স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২ জুলাই : সেই ভয়াবহ রথ দুর্ঘটনার ছবি আজও মানুষের মন থেকে মুছে নি। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে রাস্তার মধ্যে পড়ে গেল তরতাজা ১০ প্রান। সেই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে গোটা রাজ্যবাসী। জানা যায়, ২০২৩ সালে ২৮ জুন ঊনকোটি জেলার কুমারঘাটে জগন্নাথ দেবের উল্টো রথের আয়োজন করেছিলো কুমারঘাটের ইসকন কর্তৃপক্ষ। সেদিন রথের দড়িতে টান দিতে রাস্তায় বেড়িয়েছিলেন জগন্নাথের হাজার হাজার ভক্তরা। আর সেই রথের দড়িই সেদিন কেড়ে নিলো দশটি তরতাজা প্রাণ।
শহর পরিক্রমার সময় কুমারঘাটের ব্লক চৌমুহনিতে আসতেই জাতীয় সড়কের উপর থাকা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সংস্পর্শে আসে লোহা দিয়ে নির্মিত সুবিশাল রথের চূড়া। সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায় গোটা রথে। গোটা রোড বিদ্যুতের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তারের সংস্পর্শে শট হয়ে যায়। রাথে থাকা ভক্তরা বিদ্যুতের ছোবলে। ঘটনাস্থলেই বিদ্যুতের ছোবলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে রাজপথেই মৃত্যু হয় দুই শিশু সহ মোট ছয় জনের। আহত হন আরো বেশ কিছু ভক্তরা। এর মধ্যে পরবর্তীতে রাজ্য এবং বহিঃরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থায় মৃত্যু হয় আরো চারজনের। এক পলকেই সেদিন রথযাত্রার আনন্দ বিষাদের রূপ নেয়। স্বজনহারাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে আকাশ বাতাস। সব মিলিয়ে কুমারঘাটের রথ কাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিলো শিশু সহ দশজনের। সেই রথকাণ্ডে অনেকেই আজ রিতিমতো পঙ্গু। কুমারঘাটের উল্টো রথকাণ্ডের শিহরন জাগানো সেই ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে ত্রিপুরা সহ বিশ্বের দরবারে। পরে এই ঘটনায় স্বতঃপ্রনোদিত মামলা হাতে নেয় কুমারঘাট থানার পুলিশ। রথকাণ্ডে ইসকন কর্তৃপক্ষ এবং রথ পরিচালন কমিটির মোট নয়জন অভিযুক্তের নামে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো সেই অভিশপ্ত দিনের একটি বছর। মামলার রায় না হওয়ায় দোষীরা আজো ঘুরে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশের নিচেই। ঠিক একবছর পর কি অবস্থা স্বজন হারানো সেইসব মানুষগুলোর? প্রতিনিধিকে কাছে পেয়ে তারা তুলে ধরলেন তাদের দুঃখ দূর্দশার কথা। কথা। স্ত্রী এবং সন্তান হারানো রিন্টু মালাকার আভিযোগ করলেন ধর্মের ঢোল পিটিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারনা করেছে ইসকন কর্তৃপক্ষ। রথের নামে নিজেদের অর্থ কামাইএর ব্যাবস্থা করতে গিয়ে আজ এতোসব পরিবার বিপন্ন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় মূল দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দাবী করেন স্ত্রী সন্তান হারানো ঐ বাবা। এই ঘটনায় অভিযোগ উঠে ইসকন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও। রথ তৈরী কিংবা রথ পরিক্রমা করার পুলিশি কোন অনুমতিও ইসকন নেয়নি বলেই অভিযোগ। শুধু তাই নয়, জনা কয়েক প্রভাবশালীর মদতে সেদিন শাস্ত্র ভেঙে নিম কাঠের বদলে লোহার রথ তৈরী থেকে পুলিশি বাঁধা টপকে রথের যাত্রাপথও পরিবর্তন করে রথ এগিয়ে নেওয়া হয়েছিলো বলে অভিযোগ। আর এর পরই বাঁধলো বিপত্তি। পুত্রবধু ও চার বছরের নানতী হারানো এক ঠাকুমা বললেন, পুত্রবধূ ও নাতনীকে হারিয়েছি, আরো এক নাতনী বিদ্যুতের ছোবলে স্বাভাবিকভাবে চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তার শরীর থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে একটি হাতও। এই অবস্থায় সরকার এবং ইসকন কর্তৃপক্ষ তার আগামীদিনের সব দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও একবছরের মাথায় আজও সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি কেউই। তিনি ক্ষোভ উগড়ে দেন ইসকনের ভূমিকায়। শুধু তাইনয়, এবছর রথ বের হলে ইসকনের সাধুদের ঠেঙানোর নিদানও দিলেন স্বজনহারা মহিলারা। অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবী তুলেছেন তিনি। ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে গঠন করা হয়েছিলো তদন্ত কমিটি। যদিও সেই কমিটির রিপোর্টে অসন্তোষ্ট হয়ে ফের ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বছর ঘুরে আবারো আসছে জগন্নাথের সেই রথযাত্রার দিন। তবে এবারে কুমারঘাটে এই রথযাত্রা বের হবার আগেই তীব্র আপত্তি জানাতে শুরু করেছেন সেই কালো দিনের সাক্ষী থাকা জনতা সহ স্বজন হারানোরা। ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্তরা শাস্তি পাবে কি? প্রশ্ন স্বজনহারাদের।