স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৮ জুন : সুশাসন জামানায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষ চাইলেন স্বদলীয় কর্মী। বহু আশা ছিল চাকরি মিলবে, কিন্তু পরিবর্তে প্রতারনার শিকার হয়েছেন এই বিজেপি কর্মী। জানা যায়, বিলোনিয়া ভারত চন্দ্র নগর ব্লকের পঞ্চায়েত অধীন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চাকরির অফার ছাড়া হয়। কিন্তু অফার ছাড়তেই চাকরি নিয়ে কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠছে দলের কর্মীদের তরফে। অভিযোগ বিলোনিয়া মন্ডল নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কিছু কিছু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এই কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত রয়েছে বলে দাবি।
চাকরির অফার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে এমন এক বিজেপি কর্মী হতাশার সুরে বলেন তার স্ত্রীকে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে সহায়িকা হিসেবে নিযুক্ত না করা হলে তার হাতে বিষের বোতল তুলে দিতে । এই ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কাতর আবেদনে বিষের বোতল চাইলেন ভারত চন্দ্র নগর ব্লকের পাইখলা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বিজেপির এক কর্মী । এই বিজেপি কর্মীর নাম রঞ্জিৎ সূত্রধর। আশা ছিল অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের সহায়িকা হিসেবে নিযুক্ত হবে তার স্ত্রী রেখা সূত্রধর। সেই মোতাবেক অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের সহায়িকা হিসেবে ইন্টারভিউ দেয় রঞ্জিত সূত্রধরের স্ত্রী রেখা সূত্রধর। কিন্তু সেই আশা নিরাশায় পরিনত হলো। বঞ্চিত হলেন চাকরির অফার পাওয়া থেকে। মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহার কাছে একটাই আবেদন চাকরির ব্যবস্থা করে অসহায় এই পরিবারটিকে বাঁচার পথ দেখানোর। বৃষ্টিভেজা আঁচলে অঝোরে কাঁদলেন মা। মায়ের সামনে ছেলে চাইলেন বিষের বোতল। এর থেকে বড় বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে? মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহার কাছে চেয়েছিলেন স্ত্রীর চাকরি। অফার চলে গেলে অন্যত্র।
চাকরি পেলে রঞ্জিত তার স্ত্রী এবং পুত্র সহ বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে সুন্দরভাবে সংসারটা চলতে পারতো। ভারত চন্দ্র নগর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান পুতুল পাল বিশ্বাস সহ বিলোনিয়া মন্ডল সভাপতি গৌতম সরকার, বিজেপি নেতা নিতাই চরন মজুমদারের কারসাজিতেই এই চাকরি কেলেঙ্কারি। এমনই অভিযোগ এলাকার বিজেপি কর্মীদের। বুথ সভাপতি , পৃষ্ঠা প্রমুখদের না জানিয়ে মনগড়া চাকরির তালিকা তৈরী করে পাঠানোর ফলে, চাকরি থেকে বঞ্চিত অসহায় রঞ্জিত সূত্রধরের স্ত্রী রেখা সূত্রধর । এই ক্ষোভে আজ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পাইখলা পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে চাকরি দাবিদার রঞ্জিতের পরিবার সহ বুথ সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বিজেপি নেতা কর্মীরা । সেই সময়ে পঞ্চায়েত সচিব ছাড়া , প্রধান ও উপপ্রধান কেউ ছিল না পঞ্চায়েতে । পঞ্চায়েত ঘেরাও করার আধ ঘন্টার পরে আসেন উপপ্রধান । সাথে সাথে দলের কর্মীরা উপপ্রধানকে ঘেরাও করে জবাব চাইলেন কেন রঞ্জিতের স্ত্রী অঙ্গনওয়ারী সহায়িকা অফার থেকে বঞ্চিত। কি করে আসামে বিয়ে দেওয়া এক গৃহবধূকে অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্রে সহায়িকা হিসেবে অফার দেওয়া হল এই প্রশ্নের জবাবে উপপ্রধান কিছুই জানেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন । রঞ্জিত সূত্রধরের ঘরে এই অফার যাওয়ার কথা কিন্তু কি করে এই চাকরি হলো তা জানেননা বলে লিখিতও দেন তিনি। পাইখলা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রঞ্জিত সূত্রধর দুই বছর আগে হঠাৎ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। চোখের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আজ সর্বশান্ত এই অসহায় পরিবার । রঞ্জিত দৃষ্টি হীন হওয়ার কারনে, কাজ করতে না পারায় স্ত্রী – ছেলে ও বৃদ্ধ বাবা মায়ের দু মুঠো অন্ন জোগাড় করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সেই হিসেবে এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব চেয়েছিল রঞ্জিতের স্ত্রীর চাকরি হোক। কিন্তু এলাকার নেতৃত্ব এর কথা কর্নপাত না করে, অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে সহায়িকা হিসেবে নামের তালিকা পাঠানো হলো আসামে বিয়ে দেওয়া এক গৃহবধূর নামে। এই নাম আসতেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এলাকার বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ টাকার বিনিময়ে এই পাইখলা গ্ৰাম পঞ্চায়েতে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে সহায়িকা হিসেবে চাকরি পেল আসামে বিবাহিত মহিলা। এলাকার বিজেপি কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে দেন রঞ্জিতের পরিবারে যদি অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা হিসেবে নিযুক্তি না দেওয়া হয় তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাইখলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যালয় সহ পাইখলা বিজেপি দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।