Saturday, July 27, 2024
বাড়িরাজ্যতিপ্রা মথার ডাকে এ ডি সি বনধে মিশ্র সাড়া, জনশূন্য পথ ঘাট...

তিপ্রা মথার ডাকে এ ডি সি বনধে মিশ্র সাড়া, জনশূন্য পথ ঘাট বাজার ঘাট সর্বত্র, প্রভাব পড়েছে শহরে

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩০ সেপ্টেম্বর : তথাকথিত জনজাতি দরদী মুকুটহীন রাজার আবেগে শনিবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এ ডি সি এলাকায় চলে বনধ। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তিপ্রা মথার ডাকে এদিন বনধে আংশিক সাড়া পড়ে প্রত্যন্ত সমস্ত এলাকাগুলিতে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয় পিকেটারদের সড়ক অবরোধ, রেল পথ অবরোধ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অফিসের সামনে বিক্ষোভ।

 জনশূন্য ছিল পথঘাট। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি কোথাও না হলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে যান চলাচল এবং রেল চলাচল। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অফিস খোলা থাকার নির্দেশ থাকলেও কর্মচারীদের অফিসে পৌঁছানোর মতো ব্যবস্থা করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। সকাল থেকে দিকে দিকে পিকেটাররা আন্দোলন শুরু করে। খোয়াই, কমলপুর, বাছাইবাড়ি এলাকায় বসে পথ অবরোধ। উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা। তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, গ্রেটার তিপরাল্যান্ড সহ জনজাতিদের অন্যান্য সাংবিধানের দাবিতে বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। গোটা রাজ্যে এডিসি এলাকায় চলছে বনধ। হাজার হাজার কর্মী সমর্থক এই বনধে শামিল হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে জনজাতিদের সাংবিধানিক দাবি গুলি তুলে ধরা। এদিকে বড়মুড়ায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন সংগঠিত করে পিকেটাররা। উপস্থিত ছিলেন এ ডি সি -র চেয়ারম্যান জগদীশ দেববর্মন সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।

 রাস্তায় মাঝে টায়ার পুড়ে সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখায় তারা। অপরদিকে গ্রেটার তিপ্রা ল্যান্ডের দাবিতে বিশ্রামগঞ্জ দেওয়ান বাজার জাতীয় সড়কে এবং বিশ্রামগঞ্জ তকসাপাড়া রাজা চৌমহনিতে সড়ক অবরোধে বসে তিপ্রা মথা দলের বিধায়ক সহ নেতাকর্মীরা। গলায় প্লে কার্ড ঝুলিয়ে ও রাস্তায় গাছের লগ ফেলে তারা বিক্ষোভ দেখায়। যদি তাদের দাবি মানা না হয় তাহলে আগামী দিনে তারা ৭২ ঘন্টার বনধ ডেকে স্তব্ধ করে দেবে রাজ্যের সমস্ত সড়ক, এমনটাই হুঁশিয়ারি দিলেন চড়িলাম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সুবোধ দেববর্মা। অপরদিকে খুমুলুঙের সদর দপ্তরের গেটের সামনে ও বড়মুড়া সাধুপাড়া এলাকায় তিপ্রা মাথা দলের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখায়। স্তব্ধ হয়ে পড়ে আসাম – আগরতলা জাতীয় সড়ক। তিপরা মথা ডাকা ১২ ঘণ্টা বনধে সাড়া দিয়ে এদিন সকাল থেকে গন্ডাছড়া মহকুমা এলাকায় চলে অবরোধ। দোকানপাট থেকে শুরু করে যানবাহন প্রায় স্তব্ধ। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার কোন খবর নেই।

 অন্যদিকে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড দাবিতে নিজ অধিকার আদায়ের লক্ষে সারা রাজ্যের সাথে দক্ষিণ জেলা ঋষ্যমুখ ব্লক এলাকায় জনজাতি অধ্যুষিত রতনপুর সাব জোনাল অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পরে শুরু হয় রাস্তা অবরোধ। সকাল থেকে বিলোনিয়া জোলাইবাড়ি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বসে মথার পিকেটাররা। ফলে রতনপুর এলাকায় যানবাহন, দোকান পাট বন্ধ ছিল। তিপ্রা মথা দলের নেতৃত্ব জানান, নিজ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই বনধ। স্বাধীনতার ছিয়াত্তর বছর অতিক্রান্ত হবার পরেও এই রাজ্যের ভূমি পুত্ররা নানা ভাবে বঞ্চিত। ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতা আসার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জনজাতিদের সমস্যা সমাধান করা হবে। তাদের দাবি পূরণ করা হবে। কিন্ত সেই দাবি আজও পূরণ হয় নি। এই দাবিতে সারা রাজ্যের সাথে ঋষ্যমুখ ব্লক এলাকায় জনজাতি অধ্যুষিত রতনপুর সাব জোনাল অফিসের সামনে তিপ্রা মথা দলের কর্মী সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি উদয়পুর মহকুমায় লক্ষ্য করা হয়েছে বনধের প্রভাব। খুপিলং বাজার সংলগ্ন এলাকায় উদয়পুর – আঠারভোলা সড়ক অবরোধ করে তিপরা মথা দলের কর্মী সমর্থকরা। এদিকে তিপ্রা মথার ডাকা ১২ ঘন্টা বনধের জোরদার প্রভাব মনু রেল স্টেশনে পড়ে। রেলপথ আজকে মথা কর্মীদের অবরোধ চলছে।

