স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ জুন : উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল সরকারি স্কুলে চাকরিরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রাইভেট টিউশন করতে পারবেন না। যারা সরকারি নির্দেশিকা লংঘন করে প্রাইভেট টিউশন করবে তাদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা আধিকারিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশিকায় বলেছিলেন শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা।
কিন্তু বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আরাম কেদারায় বসে টিউশন করে চলেছেন সরকারি শিক্ষক শিক্ষিকারা। সারা রাজ্যে এভাবে সরকারি নির্দেশিকা লংঘন করার পরেও যারা আধিকারিকদের কোন হেলদোল নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যখন সাংবাদিকরা সেসব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতেনাতে ধরে ফেলছেন, তখন তারা বিজেপি করে বলে দোহাই দিচ্ছেন। অর্থাৎ বুঝিয়ে দিচ্ছেন সেই বিধানসভা কেন্দ্রের শাসক দলের বড় মাথাদের মাথায় জল ঢেলে ঠান্ডা করেই তারা টিউশন করছেন। এবং বড় অংকের মুনাফা দিয়ে যে মেনেজ করে টিউশন বাণিজ্য তারা চালিয়ে যাচ্ছেন সেটা ভালো করেই জানেন জেলা শিক্ষা অধিকারিকগণ। তাই শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশকে কলাপাতা করে কুম্ভ নিদ্রায় আচ্ছন্ন জেলা আধিকারিকগণ। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে ধুলো দিতে পাচ্ছেন না শিক্ষা দপ্তরে অধীনে কর্মরত কতিপয় জেলা আধিকারিক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার দুদিনে বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা দক্ষিণ জেলায় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। তারা নির্জন এলাকায় ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে চটিয়ে প্রাইভেট টিউশন করছেন।
দক্ষিণ জেলা শিক্ষা আধিকারিক অফিসের অধীন কৃষ্ণনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা শম্পা মহাজন সরকারি নির্দেশিকাকে কোন ভাবেই তোয়াক্কা না করে প্রাইভেট টিউশন করে চলেছেন। সাংবাদিকরা সেই শিক্ষিকাকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন শুক্রবার। জানতে চাওয়া হয় কেন তিনি টিউশনি করছেন। এর জবাবে তিনি বলেন বিজেপি দল করেন। সরকারি নির্দেশিকা বের হয়েছে সে বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন। আগামী পাঁচ মাস পর তিনি যখন নিয়মিত হবেন তখন প্রাইভেট টিউশন ছেড়ে যেতে দেবেন। বর্তমানে তিনি ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাইভেট পড়ান। তিনি বলেন চাকুরি পাওয়ার আগে থেকেই তিনি গত ১৯ বছর ধরে টিউশন করে চলেছেন। শিক্ষিকার বাড়ি ঋষ্যমুখ হরিপুর এলাকায়। এলাকার বেকার মহল এই শিক্ষিকা এবং বিজেপি নেতাদের উপর বেজায় ক্ষুদ্ধ।
এদিকে বিকেআই স্কুলের কেমিস্ট্রি বিষয়ের শিক্ষক সপ্তর্ষি সুর -কে এলাকার যুবকরা হাতেনাতে ধরে ছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি সাংবাদিক দেখে ঘর থেকে বের হয়ে ছাত্রী অভিভাবকের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এই শিক্ষক মশাই আবার অন্যরকম কায়দা অবলম্বন করতে দেখা গেছে। তিনি আগে থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের শিখিয়ে রাখেন যদি এলাকার বেকার যুবকরা এসে তলব করে তাহলে যাতে তারা বলে সপ্তর্ষি বাবুর তাদের আত্মীয় হয়। আর সেটাই করল এদিন এক ছাত্রী। শিক্ষকের সাথে সুর মিলিয়ে বলল রিলেটিভ হন সপ্তর্ষি দাদা। যাদের সমাজের মেরুদন্ড হিসেবে ধরা হয় তারাই এখন ছাত্র-ছাত্রীদের মিথ্যা আশ্রয় নিতে শেখাচ্ছে। শুধুমাত্র নিজেদের কামাই বাড়াতে। অভিযোগ ঋষ্যমুখে দীর্ঘদিন ধরে এভাবে প্রাইভেট টিউশন করে চলেছেন সরকারি শিক্ষক ঝুটন লস্কর, সুব্রত, বিধান, তাপস এবং অমল বাবুরা। তারা নিজ স্কুলের কর্মরত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে নিয়ে আসে নিজের প্রাইভেট সেন্টারে। এবং তাদের পলিসি স্কুলে সঠিকভাবে পাঠদান না দিলে বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে আসবে। এদিকে জেলা আধিকারিকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, দক্ষিণ জেলায় তিনটি কমিটি করে পাইভেট টিউশন করা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের খুঁজে বের করা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং কমিটিগুলির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন একজন করে প্রধান শিক্ষক। কিন্তু দক্ষিণ জেলায় যে এভাবে চটিয়ে বিদ্যা ব্যবসা চলছে সে বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। সেটা তিনি এদিন স্পষ্ট বলে দিলেন। তিনি দায়িত্ব থেকে হাত ধরে ফেলতে বলেন অভিযোগ যেন দায়িত্বে থাকা কমিটির কাছে করা হয়। আর এটাই যদি প্রশাসনের ভাবমূর্তি হয়ে থাকে তাহলে নির্দেশিকা কলাপাতা ছাড়া কিছু নয়।