স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১১ নভেম্বর: পন্টিংয়ের মন্তব্য ছিল মূলত কোহলির টেস্ট সেঞ্চুরির খরা নিয়ে। আইসিসির চুক্তিবদ্ধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ‘আইসিসি রিভিউ’ আয়োজনে ক্রিকেট বিশ্বের নানা কিছু নিয়ে অভিমত জানান সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। সেখানেই তিনি বলেন, “ভিরাটের একটি পরিসংখ্যান সেদিন দেখলাম যে, গত পাঁচ বছরে সে স্রেফ দুটি টেস্ট শতরান করেছে। পরিসংখ্যানটিকে আমার ঠিক মনে হয়নি। তবে এটা যদি ঠিক হয়, তাহলে ব্যাপারটি নিয়ে দুর্ভাবনার কারণ আছে। অন্য কেউ যদি পাঁচ বছরে দুটি শতরান করত, তাহলে তাকে হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতেই দেখা যেত না।”পন্টিংয়ের দেখা সেই পরিসংখ্যানে ভুল কিছু নেই। ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের পর থেকে এই পর্যন্ত ৩৪ টেস্টে সত্যিই কোহলি সেঞ্চুরি স্রেফ দুটি। এই সময়ে তার ব্যাটিং গড় মোটে ৩১.৬৮।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই সিরিজ শেষে তার টেস্ট ব্যাটিং গড় ছিল ৫৫ ছুঁইছুঁই। কমতে কমতে এখন তা হয়েছে ৪৭.৮৩।এই সময়টায় ভারতের হয়ে ৩২ টেস্টে ৬ সেঞ্চুরি করেছেন রোহিত শার্মা, ২৯ টেস্টে ৫টি শুবমান গিল, ২৭ টেস্টে ৪টি করেছেন রিশাভ পান্ত। ১৪ টেস্টেই ৩ সেঞ্চুরি করেছেন ইয়াসাসভি জয়সওয়াল, ১৭ টেস্টে ৩টি লোকেশ রাহুল। এমনকি রাভিন্দ্রা জাদেজাও ২৯ টেস্ট খেলে ৩ সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। কোহলির সমান ২ সেঞ্চুরি করেছেন রাভিচান্দ্রান অশ্বিন।
পরিসংখ্যানের পাশাপাশি কোহলির ব্যাটিং ও আউট হওয়ার ধরন নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তিনি যে সেরা সময়কে পেছনে ফেলে এসেছেন, এটি ফুঠে উঠছে তার ব্যাটিংয়ে।সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর কোহলি ও রোহিতের ফর্ম নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে চর্চাও হচ্ছে প্রচুর। ভারতের হোয়াইটওয়াশড হওয়া এই সিরিজে ৬ ইনিংস মিলিয়ে কোহলি করেছেন ৯৩ রান, রোহিত ৯১। সামনের অস্ট্রেলিয়া সফরে তারা কেমন করবেন, এটা নিয়ে অনেকের মনেই জাগছে সংশয়।
তবে সেই সংশয় নেই গাম্ভিরের মনে। অস্ট্রেলিয়া সফরে রওনা হওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কোচ পাত্তাই দিলেন না পন্টিংয়ের মন্তব্যকে।“কোনো দুর্ভাবনা নেই (কোহলি-রোহিতকে নিয়ে)। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে পন্টিংয়ের এত ভাবনা কেন? তার উচিত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করা। আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই (ওই দুজনকে নিয়ে)। ওরা দুজন অবিশ্বাস্যরকমের কঠিন মানসিকতার, ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য অনেক অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।”
“আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ওরা এখনও কঠোর পরিশ্রম করে, এখনও তাড়না আছে, অনেক কিছু অর্জন করতে চায়। এটিই আসল ব্যাপার। ড্রেসিং রুমে তাড়না থাকাই আমার কাছে ও গোটা দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। গত সিরিজে যা হলো, এরপর সবার ভেতর অনেক ক্ষুধা আমি দেখতে পাচ্ছি।”রোহিতকে নিয়ে অবশ্য ফর্মের পাশাপাশি আলোচনা চলছে আরেকটি বিষয়েও। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য পার্থে প্রথম টেস্টে ভারতীয় অধিনায়ক নাও থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। দল অস্ট্রেলিয়ায় রওনা হবে সোমবার। সেই বিমানে রোহিত থাকবেন কি না, তা নিশ্চিত করা হয়নি।
এই অনিশ্চয়তায় বিরক্ত হয়ে কিংবদন্তি সুনিল গাভাস্কার কদিন আগে বলেন, সহ-অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহকে গোটা সফরের জন্য অধিনায়ক করা উচিত, রোহিত পরে যোগ দিলেও শুধু ক্রিকেটার হিসেবেই খেলানো হোক।গাম্ভির সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, রোহিতের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও।“এই মুহূর্তে কোনো কিছু নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সময় হলেই আমরা জানাব। আশা করি, তাকে পাওয়া যাবে (পার্থ টেস্টে)। তবে সিরিজের শুরুতে আমরা সবকিছুই জেনে যাব।”শেষ পর্যন্ত রোহিত না খেলতে পারলে বিকল্পের অভাব দলে দেখেন না কোচ। বিশেষ করে, লোকেশ রাহুলের ওপর তার ভরসা অগাধ।
“(আভিমান্যু) ইশ্বরান আছে সেখানে, কেএল (লোকেশ রাহুল) আছে। কেএল ওপেন করতে পারে, তিনে খেলতে পারে এবং ছয় নম্বরেও খেলতে পারে। এই ধরনের কাজ করতে যথেষ্ট প্রতিভা লাগে। কয়টা দেশে এরকম ক্রিকেটার আছে যে, ওপেন করতে পারে, আবার ছয়েও খেলতে পারে?”“রোহিতকে পাওয়া না গেলে প্রথম টেস্টের কাছাকাছি সময়ে গিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যথেষ্ট বিকল্প আছে। এমন নয় যে বিকল্প নেই। স্কোয়াডে বেশ কজনই আছে। প্রথম টেস্টের কাছাকাছি সময়ে গিয়ে আমরা পরিকল্পনা করব এবং সম্ভাব্য সেরা একাদশই খেলাব, যারা আমাদের জন্য কাজটি করতে পারবে বলে আশা করি।”
নিউ জিল্যান্ডের কাছে দেশের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর গাম্ভির নিজেও প্রবল চাপে আছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে তো তাকে স্রেফ ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে স্বভাবজাতভাবেই সেসবকে গোনায় ধরছেন না গাম্ভির।“সামাজিক মাধ্যম কি পার্থক্য গড়ে দেয়? আমি মোটেও উত্তপ্ত অবস্থায় নেই। ড্রেসিং রুমে কঠিন মানসিকতার ক্রিকেটার আছে। ওদেরকে কোচিং করানো বড় সম্মান।”