স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৫ নভেম্বর: পারফরম্যান্সে ভাটার টান স্পষ্ট। চেনা ধার দেখা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে নেতৃত্বও ছাড়তে হয়েছে। সব মিলিয়ে শেষের ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন টিম সাউদি। এবার তিনি সাড়াও দিয়ে ফেললেন সময়ের ডাকে। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন নিউ জিল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সামনের তিন ম্যাচের সিরিজ দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন সাউদি। নিউ জিল্যান্ড যদি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে পারে, তাহলে আরেকটি ম্যাচ দীর্ঘায়িত হবে সাদা পোশাকে তার ক্যারিয়ার। তবে কিউইদের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা সামান্যই।
সাদা বলের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি ৩৬ ছুঁইছুঁই বয়সী বোলার। ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তিনি খেলে যাবেন।২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ১৭ উইকেট নিয়ে নজর কাড়ার কদিন পরই টেস্ট দলে ডাক পান সাউদি। ওই বছরে মার্চে ১৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেপিয়ারে টেস্ট অভিষেক তার।অভিষেকে প্রথম ইনিংসেই শিকার করেন ৫ উইকেট। দলের পরাজয়ের আগে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট হাতে ৯ ছক্কায় ৪৮ বলে ৭৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দ্রুতই তিন সংস্করণে দলের বড় ভরসা হয়ে ওঠেন।
সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই খেলেই বিদায় নিচ্ছেন তিনি। রেকর্ড-অর্জন তার কম নেই। তবে বিদায়ের ঘোষণায় বললেন স্রেফ দেশের হয়ে খেলতে পারার তৃপ্তির কথাই।“বেড়ে ওঠার সময় আমার কেবল একটিই স্বপ্ন ছিল, নিউ জিল্যান্ডের হয়ে খেলা। ব্ল্যাক ক্যাপদের হয়ে ১৮ বছর খেলতে পারা আমার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান ও প্রাপ্তি। তবে যে খেলাটা আমাকে এত কিছু দিয়েছে, সেখান থেকে সরে দাঁড়ানোর উপযুক্ত সময় মনে হচ্ছে এখনই।”“টেস্ট ক্রিকেট সবসময়ই আমার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে। এত বছর আগে যে দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল, সেই একই দলের বিপক্ষে এত বড় সিরিজ দিয়ে এবং যে তিনটি মাঠ আমার কাছে অবিশ্বাস্যরকমের স্পেশাল, সেখানে খেলে বিদায় নিতে পারাটা আমার কাছে মনে হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত।”
বিদায়ী সিরিজে একটি মাইলফলকের হাতছানি থাকবে সাউদির। নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৪০০ টেস্ট উইকেট পূরণ করতে তার প্রয়োজন আর ১৫ উইকেট।সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অবশ্য তার খুব একটা সুবিধের নয়। সবশেষ ১০ টেস্টে উইকেট নিতে পেরেছেন মোটে ১৫টি। একটি ইনিংসে দুই উইকেট পাওয়া ছাড়া অন্য কোনো ইনিংসে একাধিক শিকার ধরতে পারেননি। সবশেষ ভারত সফরে দুই টেস্ট খেলে উইকেট নিতে পারেন তিনটি। অবশ্য তিনটি উইকেটই দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তবে দেশের মাঠে তিনি সবসময়ই কার্যকর বোলার। সুইং আর বাড়তি বাউন্সে শেষ সিরিজে জ্বলে উঠতে পারলে মাইলফলকে পৌঁছে যাওয়াটা অসম্ভব নয়।সেটি যদি নাও হয়, তবু নিউ জিল্যান্ড ও বিশ্ব ক্রিকেটে কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন সাউদি। টেস্টে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮৫ উইকেট তার, ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২১টি আর টি-টোয়েন্টিতে ১৬৪ উইকেট নিয়ে তিনিই সবার ওপরে।তিন সংস্করণ মিলিয়ে তার উইকেট ৭৭০টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ৭০০ উইকেট নেই আর কারও।ব্যাট হাতেও তিনি অবদান রেখেছন ক্যারিয়ারজুড়ে। টেস্টে ৭ ফিফটিতে রান করেছেন ২ হাজারের বেশি। অভিষেক টেস্টে যে ছক্কার ঝলক দেখিয়েছিলেন, সেটা ধরে রেখেছেন পরেও।
৯৩টি ছক্কা এসেছে তার ব্যাট থেকে। টেস্ট ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি ছক্কা মারতে পেরেছেন কেবল আর পাঁচ জন। অন্তত ২ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইনিংসপ্রতি ছক্কার হারে তিনিই সবার ওপরে।নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের সেরা সাফল্যেও তার ছিল বড় অবদান। ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে চারটিসহ ম্যাচে শিকার করেছিলেন পাঁচ উইকেট।সবশেষ ভারত সফরের আগে নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন তিনি। ১৪ টেস্ট, ১ ওয়ানডে ও ২৯ টি-টোয়েন্টিতে তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।‘
তার অভিষেকের পর থেকে এখনও পর্যন্ত নিউ জিল্যান্ডের ১৩৭ টেস্টের ১০৪টিই খেলেছেন সাউদি। একজন পেসারের জন্য যা প্রায় অবিশ্বাস্য। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ৩৯১ ম্যাচ, নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের মধ্যে যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।বিদায়ের ঘোষণার দিনে সাউদির সেই দীর্ঘ পথচলা, তার লড়িয়ে মানসিকতা ও দলের প্রতি প্রশ্নাতীত নিবেদনের কথা তুলে ধরলেন কোচ গ্যারি স্টেড।
“টিম সাউদির স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তা অসাধারণ। অবিশ্বাস্যরকমের লড়াকু এক ক্রিকেটার সে এবং খুব কম সময়ই চোটে পড়েছে। এই দলকে, দলের পারফরম্যান্স ও মর্যাদাকে সযত্নে লালন করে সে এবং তার অভাব অনুভূত হবে দলীয় আবহে।”“লম্বা ক্যারিয়ারের পর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এখন তার প্রাপ্য এবং সামনের বছরগুলোয় সে এই খেলায় তার প্রভাব ও অর্জনগুলোর দিকে ফিরে তাকাবে দারুণ ইতিবাচকতায়।”