স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২১ এপ্রিল :কৈলাসহরের বাঁধ সংস্কারের কাজে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিগত তিন থেকে চার দিন ধরে কৈলাসহরের বাঁধের সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। কৈলাসহরের মনু নদীর পাড়ের বাঁধ সংস্কারের কাজ বিগত এক মাস পূর্বে শুরু হয়েছে। কৈলাসহরের পুর পরিষদের বিদ্যানগর, দূর্গাপুর, সোনামারা, গোবিন্দপুর, শ্মশান ঘাট, সফরকান্দি, লাটিয়াপুড়া, রাংগাউটি, মাগুরুলি ইত্যাদি গ্রামীণ এলাকা গুলোর মনু নদীর পাড়ের বাঁধ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি।
অবশেষে রাজ্য সরকারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে গত এক মাস আগে। কাজ শুরুর প্রথমদিকে কেউ কোনো বাঁধা দেয়নি। অন্যদিকে, কৈলাসহর শহরের একমাত্র শ্মশান ঘাটটি ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশেই অবস্থিত। এই শ্মশানঘাটটি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পূর্বেই ও মুক্তি যুদ্ধেরও পূর্ব থেকে কৈলাসহর মহকুমার মানুষ এই শ্মশানটি ব্যবহার করে আসছেন। তাছাড়া মনু নদীর পাড়ের বাঁধের উপর দিয়েই এই শ্মশানটিতে যাওয়া আসা করে মানুষ। সাম্প্রতি যখন কৈলাসহরের সব এলাকার মনু নদীর বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে এবং একইসাথে কৈলাসহর শহরের শ্মশান ঘাট এলাকার মনু নদীর বাঁধ সংস্কারের কাজও শুরু হয়।
কয়েকদিন কাজ করার পর বিগত চার থেকে পাঁচ দিন পূর্বে হঠাৎ করে কাজ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা শ্মশান ঘাট এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজে বাঁধা দেয়। শ্রমিকদের ধমক দিয়ে জোর করে অবৈধভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়। এই বাঁধার ফলে কাজটি বন্ধ হয়ে রয়েছে। এই শ্মশান ঘাটের বাঁধ তাড়াতাড়ি সংস্কার করা না হলে বর্ষায় গোটা কৈলাসহর শহর বন্যায় জলমগ্ন হয়ে পড়বে। এভাবে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা কাজ চলাকালীন সময়ে জোর করে শ্রমিকদের ধমক দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর স্থানীয় বি.এস.এফ -এর পক্ষ থেকে স্থানীয় মহকুমা প্রশাসনের নজরে আনে। পরবর্তী সময়ে কৈলাসহরে মহকুমাশাসক প্রদীপ সরকার স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রনজয় দেববর্মাকে লিখিত ভাবে জানান। মহকুমা শাসকের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রনজয় দেববর্মা সাথে সাথেই তিনি উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের লিখিত ভাবে জানান। পরবর্তী সময়ে কৈলাসহর পুর পরিষদের চেয়ারম্যান চপলা রানী দেবরায় এবং এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রনজয় দেববর্মা সহ পুর পরিষদের স্থানীয় কাউন্সিলর মানষী ভট্টাচার্য, সিদ্ধার্থ রায় সহ প্রশাসনের একটি দল শ্মশান ঘাট এলাকার বাঁধ পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে গিয়ে কর্তব্যরত বি.এস.এফ জওয়ানদের সাথে আলোচনা করে নিশ্চিত হন যে, বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীদের বাঁধার ফলেই বাঁধ সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। এ বিষয়ে কৈলাসহর পুর পরিষদের চেয়ারম্যান চপলা রানী দেবরায় জানান, কৈলাসহরবাসীর জন্য একমাত্র এই শ্মশান ঘাট। কয়েক দিন বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরুতেই বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীদের বাঁধা ফলে বাঁধের সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই বৃষ্টিপাতের ফলে বাঁধের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। তাছাড়া, বাঁধের উপর চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় শহরের মানুষরা শ্মশান ঘাটে মৃতদেহ আনতে পারছে না। খুব শীঘ্রই বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে বলেও জানান। এবং এভাবে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা ভারতের বাঁধ সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দিতে পারে না। বাংলাদেশের সরকার কিংবা বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা বুঝতে পারছে না যে, কার সাথে কি করছে? ৪৬ বছর পূর্বে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিলো। দীর্ঘদিন বাঁধ সংস্কার না করায় বাঁধ খানিকটা দুর্বল হয়ে যায়। এর জন্যই বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ম মেনে সম্পূর্ন বৈধভাবে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করেছিলো। আর, এই বাঁধ সংস্কার করার শুরুতেই বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা জোর করে কাজ বন্ধ করে দেয়। অথচ, কয়েক মাস পূর্বে কৈলাসহরের রাংগাউটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে দেবীপুর এলাকায় ভারত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশেই সম্পুর্ন অবৈধভাবে বাংলাদেশে সরকার রাতের অন্ধকারে বড় বাঁধ নির্মাণ করেছিলো।