন নিয়ে হয়তো কিছুটা চিন্তায় রয়েছে বিজেপি হাইকমান্ড। কারণ, ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সভাপতি হিসেবে ক্যারিশ্মা দেখিয়েছিলেন বিপ্লব। তাঁর হাত ধরেই ২৫ বছরের বাম দুর্গ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। ত্রিপুরায় জোট সরকার প্রতিষ্ঠা হতে পেরেছে। এমন-কি, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিজেপি-র সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ বিপ্লবের প্রশংসা করেছেন। এমন-কি, সংস্কারপন্থী বিধায়করা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিপ্লবের প্রতিই আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু আজ হঠাৎ তাঁর পদত্যাগ নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, ইতিপূর্বে মুখ্যমন্ত্রী পদে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনতার রায় নেবেন বলে ঘোষণা করার পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে তিনি সরে এসেছিলেন।