স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২২ ডিসেম্বর: স্যামসনের প্রতিভা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে চর্চা হয়ে আসছে সেই বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই। বিশেষ করে আইপিএলে তিনি অনেক বছর ধরেই বড় এক নাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পদচারণা খুব একটা পড়েনি। অনেক তারকার ভিড়ে জাতীয় দলে সুযোগ খুব একটা পাননি। অনেক সময় তাকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলেও প্রশ্ন উঠেছে ভারতীয় ক্রিকেটে।ভারতীয় দলে অবশ্য এক সময় টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা ভালোও করতে পারছিলেন না তিনি। তবে ওয়ানডেতে যখনই তাকে খেলানো হয়েছে, বেশির ভাগ সময় পারফর্ম করেছেন। তার পরও নিয়মিত ক্রিকেটাররা দলে ফেরায় সুযোগ খুব বেশি পাননি তিনি।২০১৫ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক তার ভারতের হয়ে। খেলেছেন এখনও পর্যন্ত ২৪ ম্যাচ। ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন কেবল ১৬টি। এই ছোট ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তটি এলো বৃহস্পতিবার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে উপহার দিলেন ১১৪ বলে ১০৮ রানের ইনিংস।
পার্লের বোল্যান্ড পার্কে স্যামসনের সেঞ্চুরি ও তিলাক ভার্মার সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ১১৬ রানের জুটিতে ২৯৬ রান তোলে ভারত। পরে বোলারদের নৈপুন্যে ভারত ৭৮ রানের জিতে সিরিজ জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে।ম্যান অব দা ম্যাচ স্যামসনই। ভারতের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটি যখন করলেন, বয়স হয়ে গেছে ২৯!পরে তিনি বললেন, অনেক পরিশ্রমের ফসল এই শতরান।“খুবই ইমোশনাল ইনিংস এটি। শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক কাজ করতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম, অনেক কষ্ট করেছি।”“নতুন বলে ওরা ভালো বল করেছে। বল পুরোনো হওয়ার পর ব্যাট করা অনেকটা কঠিন হয়ে ওঠে আরও। তবে তিলাকর সঙ্গে আমার জুটিতে আমরা মোমেন্টাম পেয়ে যাই।”এ দিন পঞ্চম ওভারে উইকেটে গিয়ে দলের ইনিংসটাকে টেনে নেন স্যামসন। আইপিএলে তাক ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে দেখা যায় নিয়মিত। কিন্তু এই ম্যাচে উইকেট ও পরিস্থিতির দাবি মেটান দারুণভাবে। দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড হয়ে ফিফটি করেন ৬৬ বলে। সেখান থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে বল লাগে তার আর ৪৪টি।শেষ পর্যন্ত ইনিংসটি দলকে জেতায় সহায়তা করেছে বলে স্যামসন আরও বেশি খুশি।“দারুণ গর্বিত আমি, বিশেষ করে ম্যাচের ফল শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে। অনেক দিন ধরেই অনেক কষ্ট করছিলাম।”
“এই সংস্করণে উইকেট বোঝার ও বোলারদের মানসিকতা পড়ার সময় একটু বেশিই মেলে। টপ অর্ডারে ব্যাট করতে পারলে বাড়তি ১০-২০ ডেলিভারি পাওয়া যায় বুঝে উঠতে। সিনিয়র ক্রিকেটাররা একটি উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের মান। এখন জুনিয়ররাও উঠে আসছে এবং তাদের কাজটা করছে।”অভিষেক ওয়ানডেতে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনে নেমে ৪৬ করেছিলেন স্যামসন। এরপর বেশির ভাগ সময় পাঁচ-ছয়ে খেলতে হয়েছে তাকে। এই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটি ওয়ানডে তিনে নেমে আউট হন ৯ রানে। পরের ম্যাচে চারে নেমে করেন ৪১ বলে ৫১। এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সিরিজে প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাননি। পরেরটিতে পাঁচে নেমে আউট হন ১২ রানে। শেষ ম্যাচে তিনে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগালেন দারুণভাবে।দলে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়া ও সুযোগ পেলেও ওপরে ব্যাট করতে না পারার পেছনে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল মনে করিয়ে দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের বাস্তবতা।“সাঞ্জুর (স্যামসন) জন্য খুবই সন্তুষ্ট। আইপিএলে সে অসাধারণ এক পারফরমার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে পারিনি। তিনে খেলাতে পারিনি, কারণ ওয়ানডে দলের মহীরূহ ব্যাটসম্যানরা খেলে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনগুলোয়। ভালো লাগছে যে এখানে সে সুযোগটা লুফে নিয়েছে।”টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ শেষে এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে ভারতীয় দল।