স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৯ সেপ্টেম্বর : আসন্ন দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করতে কঠোর হলো পশ্চিম জেলা প্রশাসন। পশ্চিম জেলার জন্য একাধিক বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করা এবং মারপিটের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর উদীচী ক্লাবের পূজার অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। রবিবার পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমার। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার কিরণ কুমার কে।
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক জানিয়েছেন দুর্গাপূজা নিয়ে এখন পর্যন্ত দু তিনটে মামলা হয়েছে থানায়। যেসব পূজা কমিটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেসব পূজা উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাদের পূজা করতে দেওয়া হবে না। তিনি জানিয়েছেন গত কয়েক দিনের লক্ষ করা গেছে, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগরতলা শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সেসব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে জানানো হচ্ছে তারা যাতে বাণিজ্যিক এলাকা সাধারণ মানুষের জন্য ছেড়ে দেয়। সাধারণ মানুষ বছরে একবারই দুর্গাপূজার আনন্দ নেয়। কোন অবস্থাতেই পূজার আনন্দের উপর ব্যাঘাত যাতে সৃষ্টি না হয় এবং ব্যবসায়ীদের যাতে কোন ক্ষতি না হয় তার জন্য গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনিক ভাবে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আহ্বান করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে কিছু অশান্তির পরিবেশ নিয়ে কেউ যাতে পোস্টারিং কিংবা সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্ত সৃষ্টি না করে। কারণ এর প্রভাব দূর্গা পূজার উপর পড়তে পারে বলে জানান তিনি। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি জানিয়েছেন আসন্ন দুর্গাপূজায় প্রশাসন সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
গত কয়েকদিনে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে সেগুলি উপর গুরুত্ব দিয়ে আরো বেশি সজাগ হয়ে কাজ করতে হবে প্রশাসনের। পাশাপাশি পূজায় দিনগুলিতে কোন ধরনের ঘটনা যদি সংগঠিত হয় তার জন্য সাথে সাথে প্রশাসনের নজরে আনতে একটি হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হবে। এদিকে জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গত আগস্ট মাসে রানীর বাজারে মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা ঘিরে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ঘটনা পুলিশ স্বাভাবিক করা হয়েছে। বিগত বছর পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় দুর্গাপূজা ছিল ৮৮৯টি। এবছর ৯ শতাধিক দূর্গাপূজা পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে ২৪৮ টি পূজার আবেদন জমা পড়েছে প্রশাসনের কাছে। দূর্গা পূজার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করতে মহকুমা স্তরের বৈঠক ও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলাস্তরে বৈঠক বাকি রয়েছে। বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধি সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দ্রুত জেলাস্তরের বৈঠক অনুষ্ঠিত করবেন। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে ৩০ টি সিসি ক্যামেরা ইন্সটল করা হবে, ২৫টি ড্রপ গেট থাকবে এবং ৬০ টি পুলিশ এসিস্টেন্ট বুথ রাখা হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন টিএসআর জওয়ান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ রয়েছে গত আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যার কারণে যেহেতু বহু মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাই এ বছর চাঁদা নিয়ে কোন জুলুমবাজি চলবে না। তারপরেও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত চাঁদার জুলুমবাজির যে মামলা গুলি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি মামলা হলো উদীচী ক্লাবের পূজা। অভিযোগ থানায় জমা পরার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদীচী ক্লাবের পূজার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশ ক্লাবের উদ্যোক্তাদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর দুজনকে নোটিশ দিয়েছে। অপরদিকে সহ দক্ষিণাঞ্চলের আপনজন ক্লাবের চাঁদার জুলুমবাজি যে অভিযোগ জমা পড়েছিল এডি নগর থানায় সে বিষয়টা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে গেছে। কোন অবস্থাতেই দুর্গাপূজায় আনন্দের পরিবেশ নষ্ট হতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। এখন দেখার বিষয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা কঠোর সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হয়।