স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৭ ডিসেম্বর : লড়াই ছাড়া ঐক্য হবে না, ঐক্য ছাড়া লড়াই হবে না। দুটি একে অপরের পরিপূরক। তাই স্থানীয় সমস্যাগুলি একত্রিত করে প্রথমে বিডিও -র কাছে যেতে হবে, সমস্যা সমাধান না হলে এলাকায় একটি সমাবেশ করতে হবে, তারপরও সমস্যার সমাধান না হলে জেলা শাসকের কাছে যেতে হবে, তাতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে এলাকায় রাস্তা রুখে দাঁড়াতে হবে। তারপরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় এলাকায় বনধের ডাক দিতে হবে। মানুষ দূর থেকে যখন এই আন্দোলন গুলি দেখবে এবং এই আন্দোলন গুলি তাদের জন্য করে চলেছেন বলে বুঝতে পারবে তখন তারা এগিয়ে আসতে বাধ্য হবে।
শুক্রবার আগরতলা টাউন হলে জনশিক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হলসভায় বক্তব্য রেখে কর্মীদের এভাবেই উৎসাহিত করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার। তিনি নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন শুধু সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ নিয়ে কথা বললে চলবে না। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, পানীয় জল এবং বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে লড়াই করতে হবে। জঙ্গি মনোভাব নিয়ে এ লড়াই করতে ইতিমধ্যে কর্মীদের সক্রিয় হতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্যা গুলির সমাধান হবে ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে অগ্রসর হলে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হবে। তাহলেই মানুষের মনে স্থান নিতে পারবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরো বলেন রাজ্যে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে বিশেষ করে মানুষের কাজ নেই, খাদ্য নেই। মন্ত্রীরা পর্যন্ত ফুর্তি করছে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে। এক রাতে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয় করেছে এই ফুর্তির অনুষ্ঠান করে। ত্রিপুরা ট্যুরিজম প্রোমো ফেস্ট ২০২৪ -এর কটাক্ষ করে এই কথা বললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ -র সমালোচনা করে বলেন, বিজেপি সংবিধান বিরোধী। এতদিন তারা সংবিধানের পেছনের ছুরি মারার চেষ্টা করেছে। এখন যখন সফলতা অর্জন করতে পারেনি তখন ৭৫ তম দিবসে দাঁড়িয়ে তারা আলোচনা করতে গিয়ে পার্লামেন্টের মধ্যে রাজ্যসভার অধিবেশনে সংবিধানের শ্রেষ্ঠা ডঃ বি আর আম্বেদকর নিয়ে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে খুদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু বিজেপি সব সময় সংবিধান বিরোধী। তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করতে মনো সঙ্গীতার ভিত্তিতে চতুর বর্ণের সংবিধান তৈরির জন্য চেষ্টা করছে। আজ তাদের পরিচালনকারী আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ব্রিটিশদের পদলেহন করেছে। তারা বরাবরই দেশের সংবিধান, জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকা মানতে নারাজ।
এভাবেই সমালোচনা ঝড় তুলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপুরা সরকারের সমালোচনা করে শ্রী সরকার বলেন, ত্রিপুরায় ২০১৮ সালের পর থেকে কোন সরকার নেই। ভোট দিতে পারছে না মানুষ। ভোট জালিয়াতি করে ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। তাদের সহযোগিতা করেছে তিপরা মথা। তিপরা মথাকে আগে থেকে বিশ্বাস করত না মার্কসবাদী কমিউনিস্ট। তারা বরাবরই প্রতারনা করেছে। এখন যখন বুঝতে পারছে আগামী দিন তাদের এই কৌশল আর কাজ হবে না তখন তারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে বলে দাবি করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আরো বলেন, রাজ্যে তিপরা মথা দুই থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর নতুন স্লোগান দিচ্ছে। কিন্তু এ ডি সি -তে জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী নেই, বিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষিকা নেই। আর সবকিছুই লণ্ডভণ্ড করে রেখেছে বলে দাবি করলেন তিনি। এদিনের আয়োজিত হলসভায় গণ মুক্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাধার চরণ দেববর্মা, প্রাক্তন মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া, প্রাক্তন মন্ত্রী অঘোর দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন।