Sunday, January 26, 2025
বাড়িখেলারিয়ালের ‘তুর্কি মেসি’কে চিনে নিন

রিয়ালের ‘তুর্কি মেসি’কে চিনে নিন

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৭ জুলাই: রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছেন ‘মেসি’! একটু চমকে ওঠার মতো খবরই বটে। তবে বার্সেলোনা সমর্থকদের এতে মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। ইন্টার মায়ামিকে বাদ দিয়ে আর্জেন্টাইন মহাতারকা বার্সার ‘চিরশত্রু’ রিয়ালে যাননি। যিনি রিয়ালে গেছেন, তিনি অন্য এক মেসি। এ মেসি ‘তুর্কি মেসি’!গত দুই দশকে লিওনেল মেসি ছাড়াও দেখা মিলেছে আরও অন্তত আধা ডজন ‘মেসি’র। নাহ্‌, এখানে মেসি নামের অন্য খেলোয়াড়ের কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে তাঁদের কথা, যাঁরা নিজের নামের সঙ্গে ‘মেসি’ জুড়েছেন মূলত বিশেষণ হিসেবে। ইরানিয়ান মেসি, জার্মান মেসি, স্কটিশ মেসি, জর্জিয়ান মেসি এবং মিসরীয় মেসি—এমন মেসির আবির্ভাব ঘটেছে প্রায় নিয়মিত বিরতিতে।তাঁদের মধ্যে অবশ্য অল্প কজনই এই নামের সার্থকতা রাখতে পেরেছেন। সরদার আজমুন, মারকো মারিন এবং রায়ান গাউল্ডরা মেসি বিশেষণের চাপ থেকে বের হতেই পারেননি, হারিয়ে গেছেন। নামের সঙ্গে মেসি বিশেষণ নিয়েও যাঁরা নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পেরেছেন, তাঁদের অন্যতম ‘মিসরীয় মেসি’ অর্থ্যাৎ মোহাম্মদ সালাহ। ‘মেসি’ বিশেষণের মান রেখে ২০১৭ সালের পর বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সালাহ।

মেসি বিশেষণ নিয়ে ফুটবল মঞ্চে অবির্ভাবের ধারা অবশ্য এখনো শেষ হয়ে যায়নি; বরং এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন নাম। দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক কোনো খেলোয়াড় যিনি ড্রিবলিংয়েও দারুণ, এমন ফুটবলারদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে মেসির নাম। সে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ‘তুর্কি মেসি’ খ্যাত আর্দা গুলের। যাঁকে নিয়ে ইউরোপিয়ান পরাশক্তিগুলোর মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল। কদিন আগেও শোনা যাচ্ছিল আর্সেনালে যেতে পারেন ১৮ বছর বয়সী এই উঠতি তারকা। তবে নতুন খবর হচ্ছে, আর্সেনাল নয়, তুর্কি মেসিকে কিনে নিয়েছে রিয়াল।মেসির মতো কারও সঙ্গে তুলনাটা বরাবরই চাপের। তবে সবাইকে তো আর মেসির সঙ্গে তুলনা করা হয় না! বিশেষ কেউ হলেই কেবলই এই তুলনাটা সামনে আসে। গুলারও তেমনই একজন। নয়তো রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে ফেনেরবাচে থেকে এতটা মরিয়া হয়ে নিশ্চয় নিয়ে আসত না। রিয়াল বা আর্সেনাল ছাড়াও গুলেরকে নিয়ে আগ্রহ ছিল বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, নিউক্যাসল এবং পিএসজির মতো ক্লাবগুলোর।প্রতিদ্বন্দ্বীদের আগ্রহ বাড়তে দেখেই সম্ভবত তড়িঘড়ি করে তাঁকে দলে ভেড়ানোর আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলল রিয়াল। রিয়ালের সঙ্গে গুলারের চুক্তি ছয় বছরের।
ফেনেরবাচের হয়ে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৩২ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন গুলের, ২০২২ সালে জাতীয় দলের হয়ে গুলের খেলেছেন ৪ ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোতেই নিজের জাত চিনিয়েছেন তুর্কি ফুটবলার।তবে এটাও সত্যি যে ইউরোপের বাইরের ক্লাবে খেলার কারণে আলোচনায় আসতে একটু দেরিই হয়েছে তাঁর। ফেনেরবাচের হয়ে ২০২১ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয়েছে গুলেরের। এরপর ২০২২ সালের মার্চে তুরস্কের সুপার লিগে নিজের গোলের খাতা খোলেন গুলের, যা তাঁকে এনে দিয়েছে ক্লাবের সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতার মার্যাদাও। যখন গুলের নিজের প্রথম গোলটি করেন, তখনো ১৭তম জন্মদিন উদ্‌যাপনে তাঁর বাকি ছিল ১৬ দিন। সুপার লিগে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৮৭ মিনিট খেলে ৭ গোল এবং ৭টি অ্যাসিস্ট করেছেন এই তরুণ তুর্কি।