অবরোধের ফলে মনু রেল স্টেশনে আটকে আছে। ধর্মনগর থেকে আগরতলা গামী ট্রেন এবং দূরপাল্লার হামসফর ট্রেনটিও। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। পাশাপাশি ধর্মনগর মহাকুমাতে লক্ষ্য করা গেছে এই দিন মথার কর্মীদের বনধের উচ্ছ্বাস। গ্রেটার তিপরাল্যান্ড এবং কিছু সাংবিধানিক দাবিতে ধর্মনগর মহকুমার নোয়াগাঙ সাব জোনালে সকাল থেকে পরিলক্ষিত হয়। এই বনধ জয়চুম হলাম নোয়াগাঁও সাব জোনাল কমিটির সভাপতি, লালা হালাম নোয়াগাঙ সাবজোনাল কমিটির চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য সমর্থকদের রাস্তা অবরোধে দেখা যায়। জাতীয় সড়কে পুরুষ মহিলা সমবেতভাবে বনধের সমর্থনে রাস্তা অবরোধে সামিল হয়। একই ভাবে রাজ্যের তিপ্রা মথার ডাকা বারো ঘন্টার এডিসি এলাকার বনধের সমর্থনে উদয়পুর – অমরপুর রাস্তার ওয়ারেঙ্ক বাড়ি এলাকায় তিপ্রা মথার দলীয় কর্মী সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে। ফলে উদয়পুর – অমরপুর রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি যাতায়ত করতে পারে নি। রাস্তা অবরোধে নেতৃত্বে ছিলেন এডিসি -র  সি ই এম পূর্নচন্দ্র জমাতিয়া।তিনি জানান গত ৭৫ বছর ধরে জনজাতিরা অবহেলিত।

 গ্ৰেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবির সমর্থনে সারা রাজ্যের এডিসি এলাকায় বারো ঘন্টার ত্রিপুরা বনধের যে আহ্বান করা হয়েছে। আজ বনধ শান্তিপূর্ন ভাবে পালিত হয় বলে জানান পূর্নচন্দ্র জমাতিয়া। উদয়পুর – অমরপুর রাস্তায় ওয়ারেঙ্ক বাড়ি এলাকায় রাস্তা অবরোধের ফলে যানবাহন চলাচল স্তব্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ ছিল বাজার হাট সব কিছু। ব্যতিক্রম নেই আমবাসা মহকুমা। এদিন সকাল থেকে ধলাই জেলাকে বলা যায় তিন দিকেই পিকেটিং করে অবরুদ্ধ করে দিয়েছে দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা। আমবাসার সন্নিকটে কাঠালবাড়ি জাতীয় সড়কে বনধ পক্ষে কর্মী সমর্থকদের উৎসাহিত করতে উপস্থিত ছিলেন তিপ্রা মথার দলের সভাপতি বিজয় কুমার রাঙ্খল সহ দলের নেতা প্রেমলাল মলসম, প্রদীপ রিয়াং। অন্যদিকে বাগমারা রোড এবং গন্ডাছড়া রোডের জগন্নাথপুরে অবরোধে বসে বিশঞ্জয় রিয়াং এবং রাজু চন্দ্র রিয়াং এর নেতৃত্বে দলের কর্মী সমর্থকরা। সকাল ছয়টা থেকেই তিনটি জায়গায় অবরোধ বসে দলের নেতাকর্মীরা। দলের রাজ্য সভাপতি বিজয় কুমার রাঙ্খলের বক্তব্য, শান্তিপূর্ণভাবে এই বনধ সফল। বনধের সময় ধলাই জেলা সদরের তিন দিকে তিপ্রা মথার পিকেটারদের উপর নজর রাখছে পুলিশ, টিএসআর এবং সিআরপিএফ, জওয়ানরা।

কিন্তু সারা রাজ্যে এই বনধ ঘিরে জনসাধারণের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। জনজাতি অংশের বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রতিদিন আগরতলা শহরের বিভিন্ন বাজার গুলিতে এসে সবজি বিক্রি করে। এদিন তাদের বাজারে আসতে দেখা যায়নি। ফলে তারা যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তেমনি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দুর্গাপূজা মরশুমে এডিসি এলাকার ব্যবসায়ীরা। মন থেকে বনধ মেনে নিতে না পারলেও অপ্রীতিকর ঘটনার আতঙ্কে তারা বনধ উপলক্ষে দোকানপাট খুলেনি। মানুষের হাতে পয়সা নেই, তারপরেও এদিন এভাবে সমস্ত কিছু স্তব্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাদের। তারা সুতরাং বুক ফাটে মুখ ফাটে না। এই অবস্থায় সাধারন মানুষের চরম ক্ষতি হয়েছে। বনধ দ্বারা আজ পর্যন্ত কোন সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে মনে করতে পারছে না তথ্যভিজ্ঞ মহল।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য