স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ১৬ মার্চ : রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই খারাপ জায়গায় চলে গেছে। একই অবস্থা শিক্ষার ক্ষেত্রে। রবিবার মোহনপুর বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে ডি ওয়াই এফ আই এবং টি ওয়াই এফ -এর কনভেনশনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই কথা বললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার। তিনি বলেন, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময় রাজ্যে ছেলে মেয়েদের যাতে চাকরির জন্য বহিঃরাজ্যে যেতে না হয় তার জন্য রাজ্যেই মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছিল। একই সাথে নার্সের শিক্ষায় শিক্ষা নিতে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছিল। যাতে ছেলে-মেয়েরা রাজ্যে চিকিৎসক এবং নার্সের ডিগ্রি অর্জন করে হাসপাতালে রোগীদের পরিষেবা দিতে পারে।
অথচ বর্তমানে হাসপাতাল গুলিতে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট চলছে। রাজ্যে প্রচুর ডিগ্রীদারি চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী আছে, কিন্তু তাদের চাকুরী দেওয়া হচ্ছে না। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হাসপাতাল গুলির মধ্যে সমস্ত ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের দেওয়া না গেল বহু ওষধ রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এখন এগুলি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। বর্তমানে তো এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে অপারেশনের পর রোগীর পরিবারের সিরিঞ্জ, তুলা, ব্যান্ডেজের মতো সামগ্রীগুলোও কিনে দিতে হয়। একই অবস্থা শিক্ষা ক্ষেত্রে। বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমায় মহাবিদ্যালয় এবং রাজ্যের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলেও সেগুলি আজ সঠিকভাবে চলছে না। কারণ একদিকে মহাবিদ্যালয়গুলির মধ্যে অধ্যাপক, অধ্যক্ষের অভাব। বিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রধান শিক্ষক এবং বিষয় কেন্দ্রিক শিক্ষকের চরম সংকট। ফলে বিদ্যালয়গুলির মধ্যে পড়াশোনা একেবারে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আওতায় নিয়ে এসেছে বেশ কিছু স্কুল।
লক্ষ্য করা গেছে সেসব স্কুলে শিক্ষক নেই, যার কারণে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস না করে বাড়ি চলে আসতে হচ্ছে। পরে যখন পরীক্ষা বসছে তখন ফলাফল অত্যন্ত খারাপ হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যে শিক্ষা মন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। বিদ্যালয় গুলির মধ্যে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালাতে যাতে ইংরেজি বিষয়ক শিক্ষক থাকে তার জন্য ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের বিপক্ষে নয় বর্তমান বিরোধীদল। সরকার বাছাই করা যেসব বিদ্যালয়গুলির মধ্যে এই প্রকল্প চালু করেছে সেসব বিদ্যালয় গুলির মধ্যে যাতে ইংরেজি বিষয়ক পাঠ দিতে পারে তার জন্য শিক্ষক নিয়োগ করুক।
কারণ রাজ্যের বিরোধী দলও চায় রাজ্যের ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে পড়াশোনা করুক। কিন্তু সরকার যদি এর সঠিক বন্দোবস্ত না করতে পারে তাহলে এই প্রকল্প বাতিল করুক, পুরনো যে সিস্টেমে পড়াশোনা চলতো সেই সিস্টেমে পড়াশোনা চালু করার জন্য দাবি করলেন তিনি। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটি মানুষের পায়ের মতো। এগুলি ছাড়া চলা যায় না। সরকারকে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটি রাজ্যের চরম অব্যবস্থার মুখোমুখি হয়ে আছে। এর জন্য দায়ী থাকবে সরকার। বারবার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নজর দেওয়ার জন্য সরকারের উদ্দেশ্যে দাবি করা হলেও সরকার নজর দিচ্ছে না। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তাহলে প্রচুর অর্থ কামাই হবে। এটি বন্ধ করতে হবে। সরকার যাতে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে নিয়ে কোন ধরনের অবহেলা না করে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। এর জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যাপক প্রচার ও আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে বলে জানান তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রক্তদান প্রসঙ্গে বলেন, বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ দ্বারা যখন রোগীকে সুস্থ করতে পারেনা তখনই চিকিৎসক রক্ত প্রেসক্রাইব করেন। আর এই রক্তের বন্দোবস্ত একজন মানুষই অন্যের জন্য করতে পারেন। পূর্বতন সরকারের সময় রাজ্যে রক্তদান শিবির এক উৎসবের চেহারা নিয়েছিল। বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংস্থা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে রক্তদান, দেহ দান এবং চক্ষুদানের মত কর্মসূচি করার ক্ষেত্রে বিশেষ উৎসাহিত হয়েছিল। অত্যন্ত দারুণ উদ্যোগ। মানুষের মধ্যে ঐক্য সংহতি রক্ষা করতে এর কোন বিকল্প নেই বলে দাবি করলেন তিনি। পরে রক্তদান শিবির ঘুরে দেখেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক নারায়ণ সরকার সহ অন্যান্যরা।