স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ ডিসেম্বর : সংবিধানের ৩৪২ নম্বর ধারায় সংশোধন এনে জনজাতি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জনজাতিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের উদ্যোগে রাজধানী আগরতলায় একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মহকুমার বিভিন্ন ব্লক থেকে জনজাতি অংশের সাধারণ মানুষ এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। পরে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে একটি সমাবেশে মিলিত হন তারা।
এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত বিক্রম বাহাদুর জমাতিয়া। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জনজাতি অংশের সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন ভাষা ধর্ম সংস্কৃতি এবং পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এর জন্য সরকার কিংবা কোন সংগঠনের প্রয়োজন নেই। কারণ যে মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন তাকে সেই ভাষাতে কথা বলতে হবে। যে মানুষের পরম্পরা যেমনটা হওয়া উচিত তাকে সেই পরম্পরা পালন করতে হবে। সংস্কৃতি রক্ষার ক্ষেত্রেও সেই বিষয়টাই প্রযোজ্য। কারণ প্রত্যেকের কাছেই তার সংস্কৃতি ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।
জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের এই আন্দোলন কেবলমাত্র রাজধানী আগরতলাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এবারে এই আন্দোলন পা রাখবে নয়া দিল্লিতে। স্মারকলিপি তুলে দেয়া হবে দেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে। সংবিধানের ৩৪২ নম্বর ধারা পরিবর্তন করে জনজাতিদের ভাষা ধর্ম সংস্কৃতি পরম্পরা সুরক্ষিত করার জন্যই এই স্মারকলিপি তুলে দেয়া হবে। জনজাতি অংশের যে সমস্ত মানুষ নিজেদের ধর্ম সংস্কৃতি এবং পরম্পরা পালন করছে না সেই সমস্ত মানুষদের জনজাতিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্যই সংবিধান সংশোধনের দাবি তাঁদের। কোন ধর্ম কিংবা কোন জাতি তাদের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়বস্তু নয়। তাদের এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এরপর দীর্ঘদিন তাদের এই আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। ২০০৬ সাল থেকে তারা এই আন্দোলন পুনরায় শুরু করে। এরপর থেকে ১৮ বছর ধরে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জনজাতি অংশের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সকলের একটাই বক্তব্য জনজাতি অংশের সাধারণ মানুষের ধর্ম সংস্কৃতি পরম্পরা বাঁচিয়ে রাখতে হলে যারাই এই ধর্ম সংস্কৃতি এবং পরম্পরা মানছেন না তাদেরকে জনজাতিদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। জীবনে সব কিছু পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু মাকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
ঠিক তেমনি মায়ের কাছ থেকে শেখা ভাষা সংস্কৃতি পরম্পরা কোনভাবেই পরিবর্তন করা যায় না। এই কারণেই তারাই এই মুহূর্তে জনজাতিদের ধর্ম সংস্কৃতি পরম্পরা পালন না করে তা ভুলে গিয়ে অন্য পথে চলে গেছেন তাদেরকে পুনরায় নিজেদের মাতৃ সংস্কৃতির পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন এই আন্দোলন শুধু মাত্র ত্রিপুরায় হচ্ছে এমনটা নয়। ত্রিপুরার বাইরে কমপক্ষেও ২২ টি রাজ্যের ২২ টি জায়গায় রেলি হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডে হয়েছিল এই রেলি। যেখানে লক্ষাধিক জনজাতি অংশের মানুষের সমাগম ঘটেছিল। চলতি বছরের ২৬ মার্চ আসামে একটি রেলি হয়েছিল। সেখানে ৬৮ হাজার জনজাতি অংশের মানুষের সমাগম ঘটেছিল। সংবিধানে জনজাতিদের ধর্ম সংস্কৃতি পরম্পরা সুরক্ষিত করার জন্য ১৯৬৭ সালে বিহারের তৎকালীন সাংসদ কার্তিক ওরাং সংসদে দাবি তুলেছিলেন। তিনি তখন ৩৪৮ জন সাংসদদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে এক জে পি সি গঠন করার জন্য সরকারকে বাধ্য করেছিলেন। সেই জে পি সি একটি রিপোর্টও তৈরি করার পর তা পেশ করেছিল। সেই রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল বিদ্যালয় কিংবা চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৮০ শতাংশ দখল করে রেখেছিল জনজাতিদের ভিন্ন অংশের মানুষ। তিনি আরো বলেন জনজাতি অংশের সাধারণ মানুষের ভাষা – ধর্ম – সংস্কৃতি এবং পরম্পরা তাদের নিজেদের একটা পরিচয়। আর এই ভাষা – ধর্ম – সংস্কৃতি এবং পরম্পরা যদি কেউ ত্যাগ করে থাকেন তখন তার কোন পরিচয় থাকেনা। জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের লক্ষ্যবস্তু কাউকে আঘাত করা নয়। লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে তাদের ভাষা – ধর্ম – সংস্কৃতি এবং পরম্পরাকে সুরক্ষিত করা। কিন্তু বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তাদের এই দাবি এবং আন্দোলনকে বিকৃত করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ ভারত এবং জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চ ত্রিপুরা জনজাতিদের ধর্ম – সংস্কৃতি – পরম্পরা সুরক্ষিত করার জন্য সংবিধানের ৩৪২ নম্বর ধারায় সংশোধন আনার দাবি নিয়ে যে লড়াই শুরু করেছে তা নিজেদের ধর্ম – সংস্কৃতি – পরম্পরা পালন করা জনজাতি অংশের মানুষদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করার জন্যই। এই আন্দোলন কোন রাজনৈতিক দল কিংবা কোন সংগঠনের জন্য নয়। এই আন্দোলন কেবলমাত্র জনজাতি অংশের ভাষা – ধর্ম – সংস্কৃতি – পরম্পরা বাঁচিয়ে রাখার জন্য জনজাতি অংশের মানুষদের জন্যই। এখনো প্রায় দেশের মধ্যে ১২ কোটি জনজাতি অংশের মানুষ রয়েছেন। যারা এখনো নিজেদের ভাষা – ধর্ম – সংস্কৃতি এবং পরম্পরা পালন করে চলেছে। তাদের জন্যই এই লড়াই। এদিন ত্রিপুর ক্ষত্রিয় সমাজের সমাজপতিরাও উপস্থিত ছিলেন।