স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৬ আগস্ট : এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ডুম্বুর বাঁধের জলস্তর। বাঁধের জল ৯৪ মিটারের উপর দিয়ে বইতে থাকায় তিনটি গেইট এখনও খোলা। ডুম্বুর জলাশয়ের জলস্তর যে ধীর গতিতে কমছে তাতে গেইট গুলি বন্ধ হতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে ধারনা করছে স্থানীয়রা। এই বিষয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ডুম্বুর বাঁধে মোট চারটি গেইট রয়েছে। যার মধ্যে একটি গেইট সব সময় খোলা থাকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। বাকি তিনটি গেইট বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হয়েছে।
১৯৬৮ সালে গোমতী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করার ফলে প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটারের একটি বিশাল জলাধার তৈরি হয়। যার গড় গভীরতা ৩০ মিটার। তবে ৯৪ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন বাঁধের গোড়ায় শুখা মরসুমেও ৬০ থেকে ৭০ মিটার জল থাকে। জলের স্তর চুরানব্বই মিটার অতিক্রম করলে ধাপে ধাপে সবগুলি গেট খুলে যায়। এই প্রযুক্তিটি বাঁধের নির্মাণকাল থেকেই ছিল এবং আজও আছে। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালেও দুইবার ডুম্বুর বাঁধের তিনটি গেট খোলে ছিল। তখন গোমতী নদীর তীরবর্তী নিন্মাঞ্চল কিছুটা প্লাবিত হলেও রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার রূপ নেয় নি। ডুম্বুর থেকে অন্তত ২০০ টি জনপদ বেয়ে গোমতী নদী গিয়েছে। করবুক, অমরপুর, উদয়পুর, সোনামুড়া মহকুমা হয়ে বাংলাদেশে গিয়ে পরেছে গোমতী নদী। ভারতীয় অংশে গোমতীর ক্যাচমেন্ট এড়িয়া ২৪৯২ বর্গ কিলোমিটার। যার মধ্যে শুধুমাত্র ৫৭১ বর্গ কিলোমিটার সমতলে, বাদ বাকিটা পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে।
ডুম্বুর প্রকল্পের নিম্নধারায় অনেক ছড়া বা উপনদী গোমতীতে এসে মিশেছে। যেগুলি বাঁধের আওতায় আসে না। এদিকে রাজ্য এ বছর বৃষ্টিপাত অনেক বেশি হয়েছে। যেখানে রাজ্যে বার্ষিক বৃষ্টিপাত গড়ে দুই হাজার মিমি হয়। সেখানে মাত্র পাঁচ দিনেই ৮৫০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গোমতী হাইডেল প্রজেক্ট তথা ডুম্বুর বাঁধের দায়িত্বে থাকা বিদ্যুৎ নিগমের ডিজিএম সলিল দেববর্মা জানান, রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডুম্বুর বাঁধের তিনটি গেইট খোলে যাওয়াকে দায়ী করা ঠিক হবে না। কারণ বাঁধের গেইট খোলা না খোলা কারোর হাতে নেই। বৃষ্টিপাত বেশি হলে কিংবা ডুম্বুর জলাশয়ে জলরাশি বৃদ্ধি পেলেই গেইট গুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়। আগেও অনেকবার গেইট তিনটি খুলে ছিল কিন্তু তখন রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। উল্টো বলা যায় এ ডুম্বুর বাঁধটি রাজ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ ৯৪ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন এই বাঁধটি যদি না থাকতো তাহলে প্রতিবছরই বৃষ্টিপাতে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাঁধের গেইট বন্ধ না হলেও কিন্তু গোমতী নদীতে জলের স্তর ধীরে ধীরে নেমে আসছে।