স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৪ আগস্ট : ১৫ অগস্ট সোমবার ভারতের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস। আর ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদ্যাপনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে আজাদী কা অমৃত মহোৎসব বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে। এর ব্যতিক্রম নয় ত্রিপুরা। সারা রাজ্য জুড়ে চলছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
স্বাধীনতার পঁচাত্তর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গোটা দেশে হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে রবিবার সকালে বিভিন্ন স্কুল সহ সামাজিক সংস্থার পক্ষ থেকে প্রভাত ফেরী সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন উমাকান্ত স্কুল, মহারানী তুলসী বালিকা বিদ্যালয় সহ ৬ টি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে এক শুভযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রভাত ফেরীতে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে ছাত্রীদের নিয়ে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রায় ছয়টি স্কুল অংশগ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হর ঘর তিরঙ্গা আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা রাজ্যের মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে পড়েছে।
এ ধরনের কর্মসূচির জন্য শিক্ষা দপ্তরকে এদিন সাধুবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। আরো বলেন, মানুষের মধ্যে দেশাত্মবোধক চিন্তাভাবনা করে তোলা হলো এই কর্মসূচি মূল উদ্দেশ্য। এদের মিছিলটি উমাকান্ত স্কুল থেকে শুরু হয়ে শহরে বিভিন্ন পদ পরিক্রমা করে রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গনে এসে প্রভাত ফেরী সমাপ্ত হয়। এদিন প্রভাত ফেরীতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষণীয়। এদিন প্রভাত ফেরিতে মুখ্যমন্ত্রীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী সহ দপ্তরের অধিকর্তা।
এদিকে আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসেবে সার্কিট হাউস স্থিত মূর্তি প্রাঙ্গনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব জে কে সিনহা। তিনি বলেন, সারাদেশে আজাদীকা অমৃত মহোৎসব পালন করা হয়। তাই এদিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কিট হাউস স্থিত গান্ধী মূর্তির পাদদেশে এই অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা গান্ধী মূর্তির পাদদেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। হাপানিয়া হাসপাতালের বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরা আজাদী কা অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে তিরঙ্গা মিছিল সংঘটিত করে। এদিন মিছিলে অংশ নেন হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মীরা। তাদের সকলের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। তারা এদিন দেশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। অপরদিকে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে এলবার্ট এক্কা পার্ক থেকে বাইসাইকেল মিছিল সংঘটিত হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার উদ্যোক্তারা
কমলপুর এ বি ভি পি ‘র উদ্যোগে রবিবার সকালে কমলপুর টাউন হল প্রাঙ্গনে এক তিরঙ্গা যাত্রার আয়োজন করা হয়। আজাদী কা অমৃত মহৎসব উপলক্ষে এই কর্মসূচি হাতে নেয় উদ্যোক্তারা। মিছিলটি কমলপুর শহরে বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে শেষ হয় কমলপুর কালীবাড়ি মাঠে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, প্রশান্ত সিনহা সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। মিছিলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষণীয়।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরার উদ্যোগে আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের উদ্যোগে এক সচেতনতা মূলক র্যা লির আয়োজন করা হয়। এইদিন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরার প্রাঙ্গণ থেকে এই র্যা লি শুরু হয়। র্যা লিতে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় স্বাস্থ মিশন ত্রিপুরার এমডি শুভাশিস দাস সহ অন্যান্যরা। এইদিনের র্যা লিতে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরার কর্মী সহ সাধারন মানুষ অংশগ্রহণ করে। জাতীয় স্বাস্থ মিশন ত্রিপুরার এমডি শুভাশিস দাস জানান জনগণকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা দিতে এই র্যা লির আয়োজন করা হয়েছে। একই সাথে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মসূচী সম্পর্কে জন সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য এই র্যা লির আয়োজন করা হয়েছে। সুস্থ মানুষ না থাকলে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা যায় না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সদর মহাকুমা শাসক প্রশাসনের উদ্যোগে রবিবার বসে আকো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সদর মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে এই বসে আকো প্রতিযোগিতার সূচনা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে একাধিক কর্মসূচী বাস্তবায়িত করেছে সদর মহকুমা প্রশাসন। আজকের দিনের শিশুরা স্বচ্ছ। তাই তাদের মানসিকতাও পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শনিবার থেকে রাজ্য জুড়ে মানুষ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেছেন। আগে ১৫ আগস্ট মানেই ছিল একটা দিন। সরকারী অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। চাকুরীজীবীরা ভাবত বন্ধের দিন। এখন সেই মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। দেশাত্ম বোধ মানুষের মধ্যে শানিত হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। এই পতাকার মাধ্যমে ১৩০ কোটি মানুষকে জরিয়ে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতি , ধর্ম , বর্ণ, মতাদর্শ ভিন্ন হলেও জাতীয় প্রতীকের ক্ষেত্রে সকলে এক রয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা বসে আকো প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে। পশ্চিম জেলা যুব বিষয়ক ক্রীড়া দপ্তরের উদ্যোগে দেশের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ওপেন ক্রস কান্ট্রি দৌড় প্রতিযোগিতার আয়জন করা হয় রবিবার। এইদিন রাজধানীর উমাকান্ত একাডেমী প্রাঙ্গণ থেকে এই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতি যোগিতা হয় পুরুষ ও মহিলা দুই বিভাগে। পুরুষ বিভাগে দৌড় প্রতিযোগিতা হয় ৫ কিলোমিটার। অপরদিকে মহিলা বিভাগে দৌড় প্রতিযোগিতা হয় ৩ কিলোমিটার। পতাকা নেরে এইদিনের দৌড় প্রতিযোগিতার সুচনা করেন পশ্চিম জেলার জেলা শাসক দেবপ্রিয়া বর্ধন। পশ্চিম জেলার জেলা শাসক জানান দেশ জুরে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব ও হর ঘর তেরঙ্গা কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। কাজের পাশাপাশি শরীর চর্চাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য। এইদিনের প্রতিযোগিতায় যুবক যুবতীরা উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করে।
দেশের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে এবং আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসাবে রবিবার ত্রিপুরা আরবান লাইভলিহুড মিশন ষ্টেট মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের উদ্যোগে এক মিছিলের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়। মিছিলের সূচনা করেন আগরতলা পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত। এইদিনের মিছিলে ত্রিপুরা আরবান লাইভলিহুড মিশন ষ্টেট মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মহিলারা জাতীয় পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণ করে। আগরতলা পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত জানান দেশের স্বাধীনতার ৭৫ তম বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এইদিনের মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এই মিছিলটি রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণ হয়ে আর.এম.এস চৌমুহনীতে গিয়ে শেষ হবে।
রবিবার তেলিয়ামুড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের উদ্যোগে আজাদী কা অমৃত মহোৎসবের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রভাত ফেরির আয়োজন করা হয়। বিধায়িকা কল্যাণী রায়ের হাত ধরে এই প্রভাত ফেরি অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এদিন বিদ্যালয়ের কচিকাঁচা পড়ুয়ারা বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে তেলিয়ামুড়া শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। এদিনের এই প্রভাত ফেরী’তে বিধায়িকা ছাড়াও পুর পিতা রূপক সরকার সহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণয় দেববর্মা সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ কচিকাঁচা পড়োয়ারা। এদিনের এই প্রভাত ফেরির রেলিটি তেলিয়ামুড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে তেলিয়ামুড়া শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে পুনরায় তেলিয়ামুড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এসে শেষ হয়।
অপরদিকে তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে নেতাজি নগর এলাকা থেকে এক পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই পদযাত্রায় ও বিধায়িকা কল্যাণী রায় সহ পুর পিতা সহ ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলদের উপস্থিতিতে এই পথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই পদযাত্রায় কচিকাচার বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে তেলিয়ামুড়ার বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে।
সেই সঙ্গে বনদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত “রান ফর গ্রীন ত্রিপুরা” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বনদপ্তরের উদ্যোগে বনদপ্তরের কর্মীরা, বি.এস.এফ, সি.আর.পি.এফ এবং বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এক ম্যারাথন রেলি অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রাঙ্গদা কলা কেন্দ্র থেকে রেলি শুরু হয়। বিধায়িকা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা বন আধিকারিক জয়া রাঘুল জিসান বি, মহকুমা বন আধিকারিক সাবির কান্তি দাস, পুর পিতা রূপক সরকার সহ অন্যান্যরা।
তেলিয়ামুড়া চাকমা ঘাট স্থিত ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস ১২ নং বাহিনীর মূল কার্যালয় থেকে এক বাইক রেলি অনুষ্ঠিত হয়। এই বাইক রেলিতে বাহিনীর জোয়ান সহ উচ্চ পদস্থ আধিকার অংশগ্রহণ করে।