স্যন্দন প্রতিনিধি। আগরতলা। ১০ জানুয়ারি : শুক্রবার বিধানসভা অধিবেশনের শুরুতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর প্রয়াণে স্মৃতিচারন করে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এদিন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন শোক প্রস্তাব পাঠ করার পর বিধানসভার সদস্যগণ দাঁড়িয়ে দুই মিনিট নীরবতা পালন করে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শোক প্রস্তাবে অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন বলেন, ত্রিপুরা বিধানসভা গভীর বেদনা ও শোকের সাথে জানাচ্ছে যে, ভারতবর্ষের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মনমোহন সিং গত ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৫১ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন। শোক প্রস্তাবে অধ্যক্ষ বলেন, ড. মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের হাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা গুরুমুখ সিং এবং মাতা অমৃত কৌর।
দেশভাগের পর তাঁর পরিবার ভারতে চলে আসে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৫২ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যান। ১৯৫৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। শোক প্রস্তাবে অধ্যক্ষ বলেন, ড. মনমোহন সিং ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৬৯ সালে দেশে ফিরে দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। এরপর ১৯৭২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি অর্থ সচিব এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ থেকে ১৯৮৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর হিসেবে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করেছিলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে ভারত অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং সংস্কারের যুগে প্রবেশ করে, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। ড. সিং ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত আর্থিক স্থিতিশীলতা, দারিদ্র হ্রাস, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করে। বিশেষ করে, ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় তাঁর বিচক্ষণ নেতৃত্ব ভারতকে বড় ধরণের আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা করেছিল। শোক প্রস্তাবে অধ্যক্ষ বলেন, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ছিলেন একজন বিনয়ী, সৎ এবং দূরদর্শী অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর প্রয়াণে দেশ এক বিরল প্রতিভাকে হারালো। প্রয়াণকালে তিনি রেখে গিয়েছেন স্ত্রী শুরশরণ কৌর, তাঁদের তিন কন্যা এবং অসংখ্য শুভাকাঙ্খী ও অনুরাগীকে। ত্রিপুরা বিধানসভা প্রয়াত ড. মনমোহন সিংয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করছে।