স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ৬ মার্চ : পাচারকালে উদ্ধারকৃত গবাদি পশুগুলোর জন্য আটটি জেলায় ‘গোশালা’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মালিকহীন পশু ও পাখিদের দাহ করার ক্ষেত্রে শাখা খোলার জন্য দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে প্রানীসম্পদ বিকাশ দপ্তর এবং ত্রিপুরা ভেটেরিনারি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (টিভিডিএ) দ্বারা যৌথভাবে আয়োজিত রাজ্য-স্তরের সেমিনারে এমনটাই জানান মন্ত্রী সুধাংশু দাস। মন্ত্রী শ্রী দাস বলেন, সমাজের সকল ব্যক্তিকে দায়িত্ব নিতে হবে, পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ করার জন্য একটি সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এমন বেশ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে যারা রাজ্য জুড়ে পশুদের সেবা প্রদানে নিযুক্ত রয়েছে। তবে সমাজ থেকে কণ্ঠহীনদের জন্য আরও সহায়তার একান্ত প্রয়োজন রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সত্যি ঘটনা যে পশু-পাখি জীবিত থাকা অবস্থায় বিভাগ তাদের সব ধরনের যত্ন নিচ্ছে, কিন্তু সেই পশু-পাখি চলে যাওয়ার পর কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অতঃপর, অধিদপ্তরকে মালিকহীন প্রাণীদের মৃত্যুর পরে তাদের দাহ করার জন্য একটি শাখা খোলার উদ্যোগ নিতে এবং আটটি জেলায় এই জাতীয় দলও গঠন করতে বলা হয়েছে । এদিন তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায়, জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ আমিষ ভক্ষণকারী। এবিষয়ে রাজ্যে মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভর হলেও দুধ এবং ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাজ্য অনেক পিছিয়ে রয়েছে। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আটটি জেলায় মিনি-হ্যাচারি স্থাপন করা হবে এবং দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ডকে আটটি জেলায় দুগ্ধ খাত স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হবে। তাতে বেকার যুবকরাও চাকরি অর্জনের মাধ্যমে উপকৃত হবে। মন্ত্রী সুধাংশু দাস আরও জানান, রাজ্যকে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে।
রাজ্যের সব জেলাতেই ডেয়ারি স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার দপ্তরের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণীদের রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, প্রাণীদের কল্যাণে আইন করে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রাণীদের প্রতি চাই ভালবাসা, যত্ন ও সংবেদনশীলতা। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার প্রাণীদের সুরক্ষার বিষয়ে আইনি বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং প্রাণী সুরক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এদিনের অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গোমতী জিলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি সুজন সেন, ত্রিপুরা ভেটেরিনারি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. প্রিয়ব্রত নাথ, সাধারণ সম্পাদক ডা. সুজিত সাহা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজের ভিডিও শো প্রদর্শন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর টেকনিক্যাল সেশনে প্রাণী কল্যাণের আইন নিয়ে আলোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গ ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ডারি এক্সটেনশন এডুকেশন দপ্তরের অধ্যাপক ডা. অরুণাশীষ গোস্বামী, পশ্চিম জেলার জেলা বন আধিকারিক জয়াকৃষ্ণণ ভি কে এবং প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের আধিকারিক (লিগ্যাল) ডা. বিশ্বজিৎ দাস। অনুষ্ঠানে করোনাকালীন সময়ে প্রাণী কল্যাণে অসাধারণ কাজ করার জন্য গোমতী অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সোসাইটিকে ও দপ্তরের কৈলাসহরের সহ অধিকর্তা তপন রায়কে পুরস্কৃত করা হয়। তপন রায়ের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন রাহুল ধর পুরকায়স্থ। এছাড়া গতবছরের বন্যার সময় প্রাণী কল্যাণে অভূতপূর্ব কাজ করার জন্য দক্ষিণ জেলার উপ অধিকর্তা ডা. সুবীর দাস ও তার সহকর্মীদের, গোমতী জেলার উপ অধিকর্তা ডা. বিল্ল দেববর্মা ও তার সহকর্মীদের ও সিপাহীজলা জেলার উপ অধিকর্তা ডা. অমল মজুমদার ও তার সহকর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সহ অতিথিগণ তাদের হাতে শংসাপত্র ও স্মারক উপহার তুলে দেন।