স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৬ জুলাই: স্কিলের লড়াই তো ছিলই, ফিটনেসের পরীক্ষাও ছিল। আর ছিল শারীরিক সক্ষমতার প্রমাণ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। সবকিছু মেলে ধরেই জয় আদায় করে নিয়েছে স্পেন। তবে কোচের বেশি ভালো লেগেছে তার দলের মানসিকতা। স্পেনের ফুটবলাররা যেভাবে মন উজাড় করে খেলে চলেছে, তাতে দল নিয়ে দারুণ গর্বিত কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে।
স্টুর্টগার্টে শুক্রবার জার্মানি-স্পেনের কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচটি রূপ নিয়েছিল যেন এক যুদ্ধের। প্রবল সেই লড়াইয়ে ঘরের দর্শকদের সমর্থনে মাঠে নামা জার্মানিকে হারিয়ে ইউরোর সেমি-ফাইনালে পৌঁছে গেছে স্পেন। রোমাঞ্চকর ম্যাচটি টাইব্রেকারে যাওয়ার মুখে ২-১ গোলে জিতে নিয়েছে দে লা ফুয়েন্তর দল।এই ম্যাচকে বলা হচ্ছিল ফাইনালের আগে ফাইনাল। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় আসরের সেরা দুটি দল মুখোমুখি হয়েছিল এখানে। সেই প্রত্যাশা পূরণ করে ম্যাচটিও জমে ওঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে। শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই শেষ চারে পা রাখে স্পেন।
গ্রুপ পর্যায়ে তিনটি জয় পাওয়া একমাত্র দল ছিল তারা। এরপর শেষ ষোলোয় তো জর্জিয়াকে একরকম উড়িয়েই দেয় তিন বারের চ্যাম্পিয়নরা। এরপর জার্মানির এই কঠিন বাধাও পেরিয়ে গেল। ফুটবলারদের তাড়না ও মানসিকতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ঝরল কোচের কণ্ঠে।“এই দলকে নিয়ে আমি গর্বিত, এতটা নিবেদিত ওরা… আমাদের দেশ, আমাদের সমাজের জন্য ওরা উদাহরণ এবং প্রতিটি ক্রীড়াবিদ, ছেলে হোক বা মেয়ে, যারা লড়াই করতে চায় এবং প্রতিটি দিন উন্নতি করতে চায়, প্রতি দিন একটু হলেও আগের চেয়ে ভালো হতে চায়, তাদের সবার জন্য উদাহরণ ওরা।”
“এই দল হৃদয় দিয়ে ফুটবল খেলে এবং ওদেরকে খুব ভালোভাবে চিনি আমি। প্রতিটি দিন আরও ভালো হয়ে ওঠার তাড়না ও আকাঙ্ক্ষা ওদের আছে। উন্নতির চেষ্টায় কখনোই ক্লান্ত হয় না ওরা এবং ওদেরকে কোচিং করাতে পেরে আমি গর্বিত।”ম্যাচের শুরু থেকেই শারীরিক সংঘাত দেখা গেছে অনেক। ম্যাচের শুরুর দিকেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রি। পরের সময়টায় শারীরিক লড়াই দেখা যায় আরও। জার্মানির ২২ আর স্পেনের ১৭টি মিলিয়ে ম্যাচে মোট ফাউল হল ৩৯টি। রেফারি হলুদ কার্ড দেখান দুই দল মিলিয়ে ১৩টি। শেষ সময়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ স্প্যানিশ ডিফেন্ডার দানি কার্ভাহাল।
এমনিতে স্পেন গতিময় ও নান্দনিক ফুটবলই খেলে আসছে এই টুর্নামেন্টে। তবে প্রয়োজনে শারীরিক ফুটবলের পরীক্ষা দিতেও আপত্তি নেই কোচ দে লা ফুয়েন্তের।“আমি আশির দশকে খেলেছি… যদি আশির দশকের ভিডিও দেখতে চান এবং জানতে চান যে, সেই সময়টায় কীভাবে খেলা হতো ফুটবল… মোটেই ভড়কে যাব না। কি চান আপনি? আমার এক বন্ধু আছে যে বলে, ‘মাঠে নেমে কি চাও তুমি, তোমাকে চুমু দেবে?’ ফুটবল এমনই।”
“এসব নিয়ে (শারীরিক লড়াই) আমি ভীত নই। এই ম্যাচ সবাইকে সামর্থ্যের চূড়ায় নিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষ দলের কাঠিন্য নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই আমার। দল হিসেবে আমরা কী করেছি, সেটা প্রশংসাই করি।”জার্মান-বাধা পেরোনোর পর স্পেনের অপেক্ষায় এবার আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলবারের সেমি-ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। কোয়ার্টার-ফাইনাল জয়ের উৎসব তাই দীর্ঘায়িত হচ্ছে না খুব একটা। দলীয় একতা আর বন্ধুত্বের ভেলায় ফাইনালের ঠিকানা পেতেও আত্মবিশ্বাসী কোচ।
“এই পর্যন্ত আসতে পারায় আমরা খুশি। তবে আমাদের জানা আছে, পরের দিনটি ভিন্ন এবং আরেকটি ম্যাচ অপেক্ষায় আছে। কাজেই আমরা খুশি, তবে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছি না, আবেগ নিয়ন্ত্রণেই আছে।”“আমরা দেখব, কত দূর যেতে পারি। পারস্পরিক সাহচর্য ও দলীয় মূল্যবোধের দিক থেকে এই দল দারুণ উদাহরণ মেলে ধরছে এবং তাতে আমি গর্বিত। ফুটবলারদের মানের পাশাপাশি এটিকে আমি খুবই গুরুত্ব দেই।”