আগরতলা। ১৮ নভেম্বর। জাতীয় মৎস্য চাষ উন্নয়ন বোর্ড ত্রিপুরাকে মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ পাহাড়ি ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য হিসাবে পুরস্কৃত করেছে। ১১ টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ২১ নভেম্বর ভুবনেশ্বরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই পুরস্কার তুলে দেবেন রাজ্য সরকারের হাতে। এই পুরস্কার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নয়। এই পুরস্কার রাজ্যের মানুষের কাজের ফল বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
এই সরকার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, স্বনির্ভর করা যায়। সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের ফলে লাভবান হয়েছে কৃষকরা। বর্তমানে কৃষকরা প্রতি কেজি ধানে আগের তুলনায় প্রায় সাত টাকা করে বেশি পাচ্ছে। পূর্বতন সরকার ক্ষমতায় থাকলে কৃষকরা ৭ টাকা লাভ করলে সাত বার মিছিলে যাওয়ার জন্য বলতো। সাতবার যেতে হতো পার্টি অফিসে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে কাউকে সাত বার পার্টি অফিস কিংবা মিছিলে যেতে হয় না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পুর নিগমের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিভিন্ন ওয়ার্ড গুলির বিজেপি প্রার্থিদের নিয়ে বড়জলা শনি মন্দির মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জন সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা বলেন তিনি।
বর্তমানে ত্রিপুরা নতুন দিশায় চলছে। আগে রাজ্যের মানুষ শাসকদল সিপিআইএম ও তার বিভিন্ন সংগঠনের মিছিল-মিটিংয়ের লাইনে ব্যস্ত থাকতো। এখন আর কাউকে লাইনে যেতে হয় না। প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কৃষকের কাছে ৬০০০ টাকা করে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গেছে। তার জন্য কাউকে কোন কমিশন দিতে হয় নি। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার মানুষের জন্য কি করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। আগে মানুষকে শুধুমাত্র আন্দোলনে ব্যস্ত করে রাখা হতো। এটা ত্রিপুরা রাজ্যে পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে ত্রিপুরার মানুষের মধ্যে স্বনির্ভরতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। নারীর সমিতির নামে নারীদের সবচেয়ে বেশি শোষণ করেছে কমিউনিস্টরা। সমগ্র দুনিয়াতে গরিবদের যদি কেউ শোষণ করে থাকে তা করেছে কমিউনিস্টরা। পূর্বতন সরকারের সময় স্ব-সহায়ক দল তৈরি করা হয়েছিল ৪ হাজার ৬১ টা। তার মধ্যে ১০০ কোটি টাকার অর্থনীতি হত। বর্তমানে রাজ্যের ২ লক্ষ ৭৮ হাজার মহিলা স্ব-সহায়ক দলের সাথে যুক্ত। স্ব-সহায়ক দল রয়েছে ২৬ হাজার ৬২ টি। আগে মাদার এস.এইচ.জি গুলি ছোট ছোট স্ব-সহায়ক দলগুলিকে ১২ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করত। বর্তমানে রাজ্য সরকার তা কমিয়ে ৭ শতাংশ করে দিয়েছে। দেশের মধ্যে একমাত্র ত্রিপুরা সরকার তা করেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভিশন ডকুমেন্ট এ বলা হয়েছিল ২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। সরকার আসার পর তা ১০০০ টাকা করা হয়েছে। ২০২২ এ ২০০০ টাকা ভাতা প্রদান করবে সরকার। ২৫ বছরের একটি প্রকল্পও রাজ্য বাসীর জন্য করা হয়নি। অটল জলধারা মিশন নামে প্রকল্প ঘোষণা করেছে সরকার। যারা ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারেনি তারা অন্য কিভাবে পৌঁছাবে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। তিন বছরের মধ্যে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার গরুকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে। এটা দেওয়ার পর বাছরি প্রসব করবে গরু। কোন রাজনৈতিক রঙ ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গ্রামীণ প্রকল্পে ঘর নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তির টাকা প্রদান করা হয়েছে। সিপিএম যারা করতেন তারা ঘর বেশি পেয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।কিছু কিছু লোক কলকাতা থেকে এসে কীর্তন করছে। ত্রিপুরাকে না চিনেই এরা ঘুরছে। সিন্ডিকেট, তোলাবাজ, ব্ল্যাকার, আবার কেউ গরু চুরি কাণ্ডে লিপ্ত মানুষেরা ত্রিপুরায় এসেছে। ত্রিপুরার পবিত্র ভূমিতে এই অপবিত্র লোকেরা বিচরণ করছে। এদের অধিকাংশ হত্যা, ধর্ষণ, এই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গের তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। সি বি আই তদন্ত করছে। এরা রাজ্যে আসছে মানুষকে রাজনীতি শেখাতে। এই রাজ্যকে বদনাম করার প্রয়াস নিয়েছে তারা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, তার ভাতিজা ও সাঙ্গোপাঙ্গ মিলে বিশ্বের সামনে ত্রিপুরাকে বদনাম করতে চাইছে। ত্রিপুরার মানুষ দাঙ্গাবাজ, উগ্রবাদী ও দুষ্ট বলে অভিহিত করছে এই বহি রাজ্য থেকে আসা নেতারা। বাইরে থেকে বসে রাজ্যকে বদনাম করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। ত্রিপুরার মানুষ তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না। বিপ্লব দেবকে বদনাম করতেই পারে। কিন্তু ৩৭ লক্ষ ত্রিপুরাবাসীকে বদনাম করলে ছেড়ে কথা বলা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর দেখানোতে সাথে রাজ্য সরকার কাজ করছে। এখন নতুন মানসিকতা নিয়ে ত্রিপুরা চলছে। সবকিছু হয়ে যায়নি। কিন্তু মানুষ আশা রাখে। ২৫ বছর সিপিএম মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট আদায় করেছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পর বিজেপির কার্যকর্তাদের বাছাই করে হত্যা , ধর্ষণ আক্রমণ করা হয়েছে। এরা ক্ষমার যোগ্য নয়। আগরতলা পুরো নিগমের নির্বাচনে তাদের জামানত জব্দ করে যোগ্য জবাব দেওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। এটা ত্রিপুরা অন্য কোন রাজ্য নয়। পরিশ্রমী মানুষ কষ্ট করে ত্রিপুরা কে তৈরি করেছে বলে জানান তিনি।বিশ্বাসের সঙ্গে এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করে সরকার। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। ২৫ বছর ত্রিপুরার মানুষকে আন্দোলনের নামে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। দিকভ্রান্ত করা হয়েছিল মানুষকে। ত্রিপুরা আর কিছুদিনের মধ্যেই দৌড়োবে। কোভিড আটকাতে পারেনি ত্রিপুরাকে। মোদি থাকলেই সমস্ত কিছু সম্ভব। নারী শক্তির কাছে আহ্বান জানান কলকাতা থেকে আগত অসুরের শক্তিদের দুর্গা হিসাবে বধ করার জন্য। এদের স্থান নেই ত্রিপুরাতে। তাদের স্থান একমাত্র জেলেই। নতুন দিসাতে ত্রিপুরা চলছে। ২৫ নভেম্বর সকলে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। যারা বিভ্রান্ত করার জন্য আসছে তাদের চিহ্নিত করার বার্তা দেন। বিজেপির কার্যকর্তা ও পৃষ্ঠা প্রমুখ উদ্দেশ্যে বলেন নিজেদের মধ্যে সমস্ত ভুল ভ্রান্তি দূর করে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ডাঃ দিলীপ দাস, বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস সহ বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ওয়ার্ডগুলির বিজেপি প্রার্থীরা।