ফেনেরবাচের হয়ে তাঁর উত্থান এতটাই দুর্দান্ত ছিল যে অল্প সময়ের মধ্যে পেয়ে যান ক্লাবের ১০ নম্বর জার্সিও। ফেনেরবাচের মর্যাদাপূর্ণ এই জার্সির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তুনকে সানিল, রবিন ফন পার্সি, মেসুত ওজিল এবং ক্লাব কিংবদন্তি অ্যালেক্সের নাম। অ্যালেক্সকে দেখেই মূলত ফুটবলের পথে যাত্রা শুরু করেন গুলের। ব্রাজিলিয়ান এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ফেনেরবাচের হয়ে ৩৪৪ ম্যাচে ১৭১ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছিলেন আরও ১৩৬ গোলে। ক্লাবের হয়ে অবদানের জন্য তাঁর ভাস্কর্যও বানিয়েছে ফেনেরবাচে। অ্যালেক্সকে দেখে পথচলা শুরু করলেও সেখানেই নিজেকে আটকে ফেলতে চাননি গুলের। নিজেকে মেলে ধরতে রিয়ালকে বেছে নিলেন তিনি।বলের সঙ্গে লেগে থাকা, দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ, প্রতিপক্ষকে নাকাল করা ড্রিবলিং, মুহূর্তের মধ্যে নাটমেগ করে বল বের করে নেওয়া, চাপের মুখে নিজের মাথার ওপর ফ্লিক করে বাতাসের গতিতে বল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া—এমন অসামান্য দক্ষতায় মাত্র ১৮ বছর বয়সে সবাইকে চমকে দিয়েছেন গুলের। কেউ চাইলে ইউটিউবে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট ক্লিপগুলো দেখেও গুলেরের পায়ের জাদু সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। তাঁর পায়ের অনেক কারুকাজ মনে করিয়ে দেয় তরুণ সময়ের মেসিকেও।

ইউটিউবে গিয়ে কেউ চাইলে অ্যান্টালিস্পোরের বিপক্ষে ফেনেরবাচের ২–০ গোলে জয়ে গুলেরের করা চোখধাঁধানো অ্যাসিস্টটিও দেখে নিতে পারেন। সেদিন ম্যাচের ২ মিনিটের মাথায় নিজেদের অর্ধ থেকে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যান গুলের। এরপর প্রায় মাঝমাঠ থেকে আরও তিন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বুটের বাইরে অংশ দিয়ে বাঁকানো পাসে এনের ভ্যালেন্সিয়াকে অ্যাসিস্টটি করেছিলেন এই মিডফিল্ডার। গুলেরের তৈরি করা সেই মুহূর্তটি অনেককেই একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেবে মেসি ও লুকা মদরিচকে। মনে রাখা দরকার, গুলের এসব বীরত্ব দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে। শুধু আক্রমণে ‘অ্যাংকর’ করা নয়, দলের প্রয়োজনে প্রেসিংয়েও প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়তে পারেন ‘তুর্কি মেসি’। পাশাপাশি রিয়ালে গুলেরকে বাড়তি সুবিধা দেবে খেলা চলাকালেই নিজের ভূমিকা বদলে ফেলা কিংবা ঝুঁকি নিয়ে ম্যাচ বের করে আনার মানসিকতাও। আর এমন একজন খেলোয়াড়কে এনে মেসির শূন্যতা পূরণের সুযোগ হাতছাড়া করায় এখন হয়তো আক্ষেপে পুড়ছেন জাভিও। অবশ্য এখানেই তো শেষ নয়, সামনের দিনগুলোতে গুলেরের পারফরম্যান্সে জাভির এই আক্ষেপ আরও বাড়তে পারে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য