স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৫ নভেম্বর: ক্রিজে যাওয়ার পরপরই ডাউন দা উইকেটে গিয়ে আলজারি জোসেফকে ছক্কা মারলেন লিয়াম লিভিংস্টোন। এক বল পরই শোধ তোলার সুযোগ পেলেন জোসেফ। কিন্তু তার আগুনে শর্ট বলে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিলেন নিকোলাস পুরান। পরের ওভারে গুডাকেশ মোটির বলে আবার তার ক্যাচ নিতে পারলেন না পুরান। শেষ নয় সেখানেই, কিছুক্ষণ পর লিভিংস্টোন জীবন পেলেন আবার। এমনিতেই ছোট পুঁজি, তার ওপর এত সুযোগ হাতছাড়া করলে সম্ভাবনা আর টিকে থাকে কীভাবে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজও পেরে উঠল না। পাঁচ ম্যাচের সিরিজি ইংল্যান্ড জিতে নিল প্রথম তিন ম্যাচেই। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে সময় শুক্রবার ভোরে শেষ হওয়া ম্যাচে ইংলিশদের জয় ৩ উইকেটে।ইংল্যান্ডের জয়ের সূত্র ছিল ঠিক আগের মতোই। টস জয়, আগে বোলিং, পাওয়ার প্লেতে সাকিব মাহমুদের দুর্দান্ত বোলিং, রান তাড়ায় জয়। তবে আগের দুই ম্যাচে আরও বড় লক্ষ্যে সহজে জিতলেও এবার ছোট লক্ষ্যে ম্যাচ জমে ওঠে বেশ।
সেন্ট লুসিয়ায় শুরুর ব্যাটিং ধসের পর লড়াই করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে তোলে ১৪৫ রান। পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট নেন সাকিব। শেষের দিকে জেমি ওভারটনের তিন উইকেটও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।রান তাড়ায় ইংলিশরা জয় পায় চার বল বাকি থাকতে। তিন বার জীবন পাওয়া লিভিংস্টোন খুব বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বটে। তবে ৩৯ রান করার পথে স্যাম কারানের সঙ্গে তার জুটি রান তাড়ায় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাখে বড় ভূমিকা।ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ শুরু হয় অনেক দেরিতে। লম্বা সময় ঢেকে রাখা উইকেটে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বিপাকে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ওভারেই হারায় তারা প্রথম উইকট। ব্র্যান্ডন কিংয়ের চোটে একাদশে ফেরা শেই হোপকে রান আউট করে দেন জ্যাকব বেথেল।
সেটি কেবলই শুরু। নিজের প্রথম তিন ওভারেই সাকিব মাহমুদ ফেরান এভিন লুইস, রোস্টন চেইস ও শিমরন হেটমায়ারকে। মাঝে নিকোলাস পুরানকে এক ছক্কার পরই থামান জফ্রা আর্চার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেট হারায় ৩৭ রানে।সিরিজের তিন ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে সাকিবের উইকেট ৮টি!সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম দুই ব্যাটসম্যান রভম্যান পাওয়েল ও রোমারিও শেফার্ড আরও একবার উদ্ধার করেন দলকে। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন ৭৩ রান যোগ করেন ৫৭ বলে।১৫ ওভারে ১১০ রান নিয়ে শেষে ঝড়ের জন্য তৈরি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এবার বাধা হয়ে দাঁড়ান জেমি ওভারটন। সাত বলের তিনি ফিরিয়ে দেন পাওয়েল, শেফার্ড ও মোটিকে।
চার ছক্কায় ৪১ বলে ৫৪ করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক পাওয়েল, ২৮ বলে ৩০ শেফার্ড। ক্যারিবিয়ান ইনিংস দিশা হারায় আবার।নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা আলজারি জোসেফ ৯ নম্বরে নেমে অপরাজিত ২১ রান করে দলকে নিয়ে যান ১৪৫ রানে।রান তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুরুটাও ছিল না ভালো। পাওয়ার প্লেতে হারায় তারা তিন উইকেট।আগের দুই ম্যাচে জয়ের তিন নায়ক ফিল সল্ট, জষ বাটলার ও জ্যাকব বেথেল এবার আউট হন প্রত্যেকেই চার রান করে।
৩২ রান করে শুরুর সময়টায় দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন উইল জ্যাকস। তিনি যখন বিদায় নিলেন, ১১ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ৭৫। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন কারান ও লিভিংস্টোন।অথচ ৬ কিংবা ৮ রানে লিভিংস্টোন জীবন না পেলে বড় বিপদে পড়তে পারত ইংলিশরা। এমনকি ২১ রানেও যদি আকিল হোসেনের বলে তার ক্যাচটি নিতে পারতেন হেটমায়ার, সুযোগ থাকত তখনও।তৃতীয়বার জীবন পাওয়ার পরই জোসেফের এক ওভারে দুই চার এক ছক্কায় ম্যাচের উত্তেজনা শেষ করে দেন লিভিংস্টোন।
কাজ তিনি শেষ করে ফিরতে পারেননি। বিদায় নেন ২৮ বলে ৩৯ রান করে। কারান আউট হয়ে যান ২৬ বলে ৪১ করে।এরপর শেষের আনুষ্ঠানিক সেরে নেন ড্যান মুজলি ও রেহান আহমেদ। বিফলে যায় দারুণ বোলিংয়ে আকিল হোসেনের চার উইকেট।তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টি, সফরের ছয় ম্যাচে এখনও উইকেটের দেখা পাননি কারান। কিন্তু চার ইনিংস ব্যাট করে রান করলেন ৩৭, ৫২, ৪০ ও ৪১।সেন্ট লুসিয়ায় সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ শনি ও রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪৫/৮ (লুইস ৩, হোপ ৪, পুরান ৭, চেইস ৭, হেটমায়ার ২, পাওয়েল ৫৪, শেফার্ড ৩০, মোটি ০, জোসেফ ২১*, আকিল ৮*; আর্চার ৪-০-২৫-১, সাকিব ৪-০-১৭-৩, রেহাদ ৩-০-২৯-০, ওভারটন ৪-০-২০-৩, কারান ৩-০-২৪-০, লিভিংস্টোন ১-০-১৪-০, মুজলি ১-০-১০-০)।
ইংল্যান্ড: ১৯.২ ওভারে ১৪৭/৭ (সল্ট ৪, জ্যাকস ৩২, বাটলার ৪, বেথেল ৪, কারান ৪১, লিভিংস্টোন ৩৯, মুজলি ৮, ওভারটন ৪*, রেহান ৫*; শেফার্ড ৩-০-২০-০, জোসেফ ৪-০-৩৭-১, আকিল ৪-০-২২-৪, হাইন্ডস ২.২-০-৩০-১, চেইস ২-০-১১-০, মোটি ৪-০-২৭-১)।
ফল: ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজের তিনটি শেষে ইংল্যান্ড ৩-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব মাহমুদ।