স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৩ ডিসেম্বর : প্রকৃত তথ্য আড়াল করে উন্নয়নের সাগরে ভাসছে ত্রিপুরা বলে দাবি করে গেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই দাবি করলেন প্রদেশ কংগ্রেস মুখাপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ – র নেতৃত্বে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের নিয়ে সদ্য সমাপ্ত এন ই সি বৈঠক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা ছিল কংগ্রেসের।
কিন্তু কোন কার্যকরী ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দুদিন সফরে তিনি বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বলেছেন উন্নয়নের সাগরে ভাসছে ত্রিপুরা। যার দেশের অন্যান্য উন্নত রাজ্যগুলিকে পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয় আইনশৃঙ্খলাও এক ভালো স্থানে রয়েছে। সুশাসন চলছে ত্রিপুরায়। অর্থাৎ যেভাবে রাজ্যের মন্ত্রীরা দাবি করেন, তারই সঙ্গ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিভিন্ন সমবায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রাজ্যের প্রকৃত তথ্য আড়াল করে দাবি করে বলেন, রাজ্যের মানুষের বাৎসরিক গড় আয় এক লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। গত আগস্ট মাসে রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার সময় কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের কৃষকদের কোন সহযোগিতা না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যে এসে ভাষন দিয়ে বলেছেন, আগামী দু তিন বছরের মধ্যে রাজ্যের কৃষকদের আয় ৩০ গুন বেড়ে যাবে। একই সাথে পানীয় জল নিয়ে কংগ্রেস মুখাপাত্র কামান দাগলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, রাজ্যে প্রায়ই পানীয় জলের জন্য রাস্তা অবরোধ চলছে।
অলিগলি সর্বত্র সংকট চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কোন ভয় পর্যন্ত আটকে দিচ্ছে মানুষ। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করলেন রাজ্যে পানীয়জল ৮৭ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রকল্প হল জল জীবন মিশন। সম্প্রতি এন ই সি পোর্টালে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে গত ছয় বছরে ৮৫.৭ কোটি টাকা ১৩ টি প্রকল্পের জন্য এন ই সি মঞ্জুর করেছে। এরমধ্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২১.৩৮ কোটি টাকা। আগামী ৩১ শে মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে এ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে তিনটি প্রকল্প এখনো শুরুই হয়নি। এতে বুঝা যায় ত্রিপুরায় এন ই সি কতটা কার্যকর হচ্ছে। এমনটাই বলে সমালোচনার ঝড় তুলেন তিনি। আরো বলেন, আলোচনায় রাজ্যের একটা অংশের মানুষের বিশেষত নেশা কারবারি, মানব পাচারকারী সহ বিভিন্ন চোরা চালানকারী, জমির দালাল, নিগো মাফিয়া সহ সরকার ও শাসক দলের একটা অংশের নেতা-কর্মী যে আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি এই ছয়/সাড়ে ছয় বছরে যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তার উল্লেখ করেন।
তার আলোচনায় এনইসি অধিবেশনে রাজ্যের সংবাদমাধ্যমকে উপেক্ষিত করা, তাদেরকে আমন্ত্রণ না জানানোর নিন্দাও করেন। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেন, ২৪ শে ডিসেম্বর সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর আম্বেদকরের সম্মান বাঁচাওয়ের লক্ষ্যে দেশের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে স্মারক লিপি পাঠানোর জন্য দেশব্যাপী সর্বত্র জেলা শাসকদের অফিসে অভিযানের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রেরণ করা হবে। কর্মসূচিটি রাজ্যের সব জেলায় সংগঠিত করা হবে। ২৬ শে ডিসেম্বর জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেস দলের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করার শততম বর্ষ উদ্যাপন কর্মসূচি করা হবে। ২৮ শে ডিসেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের ১৪০ তম প্রতিষ্ঠা দিবস প্রতিপালনের কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে সারা রাজ্য কার্যালয়গুলিতে পতাকা উত্তোলন, প্রতিকৃতিতে, শহিদ স্তম্ভে মাল্যদান, জওহর বাল মঞ্চ কর্তৃক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, সেবামূলক কাজ, রক্তদান করা হবে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যান্য নেতৃত্ব।