স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ২৮ ফেব্রুয়ারি : রাজ্য রাজনীতিতে গত ২৪ ঘন্টায় অন্যতম ইস্যু হয়েছে লেক চৌমুহনি বাজারে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের ঘটনা। শুক্রবার সকালে বাজারে গিয়ে উচ্ছেদস্থল পরিদর্শন করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন, লেক চৌমুহনি বাজারে উচ্ছেদের ঘটনা পুরোপুরি অমানবিক ও নিষ্ঠুরতা। মানুষের জীবন জীবিকা অস্বীকার করে একটি অমানবিকতার অস্ফলন দেখা গেছে বৃহস্পতিবার।
দীর্ঘ বছর ধরে শুধু আগরতলা লেক চৌমহনি বাজারে নয়, বিভিন্ন বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারি জমিতে বসে ব্যবসা করে পরিবার পরিচালনা করছেন। কারণ রাষ্ট্রের সরকার তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পারায় তারা সরকারি জমিতে বসে ব্যবসা করতে চায়। সুতরাং সরকারের ব্যর্থতার কারণেই ফুটপাত এবং সরকারি জমি দখল হয়। তারপরও লেক চৌমহনী বাজারে যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে এর নিরিখে বলা যায়, পরিকল্পনার অভাব, দৃষ্টিভঙ্গির অভাব। অথচ নির্বাচন আসলে তারাই বলে সাবকা সাথ সাবকা বিকাশ। কিন্তু উল্টা তারাই মানুষকে বিনাশ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান বিরোধী দল সিপিআইএম উন্নয়ন ও আধুনিকতার বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু উন্নয়নের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আধুনিকতার জন্য মানুষকে সুযোগ দিতে হবে।
লেক চৌমুহনি বাজারে যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেটা অন্যায় এবং অমানবিক। এই অমানবিক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বসে থাকবে না বিরোধী দল সিপিআইএম। জোরালোভাবে আন্দোলন সংঘটিত করবে। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ভোটের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা কে কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার তাদের যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে সেটা জীবন মরণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এর বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক দলের স্লোগান তোলার প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তাদের সাথে সিপিআইএম রয়েছে। কারণ এটা কোন রাজনৈতিক দল এবং ভোটের জন্য নয়, বাঁচার স্বার্থে এই লড়াই চলবে। আগামী দিন যাতে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা কোন বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে না হয় এবং লেক চৌমহনী বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যাতে সরকার অবিলম্বে বিকল্প ব্যবস্থা নেয় তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কণ্ঠস্বরে সুর মিলিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত আছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তাদের জন্য লেক চৌমুহনি বাজারের পাশে থাকা কাটাখাল আরো গভীর করে, তার ওপর পরিকাঠামো করে তোলে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক ব্যবসায়ীকে বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়া কোন জটিল বিষয় নয়। সরকার এবং পুর নিগম চাইলে সেটা করে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারত বলে জানান তিনি। এদিকে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বিরোধী দলনেতার এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিরোধী দলনেতা বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের উস্কানিমূলক কথা বলছেন। এগুলি তাদের স্বভাব। দীর্ঘ ২৫ বছর তারা এভাবেই মানুষের সাথে ছলনা করে গেছেন। এখন তারা মায়া কান্না করছেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যের যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে তার জন্য তাদের জ্বালা উঠেছে। তারা উন্নয়ন বিরোধী। এবং দীর্ঘ ২৫ বছর সিপিআইএম রাজ্যে কি ধরনের নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে সেটা মানুষ ভুলে যায়নি। তাই তারা এই অপপ্রচেষ্টা করে যাচ্ছে বলে দাবি করলেন মেয়র। আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে তারা কোনরকম কনস্ট্রাকশন না করে নিজে নিজে জায়গায় বসে ব্যবসা করার জন্য।
আগামী এক মাসের মধ্যে তাদের জন্য শেড নির্মাণ করে বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। মেয়র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি বাজার পরিদর্শনে গিয়ে বললেন আগরতলা পৌর নিগমের পক্ষ থেকে নাকি অমানবিক ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে দাবি করেছিলেন লেক চৌমহনী বাজার ঠিকভাবে চলছে না। অথচ তিনি বাজারটিকে সঠিক দিশায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেননি। আর এখন যখন বিজেপি পরিচালিত পৌরনিগম সঠিকভাবে কাজ করে বাজারটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে গড়ে তুলতে চাইছে তখন তারা এর বিরোধিতা করছে। এর থেকে বিরত থাকতে বললেন মেয়র। কারণ রাজ্যের সিপিআইএমকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। সিপিআইএমকে এখন আর মানুষ চাইছে না। তাদের কথার কোন মূল্য নেই। যার কারণে আগামী দিন তাদের কোন আসন থাকবে না, মুছে যাবে সিপিআইএম। অর্থাৎ মানুষ গণতান্ত্রিক রায় দিয়ে তাদের একেবারে প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি আরো বলেন, সিপিআইএম এখন মানুষের কাছে যেতে পারছে না। তাই মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য তারা সুযোগ খুঁজছে। এবং তাদের কোন কাজ নেই বলেন দাবি করলেন মেয়র। এদিকে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে এক হাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত বাজার অত্যন্ত প্রয়োজন। এগুলি নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির রাজনীতি না করাই ভালো।