স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২১ সেপ্টেম্বর : সু-ভ্রাতৃত্বের উপর আঘাত বাংলাদেশে! সংঘর্ষ বাংলাদেশের তিন পাহাড়ি জেলায়। এরই প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে আগরতলা শহরের নেমেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন। এদিন ভিআইপি রোড দখল করে নেয় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচি। প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার। জানা যায়, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় পাহাড়ের আদি বাসিন্দা জনজাতিদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষ ছড়িয়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে।
খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ার অজনজাতীয় লোকের গণপিটুনিতে মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে অজনজাতি লোকেরা চাকমা ও অন্যান্য জনজাতিদের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করে পরিবেশ অশান্ত করে তুলে। সেনাবাহিনীর গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। তারপর ৭২ ঘন্টার সড়ক অবরোধের ডাক দেয় স্থানীয়রা। শনিবার দিনভর চলে অবরোধ। একই সাথে চলে পরিবহন ধর্মঘট। কিন্তু শনিবার লক্ষ্য করা গেছে পাহাড়ি ও সমতলের মানুষের মধ্যে সেখানে মেলামেশা শুরু হয়েছে। এদিকে আগরতলা শহরের বুকে রাস্তায় নেমে মিছিল শুরু করেছে ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন, ত্রিপুরা রাজ্য ও রাইমাভ্যালি ভিক্ষু সংঘ। ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এদিন একটি মিছিল সংগঠিত করা হয়। মিছিলটি রাজধানীর জেকসন গেট, পোস্ট অফিস চৌমুহনি, আর এম এস চৌমুহনি সহ বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে বাংলাদেশের আক্রমণের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দাবি তোলে বাংলাদেশ আর্মি ফায়ার বন্ধ কর, আদিবাসীদের নিরাপত্তা দেওয়া, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করা।
মিছিল শেষে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সংগঠনের সহ-সভাপতি ডি চাকমা বলেন, সেখানে সংখ্যালঘুদের উপর বিনা কারণে অত্যাচার নামিয়ে এনেছে। যতটুক খবর এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে আগরতলা শহরে এই মিছিল সংগঠিত করা হয়েছে বলে জানান। আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হিসেবে দাবি করছে। অপরদিকে তিপরা মথা এবং ইয়ুথ তিপরা ফেডারেশনের নেতৃত্ব ও কর্মী সমর্থক বাংলাদেশ সরকারি হাই কমিশন অফিসের সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ধর্নায় বসতে পারে নি। পরে সার্কিট হাউস এলাকায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভে সামিল হয় তিপরা মথা এবং ইয়ুথ তিপরা ফেডারেশন। তারা অভিযোগ তুলে গত দুদিন ধরে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলছে। এক হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা এবং ৬৭ জনকে হত্যা করেছে। এরই প্রতিবাদে এ আন্দোলন শুরু করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে অবিলম্বে বাংলাদেশের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য। পরে ওয়াই টি এফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশনারের সাথে দেখা করে ডেপুটেশন প্রদান করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শান্তির দাবি জানান।
সংগঠনের নেতৃত্ব আরো জানান, সংখ্যা লঘুদের উপর আক্রমণ বন্ধ করা হোক। সংখ্যা লঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক। ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল ভারত। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে সংখ্যা লঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কালিন সরকার। এদিকে ত্রিপুরা রাজ্য ও রাইমাভ্যালি ভিক্ষু সংঘের পক্ষ থেকে বেনুবন বিহারের সামনে থেকে একটি মিছিল সংগঠিত করা হয়। বুদ্ধ ধর্মালম্বী মানুষ দাবি করেন, বাংলাদেশে যেভাবে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে সেটা অত্যন্ত নিন্দা জনক এবং বেদনাদায়ক। কোনভাবেই এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তির দাবিতে বাংলাদেশের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আজকে নীরব মিছিল সংঘটিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিছিলটি উত্তর গেট, পোস্ট অফিস চৌমুহনি সহ বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। এদিকে বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে মেলামেশা শুরু হয়েছে। তবে সড়ক অবরোধ চলছে খাগড়াছড়িতে।