স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ অক্টোবর : বুধবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু । অনুষ্ঠান শুরুতে রাষ্ট্রপতিকে রিসা ও ত্রিপুরার তৈরি বাঁশের ভাস্কর্য তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, উপ মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী, মন্ত্রী রতন লাল নাথ, মন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায়। এদিন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স এলাকায় নব নির্মিত বিধায়ক আবাসের উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে ৭ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি।
এগুলি হল মুনপুই থেকে দামছড়া পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন, যতনবাড়ি থেকে মন্দিরঘাট ভায়া তীর্থমুখ সড়কের উন্নয়ন, পুষ্পবন্ত প্যালেসে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মানিক্য মিউজিয়াম ও কালচারাল সেন্টার, দরবার হলের শিল্যান্যাস, গুর্খাবস্তিতে মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিংয়ের শিল্যান্যাস, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ৬ ইউনিট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, ৯টি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট বালক ও বালিকা হোস্টেলের শিল্যান্যাস এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ আই আই টি আগরতলার শিল্যান্যাস। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রথমবার ত্রিপুরা সফরে এসে খুশী তিনি। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলিতে আসার ইচ্ছা ছিল তাঁর। এই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। একটা নতুন রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোন এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতি ভাবনাত্মক অনুরাগ। ভারত বিশ্বের পঞ্চম অর্থব্যবস্থায় শক্তিশালি দেশ হিসাবে উঠে এসেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ মিলিয়ান ডলারের অর্থব্যবস্থা বানানোর ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। রাজ্যের প্রতিভাবান ও কর্মঠ মানুষ , বিশেষ করে যুবদের কর্মদ্যোগ এবং নতুন সৃষ্টি এই লক্ষ্যে পৌছাতে ভূমিকা নেবে। এতে ত্রিপুরার যোগাযোগ, শিক্ষা , ন্যায় প্রতিষ্ঠা পুরোদমে শক্তিশালি হবে এবং রাজ্যের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি আরও মজবুত হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
স্বাক্ষরতার দৃষ্টি কোন থেকে ত্রিপুরা অগ্রনী রাজ্য গুলির মধ্যে অন্যতম। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, শিল্পকলার প্রতিষ্ঠান গুলিতে দেশ বিদেশ থেকে ছেলে মেয়েরা শিক্ষা নিতে আসেন বলে জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ত্রিপুরায় জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলান্যাস করে সন্তোষ ব্যক্ত করেন তিনি। এটা দেশের ২৫ তম জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়। বিগত তিন দশক ধরে জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও শিক্ষার বিকাশে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি সমগ্র দেশে একটা বিশেষ স্থান করে নেবে বলে আশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু । বিজ্ঞান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশ বিশ্বের মধ্যে একটা পৃথক পরিচিতি তৈরি করেছে। জাতীয় শিক্ষা নীতির ক্ষেত্রে ত্রিপুরার ট্রীপল আই টি – বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন মানদন্ড স্থাপন করবে বলে জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়ার উপর আলোকপাত করেন তিনি।
মাতা ত্রিপুরেস্বরীর পুন্য ভূমিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। সর্বাঙ্গীণ উন্নতিতে দেশের অন্যান্য রাজ্য গুলির সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলেছে ত্রিপুরা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, পরিকাঠামোর উন্নয়ন, জনজাতি উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য গুলির মত ত্রিপুরাও উন্নয়নের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে আছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা।
উত্তর পূর্বাঞ্চলের অস্টলক্ষ্মীর মধ্যে এক লক্ষ্মী ত্রিপুরা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রচার ত্রিপুরা থেকে শুরু করেছিলেন তিনি। এবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সেই ত্রিপুরা সফর দিয়েই উত্তর পূর্বাঞ্চলের যাত্রা শুরু করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁর জন্য রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে ত্রিপুরার উন্নয়নে কাজ করছে। দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরাকে তুলে ধরতে প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। উত্তর পূর্বাঞ্চলের গেইটওয়ে ত্রিপুরা। মহিলাদের স্বশক্ত করতে রাজ্যে ৩৫ হাজারে উপর স্ব সহায়ক দল মহিলা পরিচালিত রয়েছে। স্বশক্ত ভারত গড়ার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণের কাজ রাজ্যে হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক।
এদিনের অনুষ্ঠানে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি বলেন মহিলারা এগিয়ে গেলেই সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলির বিকাশের প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় রেল , সড়ক, জল ও বিমানপথে অগ্রগতিতে নতুন দিশা পাচ্ছে। ত্রিপুরার বিকাশের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।