Wednesday, November 12, 2025
বাড়িরাজ্যবিজেপি-র হাতে আক্রান্ত প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়

বিজেপি-র হাতে আক্রান্ত প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা। ৭ অক্টোবর :পশ্চিমবঙ্গের পাল্টা জবাব ত্রিপুরায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রাম ঠাকুর সংঘ এলাকা থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি সদর জেলা আরবান সভাপতি অসীম ভট্টাচার্য এবং প্রদেশ যুব মোর্চা সভাপতি তথা বিধায়ক সুশান্ত দেবের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল সংঘটিত হয়। মিছিলটি রাজধানীর মোটর স্ট্যান্ড এলাকায় আসতেই শাসক দলের কর্মী সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।

পুলিশের সামনেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদেশ কার্যালয় ভাঙচুর চালায়। ঘটনার সূত্রপাত, সোমবার দুর্যোগ-বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি-র দুই প্রতিনিধি। এক জন মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু এবং অপর জন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সবচেয়ে বেশি জখম হন খগেন। মারের চোটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে তাঁর মুখ থেকে। শঙ্করকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা হয়। শঙ্করের অভিযোগ, কয়েক জন ‘দিদি-দিদি’ বলতে বলতে পিছন থেকে তাঁদের আক্রমণ করেন। বর্তমানে খগেন এবং শঙ্কর হাসপাতালে রয়েছেন। খগেনের বাঁ চোখের নিচের হাড়ে আঘাত লেগেছে বলে জানা যায়। স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর তুঙ্গে উঠে। এরই মধ্যে পাল্টা জবাব দিতে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বিজেপি। পূর্ব আগরতলা থানার পুলিশ এবং মহারাজগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পরিস্থিতি।

পুলিশের বাধা ডিঙ্গিয়ে ভাঙচুর চালায় বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠে পুরুষ, মহিলা সকলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বন্ধ হয়ে পড়ে দোকানপাট। প্রদেশ যুব মোর্চা সভাপতি সুশান্ত দেব বলেন, সোমবার পশ্চিমবঙ্গে সাংসদ ও বিধায়কের উপর যে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেটা ভারতবর্ষের ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি। এটা কোনভাবেই বিজেপি এবং সব অংশের মেনে নিতে পারে না। কারণ সাংসদ খগেন মুর্মু একজন আদিবাসী নেতাও। তাই আগরতলা রাজপথে নেমে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের যে জঙ্গলের রাজ পশ্চিমবঙ্গে কায়েম করছে তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তিনি আরো দাবি করে বলেন আগামী ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গের পদ্মফুল ফুটানো হবে এবং সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিসর্জন হবে। আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে তিনি বার্তা দিয়ে বলেন সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না।

ত্রিপুরা থেকে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। সন্ত্রাস করে ত্রিপুরাতেও ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছিল সিপিআইএম। তারপর এই রাজ্যে ২০১৮ সালের পালা বদল হয়েছে। এদিকে নাগরাকাটায় ওই ঘটনার নিন্দা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘যে ভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা— যাঁদের মধ্যে এক জন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।’’ এদিকে ত্রিপুরার সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিপ্লব কুমার দেব মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে বিজেপির আক্রান্ত বিধায়ক এবং সংসদকে দেখতে হাসপাতাল যান। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে শারীরিক অবস্থার সম্পর্কে অবগত হন। পরে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে তিনি জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতা হারাবার আগাম বিদায় ঘন্টা শুনতে পেয়ে একপ্রকার সরকারিতন্ত্রকেও দলীয় তন্ত্রে পরিবর্তিত করে জঙ্গলরাজ, সন্ত্রাস ও রক্ত ঝরানোর রাজনীতিকে হাতিয়ার করেছেন। প্রতিদিন একেকটি কলঙ্কময় অধ্যায় রচিত হয়ে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। মানুষ আর পাশে নেই, তা বুঝতে পেরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীদের লেলিয়ে দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রতিদিন এভাবেই টুটি টিপে হত্যা করছে। জখম বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির হাসপাতালে মালদহ উত্তরের সাংসদকে দেখার পর তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলেন মমতা। কথা বলেন সাংসদের স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গেও। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে খুশি খগেনের পরিবার। তাঁরা জানান, কোথায় আঘাত পেয়েছেন সাংসদ, তার খোঁজ নিয়েছেন সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য