স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৫ জানুয়ারি : পামছার হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার। তাই এখন নিজের চামড়া বাঁচানোর জন্য রাজ্যে এসে প্রধানমন্ত্রী বলছেন পূর্বের সরকার নাকি ব্রেক কষা ছিল। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যে এসে পূর্বতন সরকারকে যেভাবে সমালোচনা করেছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ কথা বলেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। বুধবার দুপুরে সিপিআইএম রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এসে বলছেন ডাবল ইঞ্জিনের সরকার নাকি ব্রেক কষা ছিল।
ভ্রষ্টাচারের প্রগতি বেড়েছে পূর্বোত্তর সরকারের আমলে। সুনির্দিষ্টভাবে কোন অভিযোগ তুলতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এসে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এগুলো বলেছেন। তিনি রাজ্যের ইতিহাস কিছুই জানেন না। আন্দোলন-সংগ্রাম আগের সরকারের সময় শুরু হয়েছিল তা উনার জানা দরকার। পূর্বতন সরকারের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল যাতে বড় এয়ারক্রাফ নামতে পারে তার জন্য টার্মিনাল ভবন করার। বিগত সরকার থাকার সময় সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতায় কাজ শুরু হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের কাছে জমি চেয়েছিল। সে মোতাবেক বহু পরিবারের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে তাদের পুনর্বাসন দিয়ে জমির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময় নবনির্মিত টার্মিনাল ভবনের জন্য সেই কাজ শুরু হয়।
পরবর্তী সময় রেলের জন্য রাজ্যের যুবকরা এবং প্রগতিশীল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। রেল ছাড়া শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। রাজ্য সরকার কেন্দ্র থেকে টাকা না নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী পাহারা দিয়ে রেল লাইন পাতার কাজ শুরু করে। এবং সেই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর রেল দপ্তরের আধিকারিকরা অত্যন্ত প্রশংসা করে বলেন এ ধরনের ঘটনা দেশে কোন রাজ্যে তারা দেখে নি। আর এখন এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন ব্রেক কষা সরকার ছিল। এটা কোনো দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন নয়। ইতিহাস জেনে কথা বলুন প্রধানমন্ত্রী। আপনারা তো কোন গণসংগ্রামে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা নেই, দলের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার দৃষ্টান্ত নেই। ব্রিটিশের পা চাটা, তেল মেখেছে। ছুরি মেরেছে। তাই এখন এসে এগুলি বলছেন বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ পর্যন্ত রেললাইন হচ্ছে। এই রেল লাইনের পেছনে আপনাদের সরকারের কৃতিত্ব কি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ইউপিএ সরকারের সময় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং -এর সাথে কথা বলে সেখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে দলিল তৈরি হয়। এবং সেখানে তিনিও আমন্ত্রিত ছিলেন। জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের কাছ থেকে কি চান। তখন বলা হয়েছিল বাংলাদেশের সাথে রেল লাইনে সংযুক্ত করার বিষয়ে। পরবর্তী সময় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন কোথায় ছিলেন আপনি, আপনার দল এবং ডাবল ইঞ্জিন বলে কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। আরো কটাক্ষ করে বলেন, ডাবল ইঞ্জিনের শক্তি কি এক কিলোমিটার রেললাইন পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে চার বছর বসাতে পারল না। প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা শরম থাকা দরকার। তিনি আবার বলছেন হীরা করে দিয়েছেন ত্রিপুরাকে। তিনি জানেন না সড়কপথ জাতীয় স্তরে আটটি বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হয়েছে। ধর্মনগর থেকে সাব্রুম পর্যন্ত ফোর লেন সড়কপথ করার দাবিও তখনই উঠেছিল। কিন্তু আর্থিক ভাবে সামর্থ্য না থাকায় ডাবল লেনের কাজ শুরু হয়। এখন কথা ছিল ভবিষ্যতে এটি ফোর লেন করার। ইতিহাস প্রধানমন্ত্রী জানেন না। আর বামফ্রন্ট যখন এই দাবিগুলি তুলেছিল তখন রাজ্যের মানুষ বিজেপির নাম জানতো না। এখন রাজ্যে এসে বুক বাজাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যের নবপ্রজন্মকে তৎকালীন সরকারের ভূমিকা ও ইতিহাস সম্পর্কে অবগত করতে আজকে সাংবাদিক সম্মেলন। টিনের ঘর, পাকা ঘর থাকলে ঘর দেওয়া যাবেনা। এগুলি কখনো সমর্থন করে বামফ্রন্ট। আর এখন প্রধানমন্ত্রী এসে বলছেন তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ইতিহাস বদলে দিয়েছেন। ত্রিপুরা মানুষকে বোকা ভাবলে ভুল করছেন তিনি। এবং তিনি বাঁশ-বেত শিল্পের গল্প শোনাচ্ছেন। বাঁশ বেত শিল্প দেশের বাজারে ছড়িয়ে আছে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে। সুতরাং মানুষকে এখন বিভ্রান্ত করতে রাজ্যে এসে এগুলি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী বলে সমালোচনা করেন মানিক সরকার।