Monday, June 16, 2025
বাড়িরাজ্যশান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সাংবাদিক সম্মেলন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সাংবাদিক সম্মেলন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ জানুয়ারি : রাজ্যে দুদিন সফরের পর অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান , রাজ্য সফরে প্রথম দিন সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন নির্বাচনী আধিকারিকেরা। এরপর ধারাবাহিকভাবে জেলাশাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, জেলা পুলিশ আধিকারিক এবং এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি গুলির আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। পৃথকভাবে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশকের সঙ্গে।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন দায়বদ্ধ অবাধ শান্তিপূর্ণ স্বচ্ছ নিরাপদ ও সংঘর্ষ মুক্ত নির্বাচন করার জন্য। ভয়মুক্ত ও পক্ষপাতহীন হিংসামুক্ত প্রলোভনহীন নির্বাচন করার বিষয় অঙ্গীকারবদ্ধ নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে সমস্ত ভোটারদের সহযোগিতা প্রয়োজন। ত্রিপুরা বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২২ শে মার্চ। সাত আসন বিশিষ্ট এই বিধানসভায় ৩০ টি আসন সাধারনের জন্য দশটি আসন তপশিলি জাতিদের জন্য এবং কুড়িটি আসন তপশিলি, জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। মোট ভোটার ২৮ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৭৮ জন। দিব্যাঙ্গন ভোটারের সংখ্যা ১৭,২৫৭ জন। ৮০ ঊর্ধ্ব ভোটারের সংখ্যা ৩৮,০৩৯ জন। তাদের সকলকে ভোটারদের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষ চিঠি দেওয়া হয়। ভোটদানে তাদের অংশগ্রহণ আগামীর প্রেরণা বলে জানান জাতীয় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৭৭ জন। ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সি প্রথম ভোটার সংখ্যা ৬৫ হাজার ৮৫ জন। ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৭৯৯৫ জন ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আগাম নথিভুক্ত করেছেন। যারা ভাবি ভোটার। তাদের বয়স ১৮ উত্তীর্ণ হলেই ভোটার আই ডি কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, পানীয় জল, শৌচাগার, বিদ্যুৎ, হুইল চেয়ার, হেল্প ডেক্স সমস্ত বুথে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। দেশের বড় বড় উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম গণতন্ত্রের এই উৎসব। তাকে সঠিকভাবে উদযাপন করার জন্য যথার্থ পরিবেশ তৈরি করতেই এ ধরনের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে।  লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিবাহ হওয়ার পর মহিলাদের স্থান পরিবর্তন হয়। এই ধরনের দশ হাজার ছেষট্টি জনের নাম পরিবর্তিত হয়েছে। এটা ভালো দিক।

অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাই নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে জিরো পোল ভায়োলেন্স মিশন গ্রহণ করা  হয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দল তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার ছবি তৎক্ষণাৎ তুলে নির্বাচন কমিশনের সুনির্দিষ্ট হয়াট অ্যাপ নাম্বারে পাঠানো যাবে। ১০০ মিনিটের মধ্যে পাঠানো ছবি ও তথ্যের উপর ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন। ক্যুইক রেসপন্স টিম বা সেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে যাবেন। সদ্য অনুষ্ঠিত  নির্বাচনগুলিতে এই নীতি কার্যকর করে সফলতা মিলেছে বলে জানান তিনি। কে ওয়াই সি অ্যাপের মাধ্যমে ভোটারেরা জানতে পারবেন তাদের প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। কোন প্রার্থীর অপরাধ মূলক ইতিহাস থাকলে তাও জানা যাবে। কারুর বিরুদ্ধে অপরাধ মূলক ঘটনার মামলা থাকলে তা সুনির্দিষ্ট দল এবং প্রার্থীকে তিনবার বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলিকে কেন তাকে প্রার্থী করা হলো তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। ভোটারদের সামনে সমস্ত কিছু খোলামেলা ভাবে রাখতে এবং তাদের পছন্দ নির্ধারণ করতে নির্বাচন কমিশনের এই ব্যবস্থাপনা। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত অবজারভারদের সামনে সমস্ত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মুভমেন্ট জানানো হবে।

যাতে করে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন এজেন্সিগুলিকে শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ নির্বাচন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু রাজ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক হিংসার মত ঘটনা ঘটছে। সেই সমস্ত রাজ্যগুলিকে চিহ্নিত করে এই রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা বন্ধ করার জন্য বিশেষ  দৃষ্টি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সমস্ত পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতি সম মনোভাব নিয়ে কাজ করার জন্য। জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করবে রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের জন্য যে সমস্ত সুবিধা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করা। সমস্ত পোলিং স্টেশনে সিআরপিএফ মোতায়েন করা হবে। যে সমস্ত নাকা এবং রাস্তায় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকবে সেই সমস্ত স্থানগুলিকে চিহ্নিত করে প্যারা মিলিটারি ফোর্স দিতে  বলা হয়েছে। প্রার্থী এবং পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে জেলাশাসক। রাজ্যে ৩৩২৮টি পোলিং স্টেশন রয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে মহিলাদের স্বশক্তিকরণ ও ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে রাজ্যের ৬০ টি পোলিং স্টেশন কে চিহ্নিত করা হয়েছে।। এই পোলিং স্টেশন গুলি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এই কেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে মহিলা আরক্ষা কর্মীরা। দশটি পুলিং স্টেশন দিব্যাঙ্গজনদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তাদের সম্মান জানাতে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ। নেশা, মদ , অর্থ উৎকোচ হিসেবে প্রদানের ক্ষেত্রে করা পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন। নিশ্চিত করবে আরক্ষা কর্মী ও প্যারামিলিটারি ফোর্স। কেবল তাদের আটক করলেই চলবে না পেছনের মূল মাথাকেও সামনে নিয়ে আসতে হবে। কারুর ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা এককালীন সময়ে অনলাইনে ট্রান্সফার করা হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আর বি আই – কে এর সেই বিষয়ে অবগত করবে। সন্ধ্যা পাঁচটার পর থেকে পরদিন সকাল নটা পর্যন্ত ব্যাংকের মাধ্যমে কোন নগদ অর্থ লেনদেন করা যাবে না। 

 দায়ের করার সমস্ত অভিযোগের গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে। ৫০ শতাংশ বুথে ন্যূনতম ওয়েব কাস্টিং থাকতে হবে। যে সমস্ত এজেন্সি এই ওয়েব কাস্টিং এর দায়িত্ব পাবে তাদের নিশ্চিত করতে হবে যথাযথভাবে ক্যামেরা কাজ করছে  কিনা। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কমিশন। গতবারের ভুল ত্রুটি শুধরে নেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ  নেওয়া হয়েছে। ভোট সামগ্রী রাখার প্রতিষ্ঠানটি ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকবে। সমস্ত বুথে একজন কেন্দ্রীয় কর্মচারী মাইক্রো অবজার্ভার হিসেবে নিযুক্ত থাকবেন। রাতে কোন সভা ও প্রচার চালানো যাবে না। বিজ্ঞাপনগুলি নজরদারি করার জন্য ডিইও- দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  তারা একটি সোশ্যাল মিডিয়া সেল তৈরি করবে। ভুয়া ও পক্ষপাত দুষ্ট সংবাদ আটকানোর জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জাতীয় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। রবীন্দ্র শতবার্ষিক ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পান্ডে , অরুণ গোয়েল সহ অন্যান্য আধিকারিক।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!