স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১ নভেম্বর : ৬০ মাস পর এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ। ত্রিপুরার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে আখাউড়া – আগরতলা রেলপথ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বোতাম টিপে এই দুই দেশের সীমান্তের এই রেল সংযোগের শুভ উদ্বোধন করেন। মোট রেল সংযোগের দৈর্ঘ্য ১২.২৮ কিলোমিটার।
এর মধ্যে ভারতের অংশ ত্রিপুরায় ৫.৪৬ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের অংশ ৬.৭৮ কিলোমিটার। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এই প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৯৭২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় অনুচ্ছেদের জন্য বরাদ্দ হয় ৫৮০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশের অংশের জন্য বরাদ্দ হয় ৩৯২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। দীর্ঘ ৬০ মাস পর সেই রেলপথ এর সূচনা হয় বুধবার। সঙ্গে আরও দুটি প্রকল্পের শুভ সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ‘অমৃত ভারত স্টেশন স্কিমে’র অধীন সারাদেশে ৫০৮ টি রেলস্টেশনকে পুনঃউন্নয়নের জন্য ভিত্তি প্রস্তুত স্থাপন করেন। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে জনের ৫১ টি রেল স্টেশনের উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পের ও দিন ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্যে তিনটি রেল স্টেশনকে ‘অমৃত ভারত স্টেশন স্কিমে’র আওতায় আনার হয়েছে।
ধর্মনগর, কুমারঘাট ও উদয়পুর রেলস্টেশন এর আওতায় রয়েছে। এই তিনটি রেলস্টেশনের উন্নতি করুন এবং আধুনিককরণের জন্য ৯৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এর পাশাপাশি আগরতলা রেল স্টেশনকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্টেশন স্কিমে’র আওতায় আন্তর্জাতিক মানের রেল স্টেশনে উন্নতিকরণ করার জন্য কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক পরিকল্পনা নিয়েছে। এর জন্য বের হবে ২৩৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। রাজ্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা সচিবালয় থেকে সরাসরি ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানের অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। তিনি সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ত্রিপুরাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
আজকের এই ঐতিহাসিক অধ্যায় ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ২০১৪ সালের নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ত্রিপুরার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। আজকের পর দুই দেশের মৈত্রী আরো বেশি সূদৃঢ় হবে। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক ইস্ট নিতির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। নানা বিধ প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে। বর্তমানে সার্বিক যোগাযোগের দিক থেকে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল উল্লেখযোগ্য ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। যা স্বাধীনতার গত সাত দশকেও সম্ভব হয়নি। এই রেল পথ যোগাযোগের মধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিবহন এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা প্রবেশ দ্বার হতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় আগরতলা-আখাউরা রেল যোগাযোগ স্থাপনের ফলে বর্তমানে আগরতলা-কোলকাতা রেল পথের দূরত্ব ১৬০০ কিলোমিটার থেকে কমে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন বর্তমানে রাজ্যে মোট ১৯ টি ট্রেন যাতায়াত করছে। তারমধ্যে ১৩ টি এক্সপ্রেস ট্রেন, ৫ টি ডেমো ট্রেন। ১৯ অক্টোবর থেকে আগরতলা-মুম্বাই সাপ্তাহিক লোকমান্য তিলক কামাখ্যা এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়েছে। আগরতলা-আখাউড়া রেলপথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের মন্ত্রী, রেলওয়ে বোর্ডের সিইও সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।