স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২০ মে : রেলওয়ের লামডিং-বদরপুর অংশের জাটিঙ্গা-লামপুর এলাকায় গত ২৬ এপ্রিল অতিবৃষ্টিতে রেললাইন ধসে যাওয়ার কারণে বেশ কিছু দিন রাজ্যে রেলপথে পেট্রোপণ্য সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি ব্যাহত হয়। এই পরিস্থিতিতে, আইওসিএল কর্তৃপক্ষ সড়কপথে ট্রাক ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে রাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেল আমদানী করেছে। পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও সড়ক পথে রাজ্যে আমদানী করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে যাতে কোনো ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয় এবং সীমিত মজুত সাপেক্ষে রাজ্যের সর্বত্র ন্যূনতম চাহিদা পূরণের স্বার্থে গত ১লা মে থেকে পেট্রোল ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে রাজ্য সরকারের তরফে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। এই রেশনিং ব্যাবস্থা বাস্তবায়নে রাজ্যের সাধারণ জনগণ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন, এর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি, এই সময়ে দপ্তরের কাজে সহায়তা করার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হচ্ছে। অতিদ্রুত রেললাইন সারাই করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাজ্যের খাদ্য ও পরিবহন দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী এবং অধিকারিকরা রেল মন্ত্রকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন। পাশাপাশি রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সমস্যাটি দ্রুত নিরসনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন এবং মাননীয় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করার জন্য অনুরোধ জানান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উক্ত সমস্যাদীর্ণ এলাকায় রেললাইন সারাই- এর জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং নিরলসভাবে কাজ করার ফলে গত ১১ই মে থেকে এই অংশে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে এবং পেট্রোল, ডিজেল সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পুনরায় রেলপথে পরিবহন চালু হয়েছে। যার ফলে রাজ্যে পেট্রোপণ্যের যোগানে উন্নতি হওয়ার কারণে গত ১৫ই মে থেকে পেট্রোল ও ডিজেল বিক্রয়ের উপর থেকে রাজ্য সরকারের তরফে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমানে পেট্রোল ও ডিজেলের মজুত রয়েছে। মন্ত্রী আরো বলেন, রাজ্যে গনবণ্টন ব্যাবস্থার অধীনে সর্বদা প্রায় ৬০-৮০ দিনের খাদ্যশস্য মজুত থাকে। এর ফলে বিগত কিছু দিন লামডিং-বদরপুর অংশে রেল পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কারণে এফসিআই কর্তৃক রাজ্যে গনবন্টনের খাদ্যশস্য আমদানী ব্যাহত হলেও রাজ্যে গনবণ্টন ব্যাবস্থার উপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। গত ১১ই মে থেকে রেল চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে এফসিআই এখন পর্যন্ত ১৪৭টি রেল ওয়াগনের মাধ্যমে প্রায় ৯১১৪ মেট্রিক টন রাজ্যে চাল আমদানী করেছে। তাছাড়া গনবন্টনের চাল নিয়ে আরো ২১টি রেল ওয়াগন ২০ই মে সন্ধ্যা নাগাদ রাজ্যে প্রবেশ করবে। এছাড়া, এফসিআই থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গনবন্টনের জন্য ৬টি রেল রেকের মাধ্যমে প্রায় ১৪,৩০০ মেট্রিকটন চাল রাজ্যে আসছে, এবং এর ফলে আগামী ৩১শে মে-এর মধ্যে রাজ্যে গনবন্টনের অধীনে প্রায় ৯০ দিনের চাল মজুত করা যাবে। ২০ মে -এর তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে গনবন্টন অধীনে মজুত চাউল রয়েছে ৫০,০৭৮ মেট্রিক টন। যা ৭০ দিনের মজুত হয়েছে। মসুর ডাল রয়েছে ২২ দিনের। অর্থাৎ মজুদ রয়েছে ৪৩৪ মেট্রিক টন।
৪৫ দিনের লবণ মজুত রয়েছে। অর্থাৎ ২৪৫৬ মেট্রিক টন লবণ রয়েছে মজুত। পাশাপাশি ২৮ দিনের ৭৭৬ মেট্রিক টন চিনি এবং ৭৪ দিনের ৭৭৪৮ মেট্রিক টন গম মজুত রয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের খোলা বাজারে আলু ব্যাতীত সকল প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যে স্বাভাবিক রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে দেশের প্রধান প্রধান পাইকারী বাজারে ক্রমান্বয়ে আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের রাজ্যেও বর্তমানে আলুর দাম স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি রয়েছে। রাজ্যের বাজারগুলিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে রাজ্য ও মহকুমাস্তরে গঠিত টাস্ক ফোর্স গুলি প্রতিনিয়ত অভিযান ও নজরদারি কার্যক্রম জারি রেখেছে। বিগত ছয় মাসে টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা সারা রাজ্যে এই ধরনের মোট ২৯০ টি অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানকালে যেসব ব্যাবসায়ীরা অনায্যভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেশী নিচ্ছে বা প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ব্যাবসা করছে তাদেরকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এই বাবদ ইতিমধ্যেই প্রায় চার লক্ষ টাকা আদায় হয়েছে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী আরো জানান, লিগাল মেট্রোলজি দপ্তর গত ছয় মাসে ১২০টি অভিমান সম্পন্ন করেছে এবং ৫৭৫ টি রেশন শপে ওজন ও পরিমাপ যন্ত্রের পরীক্ষা করেছে। এ বাবদ ভেরিফিকেশন ফি এবং কমপাউন্ডিং জরিমানা হিসাবে যথাক্রমে ৮১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা এবং ৬ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক।