আগরতলা, ১৭ ডিসেম্বর (হি. স.) : প্রশাসন পরিচালনায় ইংরেজ আমলের ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। কারণ, যুগের পরিবর্তনের সাথে সাযুজ্য রেখে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রসাশনিক ব্যবস্থায় সরলীকরণে জোর দিয়েছেন তিনি। তাতে, সরকারী সুবিধা কম সময়ে অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে জোর গলায় দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত, ত্রিপুরায় আগামী ২৫ বছরের দীশা নির্ধারণ এবং রূপায়নের কর্মপন্থা নির্ণয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। ২০৪৭ সালে ত্রিপুরাকে সেই দীশায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সরলীকরণে বিশেষ জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ প্রজ্ঞা ভবনে ভিশন ২০৪৭ শীর্ষক সূচক নিয়ে দুই দিবসীয় কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রশাসনিক আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
এদিন সীপার্ডের ডিজি শ্রীরাম তরুনিকান্ত বলেন, সারা দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ উপলক্ষ্যে আজাদী কা অমৃত মহোত্সব পালন করছে। সেই উত্সবে সামিল হয়েছে ত্রিপুরাও। তবে, স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে ত্রিপুরা কোথায় পৌছাবে তার রূপরেখা তৈরী করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই, ভিশন ২০৪৭ ডকুমেন্ট আনতে চলেছে ত্রিপুরা সরকার। পূর্ণ রাজ্য দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে সেই ডকুমেন্ট প্রকাশ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, বলেন তিনি। তাঁর কথায়, বিভিন্ন দফতরের সহযোগিতায় ২৫ বছর বাদে ত্রিপুরাকে কোথায় পৌঁছানো সম্ভব হবে তার রূপরেখা তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ছয়টি ক্ষেত্রকে বাছাই করা হয়েছে। বিভিন্ন দফতর সে মোতাবেক প্রস্তাব দেবে। সেই প্রস্তাবের উপর দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরী হবে। তিনি বলেন, প্রাথমিক, সামাজিক, বানিজ্য ও বিনিয়োগ, পরিকাঠামো, যোগাযোগ এবং লজিস্টিকস, পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন এবং শাসন ব্যবস্থা এই ছয়টি ক্ষেত্র নিয়েই আগামী ২৫ বছরের ভিশন ডকুমেন্ট তৈরী করবে ত্রিপুরা সরকার। শুধু তাই নয়, তা বাস্তবায়নেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ভিশন ডকুমেন্ট বাস্তবায়নে কৌশল সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্ণয় করতে হবে। সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে দুই দিনের কর্মশালায় বিস্তারিত আলোচনা হবে। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে খসড়া প্রস্তাব তৈরী হয়েছে এবং মন্ত্রিসভা এবিষয়ে আলোচনা করেছে। তবে, খসড়া প্রস্তাবের চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক আধিকারিক, বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতেই এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
এদিন মুখ্য সচিব কুমার অলক উন্নয়নের সদুরপ্রসারী দীশা নির্ণয় খুবই জরুরি। কারণ, যুগের ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে পরিস্থিতি, প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবস্থায় পরিবর্তন হচ্ছে। তাঁর কথায়, লক্ষ্য স্থির করা খুবই জরুরি। তবেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তিনি অতীত দিনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, নব্বয়ের দশকে এজি অফিসে কম্পিউটার ইনস্টল করার সময় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল। কারণ, ওই সময় একটা অংশ কম্পিউটারের বিরোধিতা করছিল। কিন্ত, আজ সকলের পকেটে কম্পিউটার রয়েছে। তাই, আজ নেওয়া সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের ২৫ বছর বাদে সাফল্য কিভাবে মিলবে তার দীশা এখনই স্থির করতে হবে। তাঁর মতে, ভিশন ২০৪৭ ডকুমেন্ট শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির জন্য নয়, সমগ্র রাজ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হবে।আজ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ২৫ বছর ত্রিপুরা কোথায় পৌঁছাবে তার দীশা নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, মুখ্য সচিবের দেওয়া ১৯৯১ সালের ত্রিপুরার পরিস্থিতির বর্ণনা শুনে নিশ্চিত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, খুবই কঠিন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। আপনাদের সম্মিলিত প্রয়াসে সেই কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ২৫ বছরের রূপরেখা তৈরী হবে। ২০৪৭ সালে ত্রিপুরা কোথায় পৌঁছাবে সেই কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
তাঁর কথায়, ব্যক্তির বদল সম্ভব, কিন্ত পদ একই স্থানে রয়ে যাবে। তাই, ত্রিপুরাকে ২৫ বছর বাদে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পদাধিকারীকে বলিষ্ট ভূমিকা নিতে হবে। তিনি প্রশাসনিক আধিকারিকদের কর্মজীবন থেকে ১ ঘন্টা করে সময় চেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন জরুরি। সেই হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহারকে সঠিকভাবে প্রয়োগ খুবই প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য, কোন কাজ বাস্তবায়নে একাধিকবার স্বাক্ষরের প্রয়োজন রয়েছে। তাতে, অযথা কাজে বিলম্ব হচ্ছে। সেই ব্যবস্থাকে বদলানোর খুবই প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনিক কাজে নিয়মের জালে বাধা সরাতে হবে। প্রশাসন পরিচালনায় সরলীকরণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাঁর সাফ কথা, সমস্ত দফতর থেকে ওই বাধা সরাতে হবে। কারণ, ইংরেজ আমলের ব্যবস্থা এখনো প্রশাসনে বিদ্যমান। তাঁর কটাক্ষ, শাসন করার জন্য তাঁরাই বাধা তৈরী করেছিল। ভারত স্বাধীন হলেও, সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়নি।
তাঁর বক্তব্য, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সেই বাধা দূর করতে হবে। তবেই, কম সময়ে সরকারী সুবিধা অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তাঁর পরামর্শ, সাহসী পদক্ষেপে ভয় পাবেন না। কারণ, ভয় থেকে কিছুই প্রাপ্তি হয় না, বরং মানুষ দুর্বল হয়ে যায়। তিনি বলেন, ত্রিপুরার অন্তিম ব্যক্তির কাছে সরকারী সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে হবে। সেই লক্ষ্যে, কাজের সাথে মানুষের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে হবে। তাঁর দাবি, মানুষের সাথে যোগাযোগের অভাবেই সরকারের নানা সাফল্য সত্ত্বেও অপপ্রচার চলছে সমানে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এমনও আধিকারিক রয়েছেন সরকারী কাজের প্রচার ঠিকভাবে করেননি, ফলে আজ ত্রিপুরা সরকার সমালোচিত হচ্ছে। তাঁর সাফ কথা, অপপ্রচার আটকাতে আধিকারিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
এদিকে, আজ মুখ্যমন্ত্রী সময়ের কাজ সময়ে সমাপ্ত না হলে ঠিকেদারদের বিরুদ্ধেও জরিমানা করার ব্যবস্থা আনতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর আক্ষেপ, ছয় বছর ধরে দ্বিতল বিশিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন নির্মাণের কাজ চলছে। তাই, দরপত্র আহবান প্রক্রিয়ায় ঠিকেদারদেরও জরিমানার ব্যবস্থা রাখতে হবে, বলেন তিনি।