স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১৩ জানুয়ারি : স্যন্দন পত্রিকায় গত ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত সংবাদ “মাফিয়া দৌরাত্ম্যে দোকান খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ী”-এই শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, গত ৭ জানুয়ারি আগরতলা অরুন্ধতীনগর নিবাসী উত্তম বণিক তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব আগরতলা থানায় উপস্থিত হন এবং কয়েকজন অঞ্জাত ব্যক্তিকর্তৃক তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাই তিনি দোকান খোলার ব্যপারে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আবেদন করেন। উত্তম বণিক জানায় যে, স্থানীয় একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে, শান্তিপাড়া স্হিত জয়দেব দাস দোকানটি ক্রয় করেন। তারপর উত্তম বণিক জানান, দোকান ঘরটি বিক্রয় করার পর জয়দেব দাস একবারও দোকান পরিদর্শনে আসেননি।
পরবর্তী সময়ে কিছু মাফিয়া তার দোকানে তালা দিয়ে দেয়। এ বিষয় নিয়ে বিধায়ক সুদীপ সরকার এবং বিধায়ক রামু দাস বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রশ্ন তোলেন। এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, উত্তম বণিক থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান যে, দোকান ঘরটি বিক্রয় করার পর জয়দেব দাস একবারও ঐ দোকান পরিদর্শনে আসেননি। উত্তম বণিকের বয়ানটি পূর্ব আগরতলা থানায় জি.ডি.এন্ট্রি, নং-২৬, তারিখ- ০৭/০১/২০২৫-এ উল্লেখ আছে এবং এই জি.ডি.এন্ট্রি মূলে তদন্ত প্রক্রিয় শুরু হয়েছে। ঐ একই দিন, শ্রী উত্তম বণিক কোন FIR দাখিল করতে চাননি। তিনি শুধুমাত্র ঐ দোকানঘরটিকে খোলার জন্য পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন। উত্তম বণিকের বয়ান মোতাবেক, সাব-ইনস্পেক্টর সৈকত দে দোকানঘরটি পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু এই বিষয়ে দেখা যায় যে, উত্তম বণিক থানায় আসার পূর্বে, সাংবাদিক ডেকে তাদের সামনে কয়েকজন শ্রমিকদের দিয়ে উনার দোকানঘরের তালা ভাঙ্গার জন্য আদেশ করেন। পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্হলে পৌঁছানোর পূর্বেই শ্রমিকরা তালা ভেঙ্গে দোকানঘরটি খোলে ফেলে এবং দেখা যায় অনেক স্থানীয় লোক ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। পূর্ব আগরতলা থানার পুলিশ যতটুকু সম্ভব উপস্থিত জনতার সাথে কথা বলে ঐ জায়গার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
উত্তম বনিক, দোকানের আগের তালাটি ফেলে দিয়ে উনার নিজস্ব তালা লাগিয়ে দেয়। ঠিক তখন স্হানীয়রা প্রতিবাদ করে জানায় যে, দোকান ঘরটির ব্যাপারে স্থানীয় ক্লাব “ঐকতান যুব সংস্হা” এবং দোকান মালিকের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তারা অভিযোগ করেন যে, উত্তম বণিক সংস্হার সাথে এ ব্যাপারে কোন পরামর্শ করেন নি। পুলিশ ঘটনাটিকে আর বাড়তে না দিয়ে উত্তম বণিককে নিরাপত্তা দিয়ে থানায় নিয়ে আসে এবং পরে তাকে বাড়িতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্হা করে। স্থানীয় কোন ব্যক্তি উত্তম বণিককে শারীরিক নিগ্রহ এবং তার সম্পত্তিও নষ্ট করেনি। কিন্তু উত্তম বণিকের সাংবাদিক ডেকে দোকানঘরের তালা ভাঙ্গার প্রক্রিয়া এবং ক্লাবের সদস্যদের নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করার কারণে উত্তেজিত হয়ে পরেন। ঐ একই দিন স্হানীয় ক্লাবের সম্পাদক থানায় আসেন এবং উত্তম বণিক ও তার সহযোগীদের দ্বারা শান্তি ভঙ্গ করার বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন যে, এই সম্পত্তিটি বিতর্কিত এবং দোকান ঘরটির আসল মালিক উত্তম বণিককে দোকান ঘরটি বিক্রয়ের পূর্বে সংস্হাকে দোকান ঘরটি বিক্রয় করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। ক্লাবের সম্পাদকের অভিযোগমূলে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়। এই প্রসঙ্গে দুটি মামলা হয় থানায়। গত ৭ জানুয়ারি পুলিশ উত্তম বণিক এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বণিক দোকান ঘরে তালা খোলার জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন। বনিক নিজেই তালা ভেঙ্গে তার নিজস্ব তালা দোকানঘরে লাগিয়ে নিজের ইচ্ছাই পূরণ করেছিলেন।
কিন্তু স্হানীয় লোক এবং ক্লাবের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন এবং উত্তম বণিকের ব্যবহারে অপমানিত বোধ করেন। যার ফলে, তারা উত্তম বনিক এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে একটি FIR নথিভুক্ত করেন। ক্লাবের সদস্যরা দোকান ঘরটি ক্রয় করতে চেয়েছিলনেন যাতে দূর্গা পূজার সময় এই দোকানঘর ব্যবহার করে তারা দর্শনার্থীদের ভীড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সদস্যরা বলেন উত্তম বণিক এবং দোকানের প্রকৃত মালিক জয়দেব দাসের মধ্যে যেহেতু এই বিষয়টির সমাধান হয়নি তাই দোকানঘরটিতে তালা লাগানো হয়েছিল। পুলিশের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলে ঘটনাটি বিরাট আকার ধারন করতে পারেনি। উভয় পক্ষকে ঘটনাটি নিয়ে এককভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে পুলিশ কর্তৃক বারন করা হয়। পুলিশের তরফে থেকে উত্তম বনিককে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয় এবং পুলিশ এও নিশ্চিত করে যে, কোন ব্যক্তি জোড় করে ঐ দোকনঘরে যাতে তালা না লাগায়। বর্তমানে দোকানঘরটি উত্তম বণিকের অধিকারে আছে এবং তিনি নিজে দোকানে তালা দিয়ে নিজের কাছে তার চাবি রেখে দিয়েছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি উত্তম বণিক তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে জানান যে, বিষয়টি ক্লাবের সদস্যের সাথে বোঝাপরার মাধ্যমে নিরসন করে নিয়েছেন। তাই, তিনি মামলাটি এগিয়ে নিতে অনিচ্ছুক, কারন ক্লাবের সদস্যরা তাকে পূর্ণ সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন।যাইহোক, পুলিশ দু’টি মামলাই তদন্ত করছে। অবশ্য, তদন্তে দেখা যায় যে, ক্লাবের কিছু বিরোধী সদস্য নিজেদের স্বার্থে উত্তম বণিককে দিয়ে মিডিয়ার সামনে এই নাটকটি পরিবেশন করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং পুলিশি নজরাধীন রয়েছে। এদিকে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর দাবি জানান যাতে এ ধরনের মুষ্টিমেয় মাফিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী বললেন, সারা জীবন কমিউনিস্ট নেতারা আগরতলা শহরের জিবি বাজার থেকে শুরু করে গোটা রাজ্যে কি করেছে তার নাম দাম সবকিছুই রয়েছে।