স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ আগস্ট : ২০ বক্সনগর ও ২৩ ধনপুর উপনির্বাচনে বিরোধী দলগুলির কৌশলী চালে শাসক দলের জন্য লড়াই হবে অগ্নিপরীক্ষার। এবং ইতিমধ্যেই সেই চাল চালিয়েছে মথা। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে গোপন আঁতাত হয়ে লড়াই করলেও সে লড়াই যে মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই ফিকে হয়ে গেছে সেটা উপনির্বাচনের আগে মথার চালচলনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে শক্তি প্রদর্শন করে প্রধান বিরোধীদলের আসনে এসে বসেছিল মথা। কিন্তু নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যেই অক্ষরে অক্ষরে বুঝে গেছে পদ্ম শিবিরের প্রতিশ্রুতি!
বোবাগ্রার লাস্ট ফাইট বলে জনজাতিদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের স্বপ্ন পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে তারা। আর স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে উপনির্বাচনে এবার কাঁধে কাঁধ মিলাতে সুদীপ রায় বর্মন এবং জিতেন্দ্র চৌধুরী সাথে বৈঠকে যোগ দিলেন অনিমেষ দেববর্মা। শনিবার এই বৈঠক হয় বিধানসভায়। সদ্য জন্মানো তিপ্রা মথা দিবা স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিধানসভা নির্বাচন লড়েছিল। কিন্তু বিধানসভার নিষ্ফলা লড়াইয়ের পর এখন বিরোধীদের সঙ্গে আতাত হয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও বক্সনগর এবং ধনপুর দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে বামেদের দুর্গ বলা চলে। বিগত ২৫ বছর বামেদের দখলেই ছিল এই ধনপুর। এবং এ কেন্দ্র থেকে মানিক সরকার জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন বারবার। ২০১৮ সালে তিনি জয়ী হয়ে প্রধান বিরোধী দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
কিন্তু ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই তিনি সরে দাঁড়ান। আর সরে দাঁড়াতেই দীর্ঘ পাঁচ দশকের এই বিধানসভা কেন্দ্রটি বামেদের হাতছাড়া হয়। কৌশিক চন্দ -কে পরাজিত করে জয়ী হন প্রতিমা ভৌমিক। এবং এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিমা ভৌমিকের জয়ের জন্য মাইলেজ দিয়েছিল তিপ্রা মথা। প্রায় আট হাজার ভোট কেটে নেয় মথার প্রার্থী প্রতিমা ভৌমিক -কে জয়ের দিশা দেখিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি দলের নির্দেশে শপথ গ্রহণ না করেই বিধায়িকার পদ থেকে সরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। আর সেই আট হাজার ভোট যদি এবার তিন দলের মিলিজুলি প্রার্থীর পক্ষে পড়ে তাহলে জয়ের পথ খুলে যাবে বিরোধীদের এই আসনে। অপরদিকে ২৩ -এর নির্বাচনে বক্সনগর কেন্দ্রে বিধায়ক শামসুল হক জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যেই তার মৃত্যুর ফলে এই কেন্দ্রটিও শূন্য হয়ে পড়ে। শাসকদলের কাছে এই কেন্দ্রটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। তবে শনিবার বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন এবং সিপিআইএম দলের পরিষদীয় দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী দেওয়ার জন্য। তাহলে বিরোধীদের পক্ষে সুগম হবে জয়ের পথ। তাই তিন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনভাবেই ভোট ভাগাভাগি করে বিজেপিকে জয়ের রাস্তা দিতে চাইছে না। এমনটাই সূত্রে খবর। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হলো প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে। সিংহভাগ কর্মীর চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থী না হলেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে মনে করছে। এদিকে এদিন বৈঠকের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা জানান মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। ভোট ভাগাভাগি যাতে না হয় তার জন্য আঁতাত করতে বৈঠক। তবে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন আশিস কুমার সাহা। এদিকে বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা জানান, বিধানসভার নির্বাচনে যেভাবে মানুষের ভাবাবেগ সামনে আসার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। আজ সেই বিষয়টা যাতে উপনির্বাচনে পুনর্বৃত্তি না হয়, তার দিকে লক্ষ্য রেখেই তিন দলের প্রাথমিক আলোচনা বলে জানান বিরোধী দলনেতা। আরো জানান, তিন দলের বৈঠকে শুধুমাত্র আলোচনা হয়েছে, কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত মানুষ যেভাবে চাইছে সেভাবেই হওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
আরো বলেন কংগ্রেস এবং সিপিআইএম নেতৃত্বদের কাছ থেকে যা জেনেছেন সে বিষয়টা দলীয় বৈঠকে শনিবার তুলে ধরবেন। আর সেই বৈঠক থেকেই দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তিনি বলেন ৬০ শতাংশের অধিক ভোট বিরোধীরা পেয়েও বিজেপি ক্ষমতায় বসেছে। এতে বুঝা যায় মানুষ কি চাইছে। সর্বশেষ তিনি বলেন ভোট ভাগাভাগি না হয়ে ১:১ লড়াই চাই শাসক এবং বিরোধীর লড়াই। তবে ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিগত দিনের বিধায়ক মানিক সরকার দাঁড়াতে চাইছে না বলেই সূত্রের খবর। কারণ যেখানে জিতেনের মুখ সামনের সারিতে সেখানে চার বারের মুখ্যমন্ত্রী সামনে উঠে আসতে চাইছেন না। নিজের নিজের অ্যাটিটিউড রাজনীতি ধরে রেখে মাথা ঘামাতে চাইছেন না ধনপুর নিয়ে এবার মানিক সরকার। তাই দলকে ভেবে চিন্তেই প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে হবে। তবে জানা যায় প্রাথমিক আলোচনার পর আগামী দু’একদিনের মধ্যেই চূড়ান্তের সিদ্ধান্ত হবে তিন দলের। সীলমোহর পড়বে প্রার্থী তালিকায়। শনিবারে বৈঠকে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে, বিধায়ক গোপাল রায়।