স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২ সেপ্টেম্বর : জিবি হাসপাতালের ডায়ালিসিস পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে স্যন্দন পত্রিকা এবং স্যন্দন টিভিতে খবর প্রকাশ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসলো স্বাস্থ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী সাথে সাথে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যেকে নির্দেশ দেন জিবি হাসপাতালের ডায়ালাইসিস পরিষেবা খতিয়ে দেখার জন্য। সেই মোতাবেক জিবি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস পরিষেবা দেখতে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব। তিনি সোমবার জিবি হাসপাতালে ডায়ালিসিস পরিষেবা খতিয়ে রেখে এ জি এম সি -র কনফারেন্স হলে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, ২০০২ – ২০০৩ সালে রাজ্যের জিবি হাসপাতালে চালু হয়েছে ডায়ালিসিস পরিষেবা।
২০১৯ সাল থেকে জিবি হাসপাতালে বিনামূল্যে এই পরিষেবা মিলছে কিডনির সমস্যা জনিত রোগীদের। প্রতিদিন ৩০ টি মেশিন দিয়ে ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী পরিষেবা পায়। কিন্তু সরকারিভাবে এই পরিষেবা দিতে টেন্ডার করে ডায়ালাইসিস পরিষেবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করতে হয়, অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন হয়। তাই রাজ্য সরকার আউটসোর্সিং এর সিদ্ধান্ত নেয়। গত দু’মাসে দেখা যাচ্ছে ৫ হাজারে বেশি মানুষ জিবি হাসপাতাল থেকে ডায়ালিসিস পরিষেবা নিয়েছে। পরিষেবা চালু হওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর পরিষেবা চলছিল। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু রোগীর পরিবারদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠে এসেছে তাই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে পরিষেবা প্রদানকারী সঞ্জীবনী সঠিকভাবে পরিষেবা দিচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে একটি অভিজ্ঞ টিমকে জিবি হাসপাতালের ডায়ালিসিস বিভাগে ডাকা হবে।
তাঁরা এসে পরিষেবা দেখে পর্যালোচনা করবে। এই অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ মোতাবেক আগামী দিন জিবি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস পরিষেবা আরো উন্নত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব। উল্লেখ্য, জিবি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস পরিষেবা নিয়ে গত আগস্ট মাস থেকে অসন্তুষ্ট রোগীর পরিবার-পরিজন। বেসরকারি সংস্থার হাতে দায়িত্ব যাওয়ার পর থেকেই মৃত্যু হচ্ছে রোগীদের। রোগীর পরিবারের লোকজন দাবি করেছিলেন সঞ্জীবনীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আগের মত আবার সরকারি হবে পরিষেবা দেওয়ার। কিন্তু এদিন স্বাস্থ্য সচিব এটা উল্লেখ করেছেন, পরিষেবার মান উন্নত করতে আউটসোর্সিং এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এতে সরকারি ভাবে পরিষেবা চালাতে যে ব্যয় হতো, বেসরকারিভাবে ব্যয় সমান। সুতরাং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাইছে পরিষেবার মান উন্নত করতে। কোন ধরনের গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। প্রতিদিন বহু রোগী দূর দূরান্ত থেকে হাসপাতালে আসে পরিষেবা নিতে। কিন্তু কোন ভাবে গাফিলতি কিংবা নিম্নমানের পরিষেবা জিবি হাসপাতালে চলবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব। এদিন উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো স্বাস্থ্য সচিবকে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসকের গাফিলতিতে জিবি হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু, ট্রমা সেন্টারে একটি সিটি স্ক্যান মেশিন দ্বারা পরিষেবা প্রদান করা, রাতের বেলা জিবি হাসপাতালে সিনিয়র চিকিৎসকরা পরিষেবা প্রদান না করা, রোগীর পরিবার-পরিজন চিকিৎসক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কি তদন্ত হচ্ছে বা কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন সুস্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। অধিকাংশ প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন স্বাস্থ্য সচিব। আয়োজিত সাংবাদ সম্মেলন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জিবি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট শংকর চক্রবর্তী সহ অন্যান্য চিকিৎসকরা।