স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২১ নভেম্বর : আজও মিললো না প্রয়াত সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের খুনের পেছনে জড়িত অভিযুক্তদের বিচার। মঙ্গলবার রাজধানীর শকুন্তলা রোড স্থিত স্যন্দন পত্রিকার কার্যালয়ের সামনে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াতের সাংবাদিকের প্রতি। ২০১৭ সালের ২১ শে নভেম্বর এমনই একটি অভিশপ্ত দিনে রাজধানী আগরতলার অদূরে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের দ্বিতীয় নম্বর ব্যাটেলিয়নের সদর কার্যালয়ে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন স্যন্দন পত্রিকার সিনিয়র ক্রাইম জার্নালিস্ট সুদীপ দত্ত ভৌমিককে।
একেবারে সুপরিকল্পিতভাবে সুদীপ দত্ত ভৌমিককে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়েছিল বাহিনীর সদর কার্যালয়ে। এটা শুধুমাত্র অভিযোগ নয়, কারণ সেই সময়ে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের দ্বিতীয় বাহিনীর সদর কার্যালয়ে যারা সংবাদ সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন, তারা সকলেই দেখেছেন ‘ক্রাইম অন দা স্পটে’ পাওয়া রক্তের ছাপ। যেকোনো একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে ‘ক্রাইম অন দা স্পট’ বললে হয়তো ভুল হতে পারে । কারণ রক্তের ছাপ কোনো একটা জায়গাতে থাকলেও সদর কার্যালয়ের চৌহদীর ভেতরে অন্য একটা জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত একাধিক সামগ্রী। পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা হয়তো ৬ বছর আগেকার সেই ঘটনা এখনো ভূলেননি।
কারণ তদন্তকারী অফিসাররা সেদিন সেখানে একাধিক স্থানে বেরিকেড দিয়েছিলেন। ব্যাটেলিয়ানের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন প্রধান সহ একাধিক জোয়ান রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার ব্যবহার করে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকাণ্ডে। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য সেই ছয় বছর আগে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডে জড়িতদের আজও সাজা দিতে পারেনি সরকার। পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল সহ রাষ্ট্রীয় তদন্তকারী দলের তদন্তে আজও পরিষ্কার হলো না সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকাণ্ডের পর্দার আড়ালে থাকা মূল রহস্য। আজও ফাঁস হলো না এই হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অর্থে খুনি কারা। সরকারে যারা রয়েছেন এই ঘটনাটি তাদের স্মরণে রয়েছে কিনা তা জানা নেই, কিন্তু সাংবাদিক চিত্র সাংবাদিকরা আজও এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আসছে। ব্যতিক্রম ছিল না সপ্তম শহীদান দিবস ও। শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল শকুন্তলা রোড স্থিত স্যন্দন পত্রিকার সদর কার্যালয়ের সামনে। স্যন্দন পত্রিকা এবং স্যন্দন টিভির সাংবাদিক চিত্র সাংবাদিক সহ সকল কর্মীবৃন্দ এদিন প্রয়াত সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের স্মৃতিচারণ করেন পুষ্প অর্পন এবং মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে।
এই শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য আসেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মী এবং পথ চলতি সাধারণ মানুষ ও। এদিন পুরোপুরি হতাশাগ্রস্থ ছিলেন স্যন্দন পত্রিকা ও স্যন্দন টিভির সম্পাদক সুবল কুমার দে। আক্ষেপের সুরেই তিনি বলেন তার দৃষ্টিতে সরকারের চেহারা একই থাকে। সারা দেশকেই মানুষ অপশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সরকার গঠন করে থাকে। তিনি বলেন পৃথিবীতে এই প্রথম কোন সরকারি প্রশাসনের কার্যালয়ের সরকারি অস্ত্রের দ্বারা সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এই ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল গোটা পৃথিবীতে।এই ঘটনার নিন্দা করেছে বাংলাদেশ নেপাল এবং ভুটানের প্রেসক্লাব ও। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির দরবারেও গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা। ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এই হত্যাকাণ্ডের মামলা সিবিআই এর হাতে তুলে দেওয়ার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের আন্দোলন স্থলে এসে। এতোটুকু পর্যন্তই সীমিত। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে আর কোন কিছুই স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নচিহ্ন একটা থেকেই যাবে? সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকান্ডের বিচারের বাণী কি এভাবেই কাঁদবে নীরবে নিভৃতে।