স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২১ অক্টোবর :গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যে অপরাধমূলক ঘটনার নয়া সংস্করণ এসেছে। একাধিক অপরাধমূলক ঘটনা এমন ঘটেছে যেগুলি রাজ্যবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তার মধ্যে অন্যতম ঘটনা মেলারমাঠে পুলিশ, টি এস আর -র সামনে খুন হয় হরিশংকর সাহা নামে এক ব্যবসায়ী। সাব্রুমের মনুবাজার থানায় পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু হয় বাদল ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তির। তারপর গন্ডাছড়ার ঘটনা, পরবর্তী সময় রানীবাজার, কদমতলা, যুবরাজনগর এবং পানিসাগরে ঘটেছে সাম্প্রদায়িক ঘটনা।
কদমতলায় দুই পক্ষের লড়াইয়ে বলিও হয়েছে একজন। অপরদিকে আগরতলা শহরে সন্ধ্যা রাতে এক যুবককে অপহরণ করে মারধর করার ঘটনাও সামনে এসেছে। বিশ্বকর্মা পূজার দিন অরুন্ধতী থানা এলাকায় যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটানো সামনে এসেছে। আর এগুলির সম্পর্কে মানুষ অবগত থাকলেও শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করলেন রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। এমনটাই গুঞ্জন উঠা স্বাভাবিক। কারণ সোমবার এডি নগর পুলিশ লাইনে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন বলেন রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে।
বাস্তবে বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বর্তমানে অনেক ভালো। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার জন্য। যেখানে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির ঘটনা ঘটছে সাথে সাথে পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা ঘটনাস্থলে ছুটে যাচ্ছেন। মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। কিন্তু রাজ্যবাসীর মনে একটাই প্রশ্ন গত কয়েক মাসে এতগুলি ঘটনা রাজ্যের সংগঠিত হওয়ার পরেও কেন রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক কোন এলাকাতে নিজের থেকে পা রাখেননি। মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড়া তিনি কোন জায়গায় যেতে চান না। কিন্তু গন্ডাছড়া, কদমতলা, রানির বাজারে যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তাতে মানুষ ব্যর্থতা পুলিশের দিকেই চাপিয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একজন রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক হিসেবে সেখানে পৌঁছানো দায়িত্ব ছিল উনার। কিন্তু দেখা গেছে তিনি কোন জায়গাতেই নিজে থেকে পা রাখেননি। শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী গেলেই তিনি সেখানে পৌঁছে পারদর্শী অফিসারের ভূমিকা দেখানোর চেষ্টা করার জন্য। এ নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বহুবার পুলিশের ব্যর্থতাকে সামনে এনেছেন। শুধু তাই নয় রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সরাসরি বিরোধী দলনেতা দাবি করছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি একজন অপদার্থ। সরকারের পা চাটা। তার অপদার্থ তার কারণে রাজ্য পুলিশের কিছু অফিসার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। আর এ ধরনের অভিযোগ উঠার পরেও নড়েচড়ে বসছেন না রাজ্য পুলিশের হাই কমান্ড। একই সাথে জনমনে রাজ্য পুলিশের গোয়ান্দা শাখার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ এতগুলো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরেও কেন পুলিশ আগাম কোন খবর পায়নি। উত্তর ত্রিপুরা ও ঊনকোটি জেলায় সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটার পর শুধুমাত্র ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সবচেয়ে রসিকতার ঘটনা হলো গন্ডাছড়া এবং কদমতলায় লক্ষ করা গেছে ১৬৩ ধারা জারি করার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি সেদিন। মানুষের বাড়িঘর লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারধরের মত ভয়াবহ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে সেসব এলাকার মানুষ। এমন কি কার্নিভাল অনুষ্ঠান ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভার কেন্দ্রে আক্রান্ত বুথ সভাপতি। পিস্তল উঁচিয়ে দিন দুপুরে সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে শহরের মাফিয়ারা। কতজন মাফিয়া এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে এর কোন খবর নেই। সেসব এলাকাগুলোতে এখনো আতঙ্ক রয়েছে। মানুষ আর ভরসা রাখতে পারছে না পুলিশের উপর। উত্তর ত্রিপুরা জেলা এবং ঊনকোটি জেলায় গত কয়েকদিনে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় গণ বন্টন ব্যবস্থা এবং ব্যাংক পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হাই কমান্ড দাবি করলেন ভান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তবে রাজ্যবাসী কোন মূর্খ নয়। সবার হাতেই আজ ইন্টারনেট পরিষেবা রয়েছে। সব কিছু মানুষ সামাজিক মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করছে। এমনটাই অভিমত সচেতন মহলের।