স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১১ জানুয়ারি : সমস্ত গণতান্ত্রিক দল এক ছাতার নিচে এসে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা থেকে বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করা মূল লক্ষ্য। কারণ ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোন প্রতিশ্রুতি পালন করে নি। অপরাধমূলক ঘটনা একদিকে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরদিকে নেশার করিডোর হয়েছে ত্রিপুরা। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাস নামিয়ে আনছে বিজেপি। তাই সিপিআইএমের প্রাথমিক লক্ষ্য সব গণতান্ত্রিক দল একসাথে এসে লড়াই করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা।
মঙ্গলবার সিপিআইএম -এর রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর বুধবার সকালে সি পি আই এম রাজ্য দপ্তরের সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথা জানান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন এই বৈঠকে মূলত বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য। তাই সিপিআইএম ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার ফোকাস করছে। এর জন্য সব ধর্ম নিরপেক্ষ দল একসাথে আসতে হবে। বিশেষ করে কংগ্রেস এবং তিপ্রা মথা যদি এক ছাতার নিচে আসতে চায় তাহলে সিপিআইএম প্রস্তুত রয়েছে। তবে তিপ্রা মথার যে গ্রেটার তিপরাল্যান্ডের দাবি এটা সম্পূর্ণ তাদের সাংবিধানিক দাবি বলে জানান ইয়েচুরি। আপাতত কংগ্রেস এবং তিপ্রা মথার সাথে প্রিন্সিপাল আলোচনা হয়েছে। এক ছাতার নিচে আসার বিষয়ে চূড়ান্ত কোন আলোচনা হয়নি বলেও জানান ইয়েচুরি। আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন জোট সরকারের তীব্র সমালোচনা করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের রণকৌশল তুলে ধরেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন রাজ্যের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে আসন্ন বিধানসভার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে ব্যবহার করে কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বিশেষ ত্রিপুরা রাজ্যের ঐতিহ্য বা পরম্পরা যাতে নষ্ট করে দিতে না পারে সেদিকে নাগরিকদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে ঐতিহ্য এবং পরম্পরা রক্ষা করতে নাগরিক প্রতিরোধ হওয়া জরুরি
। কারণ ত্রিপুরার মানুষকে তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। এই কথাগুলি সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করে বলেছেন। জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন অমিত শাহ গৃহ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী বলেছেন ত্রিপুরা রাজ্যে নাকি হিংসার অবসান হয়েছে। বেকারদের রোজগারে লাগানো হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যতগুলি ছিনতাই -এর ঘটনা, খুন ও চুরির ঘটনায় এবং নেশা কারবারি ধরা পড়ছে, অধিকাংশের মধ্যেই বিজেপির মন্ডল নেতারা জড়িত। আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরা রাজ্যে এসে দাবি করছেন তাদের নাকি রোজগারে লাগানো হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানান জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি দাবি করেন অমিত শাহ ত্রিপুরা রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে বলে গেছেন দুনিয়া থেকে কমিউনিস্ট মুক্ত হয়েছে। তার পরিবর্তিতে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ইউরোপ দেশ গুলিতে কমিউনিস্ট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন তথ্য ছাড়া মূর্খের মতো কথা বলছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দাবি করেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। শিক্ষক-কর্মচারী প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছে না। মিথ্যে তথ্য ও অসত্য কথা বলে যুব সমাজকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছে বিজেপি বলে সমালোচনা করেন তিনি। এদিকে ১০,৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রসঙ্গে বলেন মুখ্যমন্ত্রী জনসভা থেকে বলছেন তাদের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আর তথ্যমন্ত্রী বলেছেন ১০,৩২৩ এর জন্য দায়ী নয় বর্তমান সরকার। বিভ্রান্ত না ছড়িয়ে তাদের সমস্যার সমাধানের দাবি করেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন বিজেপি বলছে ত্রিপুরা রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে। কিন্তু এই উন্নয়নের জোয়ার বেকার যুবক-যুবতী এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য নয়। উন্নয়নের জোয়ার বিজেপির মন্ডল নেতাদের বাড়িতে। কারণ ২০১৮ সালে সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ছনের ঘর থেকে কিভাবে দ্বিতল ভবন এবং ভাঙ্গা সাইকেল থেকে কিভাবে গাড়ি নিয়ে ঘোরা যায় সেটা করে দেখিয়েছে বিজেপি। আর এই উন্নয়নের জোয়ার মানুষ মেনে নেয় না বলে জানান শ্রী চৌধুরী। আরো বলেন, বিজেপি কমিউনিস্টদের ডাস্টবিনে ফেলার যে কথা বলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন মানিক সাহাকে তুলতে গিয়ে বিপ্লব কুমার দেব ডাস্টবিনে গেছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মুখ্য অধিকারিকের পৌরহিত্যে সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শাসক দল ছাড়া সবকটি রাজনৈতিক দল গত পাঁচ বছ বছরে নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন সুষ্ঠুভাবে কোন নির্বাচন হয়নি। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ষষ্ঠ অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা দাবি জানিয়েছে বলে জানান তিনি। এ দিনের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন বিজেপি পরিচালিত আরএসএস নেতা সাম্প্রদায়িক ইঙ্গিত করছেন। তাই বিজেপি থাকলে ভারত এবং ভারতের সংবিধান আগামী দিনে বাঁচানো যাবে না। তাই দেশ বাঁচানোর জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।