স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১১ জানুয়ারি : রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সহ নেশা ও মানব পাচার নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার অভিযোগ উঠছিল। বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আসার পর ত্রিপুরা পুলিশকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হলেও সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ পুলিশ। যার কারণে কেন্দ্র ভরসা হারিয়েছে রাজ্য পুলিশের উপর থেকে। তাই রাজ্য পুলিশকে ঘুমে রেখে শুক্রবার সকাল থেকে আগরতলা, সোনামুড়া, কলমচৌড়া, বক্সনগর, বিশালগড় এবং উদয়পুর সহ সাতটি জায়গায় হানা দিয়েছে ইডি। পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ভোর থেকে অভিযান চলে রাজ্যের বহু প্রভাবশালীর বাড়িতে। প্রথম অবস্থায় রাজ্য পুলিশ কোনভাবেই টের পায়নি। পরবর্তী সময় যখন স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পায় তখন পুলিশে মধ্যে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু মূল তদন্তে রাজ্য পুলিশকে কাছে দিয়েও আসতে দেয়নি ইডি।
এদিন তালিকায় ছিল বহু মানব পাচারকারী এবং নেশা কারবারির নাম। বক্সনগর উত্তর কলমচৌড়া এলাকার বাসিন্দা অপু রঞ্জন দাসের বাড়িতে শুক্রবার সকাল ৬ টায় হানা দেয় ই.ডি। ই.ডি আধিকারিকদের তল্লাশি অভিযানে উদ্ধার হয় প্রচুর সম্পত্তির নথি পত্র, নগদ অর্থ সহ প্রচুর স্বর্ণালংকার। ই.ডি-র হানার আগাম খবর পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় কুখ্যাত অপু রঞ্জন দাস। শাসক দলের ছত্র ছায়ার নিচে থাকা এই অপু রঞ্জন দাস নেশা বাণিজ্যের সাথে যুক্ত বলে খবর। যতটুকু খবর ই.ডি-র আধিকারিকদের কোন ধরনের তথ্য দিতে পারে নি অপু রঞ্জন দাসের পরিবারের লোকজন। অপরদিকে বিশালগড়ের আমবাগান এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি তাপস দেবনাথের বাড়িতেও হানা দেয় ই.ডি-র আধিকারিকরা।
তাপস দেবনাথও শাসক দলের কর্মী হিসাবে পরিচিত। অপরদিকে রাজ্য পুলিশের এ.এস.আই ধ্রুব মজুমদারের বাড়িতেও হানা দেয় ই.ডি আধিকারিকরা। ধ্রুব মজুমদারের শ্বশুর বাড়িতেও হানা দেয় ই.ডি। ধ্রুব মজুমদারের শ্বশুর অমল বৈদ্য প্রাক্তন পুলিশ কর্মী। উদয়পুরের পুলিশ লাইন এলাকায় অমল বৈদ্য-র বাড়িতে তল্লাশি চালায় ই.ডি-র আধিকারিকরা। আগরতলা এম বি ক্লাব সংলগ্ন এলাকার লিটন দেবনাথ ও মিলন সংঘ এলাকার শ্যামল দে -র বাড়িতে। এছাড়াও এইদিন ই.ডি-র আধিকারিকরা দেবব্রত দে, বিশু ত্রিপুরা, কামিনী দেববর্মার বাড়ি সহ আরও একাধিক স্থানে এইদিন ই.ডি-র আধিকারিকরা হানা দেয়। ই.ডি-র আধিকারিকদের সাথে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল সিআরপিএফ। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চলে ইডি-র তল্লাশি অভিযান। তবে এইদিনের অভিযানের বিষয়ে ই.ডি-র আধিকারিকরা মুখ খুলেন নি। তবে যতদূর জানা যায়, এই অভিযানে ইডি সংগ্রহ করেছে আরো কিছু পুলিশ আধিকারিক, গাঁজা কারবার, মদ ও ব্রাউন সুগার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রোমোটারের নাম। তবে আপাতত যাদের বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছে তাদের নিয়ে রাজ্য পুলিশ বরাবরই দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। কখনো তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করলে দুর্বল ধারা রুজু করেছে। আর তাদের নেটওয়ার্ক যখন গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তখন কেন্দ্র ভরসা হারিয়েছে রাজ্য পুলিশের উপর থেকে। অবিলম্বে তাদের দমন করতে এদিকে রাজ্যে পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য সফরের একমাসের মধ্যেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। বেআইনি কোন কার্যকলাপ বরদাস্ত করতে চাইছে না সরকার। এদিকে এ বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত রাজ্যের কোন মন্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও বিরোধী দলনেতা তথা সম্পাদক রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। শনিবার তিনি সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ইডি -র প্রয়োজন বেআইনি পাচার চক্র, নেশা এবং বাকা পথে অর্থ কামাইয়ের সাথে জড়িত যারাই রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হোক। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা লক্ষ্য করা গেছে একজন রাঘব বোয়ালকেও ইডি তলব করেনি। যেসব রাঘব বোয়াল রয়েছে তারা অধিকাংশই মন্ডল সভাপতি, বুথ সভাপতি সহ বিজেপি -র নেতৃত্বদের সাথে জড়িত। যার কারণে রাজ্যে বড়সড়ো আর্থিক দুর্নীতিও চলছে। এ বিষয়ে ডিজি, আইজি তাদের জানানো হলেও তারা ঘুমাচ্ছেন। তাই ইডি প্রয়োজনে রাজ্যে আরও আসুক। কিন্তু যারা মূল অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।