আগরতলা, ১৬ নভেম্বর: সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ কোন অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না। এক্ষেত্রে আইন আইনের পথে চলবে। এর পাশাপাশি জনগণের স্বার্থে সংবাদ মাধ্যমকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও সঠিক সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। এতে মঙ্গল হবে দেশ ও রাজ্যের।
শনিবার রাজধানীর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রাজ্যের বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম হেডলাইন্স ত্রিপুরা আয়োজিত শারদ সম্মান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ন্যাশনাল প্রেস ডে উপলক্ষে সমস্ত সাংবাদিক, সংবাদ কর্মী এবং সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ২০১৮ এর আগে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে যেতে হয়েছে হেডলাইন্স ত্রিপুরা চ্যানেলকে। এত সবের মধ্যেও টিকে থেকেছে এই চ্যানেল। রাজ্যবাসীর কাছে সত্যনিষ্ট খবর তুলে ধরেছে তারা। এখন সংবাদ মাধ্যমগুলিও খবর পরিবেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে এগিয়ে আসছে। শারদ সম্মান প্রদান করাও এর মধ্যে অন্যতম একটি। তাই খবর পরিবেশনের পাশাপাশি সমাজ গঠনেও তাদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। এখন সরকারে আমরা রয়েছি। আমাদেরও ভুলত্রুটি থাকতে পারে। সেগুলি ধরিয়ে দেওয়াও সংবাদ মাধ্যমের কর্তব্য। তবে সেগুলি ধরাতে গিয়ে যাতে বিশেষ কাউকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যদের খাটো করা না হয়। সত্যনিষ্ঠ ও বাস্তব তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। যা খবর সেটাই যাতে পরিবেশন হয়। মানুষ কিন্তু তাকিয়ে থাকে সত্যনিষ্ঠ খবরের জন্য। অনেক সময় মিথ্যে সংবাদও বারবার বলতে গিয়ে সত্য হয়ে যায়। আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে সেটা অবশ্যই সংশোধনের চেষ্টা করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আগে শুধু প্রিন্ট মিডিয়া ছিল। এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ওয়েব মিডিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া শুরু হয়েছে। সেই জায়গায় আমরা বিনা পয়সায় সব খবর পেয়ে যায়। আমি নিয়মিত খবরে নজর রাখি এবং খবর সম্পর্কে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলি। কাজেই যারা খবর পরিবেশনে যুক্ত সমাজে তাদের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা থাকতে চাই। সমাজ পরিবর্তন শুধু সরকার বা মন্ত্রিসভার সবাই মিলে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনাদের উপর একটা বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের উপর এমনিতে বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আমরা সাংবাদিকদের জানি। যখন থেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি কোন জায়গায় সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ হওয়ার খবর পেলে ছাড় দিই নি। আমি সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছি। সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ কোন অবস্থায় আমরা বরদাস্ত করবো না। এক্ষেত্রে আইন আইনের পথে চলবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ত্রিপুরায় আইন শৃঙ্খলা যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। যদিও বিরোধীরা এখানে আইনের শাসন নেই অজুহাত তুলে হৈচৈ করেন। আর এখন সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে ছোট ছোট খবরও সহজে পাওয়া যায়। সারা দেশে এমনকি উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যে যেসকল ঘটনা ঘটে সে তুলনায় ত্রিপুরায় কিছু হয় না। কিন্তু তবুও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। আমাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস থাকলেই সরকার থাকবে আগামীতেও। সেই দিশায় আমরা কাজ করছি। সেই সঙ্গে সমাজের প্রতি ক্লাবগুলিরও একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। নেশামুক্ত ত্রিপুরা থেকে শুরু করে সাফাই অভিযান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লাবগুলির দায়িত্ব রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ, পর্যটন ও পরিবহণ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, এডভোকেট জেনারেল শক্তিময় চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী শুভকারানন্দ মহারাজ, দৈনিক সংবাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আইনজীবী সঞ্জয় পাল, অস্কার মনোনীত চলচ্চিত্র ‘লাপাতা লেডিস’- এর লেখক তথা রাজ্যের ভূমিপুত্র বিপ্লব গোস্বামী সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হেডলাইন্স ত্রিপুরার এডিটর প্রণব সরকার। এদিন অনুষ্ঠানে আগরতলা শহরের বিভিন্ন ক্লাবকে শারদ সম্মানে সম্মানিত করা হয়। এর পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আয়োজন করা হয় জমজমাট সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে অংশ নেন রাজ্যের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীদের পাশাপাশি বহিরাজ্যের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীবৃন্দ।