স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১১ জানুয়ারি : রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। প্রস্তুতি পর্ব পর্যালোচনা করতে বুধবার ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল দুদিনের রাজ্য সফরে এসেছেন। প্রতিনিধি দলে এছাড়াও রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পাণ্ডে এবং অরুণ গোয়েল। এদিন রাজ্য সফরে এসে প্রতিনিধি দলটি বিকেলে রাজ্য অতিথিশালায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হয়।
মুখ্য নির্বাচনে আধিকারিক ও রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্ব ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনকে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অবহিত করেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার ডি ই ও এবং পুলিশ সুপার কাজে প্রস্তুতি সম্পর্কে কমিশনকে জানান। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংস্থাগুলি নোডাল অফিসারদের সাথে পর্যালোচনায় মিলিত হয় প্রতিনিধি দল। এদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে থেকে মূলত নিজ নিজ দলের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দলের কাছে দাবি জানিয়েছেন সুষ্ঠ, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংগঠিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে মুখোমুখি হয়ে জানান, নির্বাচন কমিশন যদি চায় ভয় মুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। গত পাঁচ বছরে ত্রিপুরা রাজ্যে সংবিধান এবং মানুষের অধিকার ভুলুঠিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আগে রাজ্যের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, অধিকার ও সম্মান জানিয়ে ভোট হতো। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও সেগুলি করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে। এবং এর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশনকে। কারণ বিগত পাঁচ বছরে ত্রিপুরা রাজ্যের যতগুলি নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে সবগুলি নির্বাচনী দেখা গেছে পুলিশের উপর তলার কিছু অফিসারের মদতে রাজ্য পুলিশ কর্মীদের কলাগাছ হিসেবে সাক্ষী গোপাল করে ভোট লুট হয়েছে। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের সময় বহু বুথে নির্বাচন কমিশনকে পুনরায় নির্বাচন সংঘটিত করতে হয়েছে। যা গোটা দেশের মধ্যে রেকর্ড হয়েছে। এগুলি তুলে ধরে বলা হয়েছে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার আগেই ভারতের সংবিধানের শুদ্ধতা, দেশের সম্মান, ত্রিপুরা রাজ্যের গৌরব, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য এ নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এ ভোট সন্ত্রাসীদের আটকে সারা দেশের কাছে তুলে ধরার দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি আরো জানান এই দাবিগুলি লিখিতভাবে তুলে ধরার পর এখন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা ব্যক্ত করে তিনি। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে সুস্পষ্ট ভাবে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে একটি গাড়ির মধ্যে বিরোধী দলের পতাকা লাগিয়ে পশ্চিম দিক ছাড়া যে কোন দিকে যাওয়ার জন্য বলেন, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো করে অভিযোগ অবগত হতে পারবেন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল। এদিকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করে জানান, বিগত দিনে ত্রিপুরা রাজ্যের ভোটারদের কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সে বিষয়ে যেমন জানানো হয়েছে, একইভাবে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে দাবি জানানো হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বলা হয়েছে যাতে পুলিশ প্রশাসনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, ভোট কেন্দ্র গুলির নিরাপদ রাখা হয় এবং নিরাপদে যাতে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে। প্রতিটি বিষয়ে তারা আশ্বস্ত করেছেন প্রতিনিধি দল বলে জানান তিনি। ভারতের জনতা পার্টির মুখপাত্র অশোক সিনহা জানান, ভোটকে কেন্দ্র করে সীমান্তবর্তী এলাকায় যাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। অপরদিকে। আইপিএফটি দলের মুখপাত্র বিধান দেববর্মা জানান, নির্বাচিত কমিশনের সাথে দেখা করে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন সংঘটিত করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন প্রদেশ সভাপতি পীযুষ কান্তি বিশ্বাস।
তিনি জানান বিগত দিনে দেখা অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস শুধুমাত্র কাগজে-কলমে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে শান্তিপূর্ন নির্বাচন পুর নির্বাচন এবং উপ নির্বাচনে দেখা যায় না। ভোটাররা যেমন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে নি, তেমনি প্রার্থী পর্যন্ত দৈহিকভাবে নিগ্রহ হয়েছে। বর্তমানে বিরোধী কোন রাজনৈতিক দল বাইক বাহিনীর জন্য কোন ধরনের দলীয় কর্মসূচি করতে পারছে না। অতীত নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়ার পরে দেখা গেছে নির্বাচনের দিন কোন পদক্ষেপ কার্যকর হয় না। তাই দাবি জানানো হয়েছে নির্বাচনের দিন যাতে ভোট কেন্দ্রের ৫০০ মিটারের মধ্যে যাতে কোন বাইক প্রবেশ করতে না পারে। ভোট কেন্দ্রে যাতে ভোটার রা সুষ্ঠুভাবে পৌঁছাতে পারে তার জন্য রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা কর্মী দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দলটি নির্বাচনী প্রস্তুতি পর্ব সম্পর্কে অবগত হয়েছেন সবকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব কাছ থেকে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্য সচিব, রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক এবং রাজ্য সরকারের সকল সচিবদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হবেন। পরবর্তী সময়ে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের সামনে একটি এস ভি ই ই পি অনুষ্ঠান করা হবে, সেখানে নতুন ভোটারদের মধ্যে ভোটার পরিচয় পত্র প্রদান করা হবে। কমিশনের এই দলে রয়েছেন উচ্চপদস্থ আধিকারিক।