Thursday, January 16, 2025
বাড়িরাজ্যশহর কাঁপিয়ে বামেদের রাজভবন অভিযান

শহর কাঁপিয়ে বামেদের রাজভবন অভিযান

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৮ নভেম্বর : হু ইজ এ কে মিশ্র? কে তিনি ত্রিপুরা রাজ্যে এডিসি এলাকাকে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য রাজ্যে আলাপ-আলোচনা করতে এসেছেন ? এভাবে ত্রিপুরা রাজ্যের সহজ সরল মানুষকে একদল সুবিধাবাদী সংগঠন কখনো স্বাধীন ত্রিপুরা, আবার কখনো বিদেশী তাড়াও, কখনো তিপ্রাল্যান্ড, আবার কখনো গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের স্লোগান তুলে। কিন্তু ভোট যখন শেষ হয়ে যায় তখন এই মিশ্র, শর্মা, বার্মাদের দেখা যায় না। এখন যখন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ঘন্টা বাজছে তখন দিল্লি থেকে পাঠানো হচ্ছে এ কে মিশ্রা নামে ব্যক্তিদের।

এগুলি ত্রিপুরার মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা বলে রাজভবন অভিযান থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কামান দাগলেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। মঙ্গলবার রাজধানীর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে থেকে শ্রমিক ও কৃষকদের রাজভবন অভিযান শুরু হয়। নেতৃত্ব দেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। মিছিলটি সার্কিট হাউস এলাকায় আসার পর পুলিশ বেরিকেট দিয়ে আটকে দেয়। সেখান থেকেই সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে গ্রামগঞ্জের মানুষের ১০০ কোটি টাকা কাজের বকেয়া পড়ে রয়েছে। ধৈর্যের সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এবং ব্লক অফিসে গিয়ে তালা দিচ্ছে। আর মন্ত্রী মহোদয় আগরতলায় বসে বলছেন তিনি ৮৬ লক্ষ মেন্ডেসের কাজ কিভাবে করাবেন বলে ভাবছেন।

 এর জন্য উনার নাকি ঘুম হয় না। আরে মন্ত্রী মহোদয় আপনার বাড়ির সামনে কিছু ফার্মেসি আছে। সেখান থেকে ঘুমের ওষুধ নিয়ে নেন। তবে বেশি নেবেন না। পরে ঘুম থেকে উঠবেন না। কারণ আপনার কখনো লজ্জা শরম ও চেতনা হবে না। এভাবেই নাম না করে মন্ত্রী রতন লাল নাথকে কটাক্ষ করলেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। পাশাপাশি এই দিন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, কালো কৃষি আইন বাতিল করে সরকার বহু প্রতিশ্রুতি রক্ষার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে গঙ্গা, যমুনা দিয়ে বহু জল বয়ে গেছে। বহু কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এদেশের কৃষকদের ও জনগণের ন্যায্য দাবি পূরণে নরেন্দ্র মোদির সরকার পালন করার কোন ইচ্ছে দেখায় নি। তিনি আরো বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল কালো কৃষি আইনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন অবস্থায় শহীদ হয়েছে তাদের পরিবারে একজনকে চাকুরি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সে প্রতিশ্রুতি সরকার পালন করে নি। এমনকি কালো কৃষি আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনরত অবস্থায় মন্ত্রীর ছেলের গাড়ির চাপায় কৃষকদের ও সাংবাদিকের খুন হয়েছিল। সে মন্ত্রী পর্যন্ত এখনো মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এর দ্বারা বুঝা যায় এ সরকার কতটা নির্লজ্জ, বেহায়া ও জনবিরোধী। এবং এই বিষয়ে পার্লামেন্টে যখন প্রশ্ন করা হলো তখন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের এক মন্ত্রিসভার সদস্য জানান, তাদের কাছে ৭ শতাধিক কৃষক শহীদ হওয়ার কোন তথ্য নেই। এভাবে এ সরকার জনবিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তিনি আর বলেন এ সরকার শুধু শ্রমিক এবং কৃষক বিরোধী নয়। এ সরকার বেকার বিরোধী। বছরে দুই কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১০ বছরে তাহলে কুড়ি কোটি চাকুরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর এক শতাংশ চাকরিও হয়নি। আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কৃষকদের ঋণ মুকুব করা হবে ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীমূল্য হ্রাস করা হবে। এগুলি কিছু করেনি এই সরকার গত ১০ বছরে। আর এখন যখন মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, ঝুলা নিয়ে ঘর থেকে তাকে বের হতে হবে – তখন এ সরকার বলছে বিকশিত সংকল্প ভারতযাত্রা। কিন্তু গত সাড়ে ৯ বছরে এ সরকারের মনে পড়েনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে চাঙ্গা করে দেশকে বিকশিত করতে হবে। আর এখন বিদায়ের সময় মনে হচ্ছে দেশকে বিকশিত করতে হবে। কিন্তু গত সাড়ে ৯ বছরে যারা সম্পদ বাড়িয়েছে তাদের ১৭ লক্ষ কোটি টাকার উপরে ঋণ মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। আদানি আম্বানি মতো পুঁজিপতি প্রসঙ্গ টেনে এই কথা বলেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি আরো বলেন শুধু আদানি, আম্বানি নয়, নীরব মোদী বহু কোটি টাকা নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে প্রতিশ্রুতি ছিল কালো টাকা উদ্ধার করে এনে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা দেওয়া হবে। কিন্তু গত ১০ বছরের ১৫ পয়সাও জমা পড়েনি কোন নাগরিকের ব্যাংক একাউন্টে। তাই আজকে রাজভবন অভিযান থেকে শপথ নিয়ে যেতে হবে আর কয়েক মাস পর যে লোকসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তাতে ১৪০ কোটি মানুষের বিরোধী সরকারকে পরাজিত করতে হবে। আয়োজিত রাজভবন অভিযানে এদিন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সি আই টি ইউ রাজ্য কমিটির সভাপতি মানিক দে, সি আই টি ইউ সাধারণ সম্পাদক শংকর প্রসাদ দত্ত, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সারা ভারত কৃষক সভা রাজ্য কমিটির সভাপতি অঘোর দেববর্মা, সারা ভারত কৃষক সভা রাজ্য কমিটির সভাপতি পবিত্র কর সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য