স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৬ জুলাই: আপ্যায়ন? কথাটা শুনতে ভালোই লাগে। কিন্তু সিরিজটার নাম অ্যাশেজ বলেই আপ্যায়নের মোড়ক থেকেও খোঁচাটা লাগবে। কাদের? অবশ্যই ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটারদের। অবশ্য এই খোঁচা হজম না করে উপায়ও নেই। শত্রুশিবির থেকে যখন পানীয় পাঠানো হয় আর তা যতই ইটের জবাবে পাটকেল হোক না কেন—না তো আর করা যায় না!ঘটনাটা খুলে বলা যাক। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের হারের পর নানা বিষয় নিয়েই তো বিতর্ক চলছে। জনি বেয়ারস্টোর আউটটি নিয়ে কথা উঠেছে সবচেয়ে বেশি। ইংল্যান্ডের দাবি, ক্রিকেটীয় চেতনার দাবি মিটিয়ে আউটটি করা হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে, আউটটি যেহেতু ক্রিকেটের আইনসিদ্ধ, তাই এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। তাতে অবশ্য ক্ষোভ কমেনি ইংল্যান্ড শিবিরে। ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম লর্ডসে হারের পর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ‘বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল’কে বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় না, শিগগিরই একসঙ্গে বিয়ার খেতে বসা হবে।’
ম্যাককালামের এই মন্তব্যের পর অস্ট্রেলিয়ানরা চুপ করে থাকেনি। অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড প্রতিপক্ষ দলের কোচের এ মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স স্মিত হেসে ‘ওকে’ বলে বিষয়টি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু আসলেই কি তাই! অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক না হয় শান্তি আনার স্বার্থে এসব নিয়ে আর কথা বাড়াননি, তাই বলে দুঁদে অস্ট্রেলিয়ানরা তো চুপ করে থাকতে পারেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিয়ার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কার্লটন ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ (সিইউবি) বেন স্টোকসের দলের জন্য সীমিত সংস্করণের কিছু বিয়ার বানিয়েছে, যার নাম ‘ইংল্যান্ড বিটার’, আর এ বিয়ার উড়োজাহাজে করে তারা ইংল্যান্ডেও পাঠিয়েছে। কোথায়? হেডিংলিতে, যেখানে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় শুরু হচ্ছে অ্যাশেজ সিরিজে তৃতীয় টেস্ট। সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই বিয়ার পাঠানো হয়েছে কারণ লর্ডস টেস্টে বিতর্ক ভুলে বেন স্টোকসরা যেন ‘মাথা ঠান্ডা’ রেখে খেলতে পারেন।
সবুজ রঙের পরিচিত ভিবি (ভিক্টোরিয়া বিটার) লেবেলে বানানো সীমিত সংস্করণের এই বিয়ার ইংল্যান্ডে পাঠানো নিয়ে ভিবির বিপণন ব্যবস্থাপক মার্ক লর্ড বলেছেন, ‘আমরা জানি লর্ডস টেস্ট নিয়ে ইংলিশরা তিক্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যখন তারা একটু ঠান্ডা হবে আমরা বিয়ার হাতে তাদের স্বাগত জানাব…সেটা এই তরতাজা ইংল্যান্ড বিটার হাতে। আমরা কয়েক বাক্স পাঠিয়েছি ইংল্যান্ড দলের জন্য, মাথা ঠান্ডা হলে যেন তারা পান করতে পারে।’এখানেই শেষ নয়। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন জানিয়েছে, এই পানীয়র সঙ্গে খুদে বার্তাও সংযোজন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হেডিংলি টেস্টের ফল যা–ই হোক না কেন, ইংলিশরা এই বিয়ার ঠান্ডা কিংবা গরম—যেকোনো অবস্থাতেই পান করতে পারবে। এই বিয়ারের বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলেও ইংল্যান্ড দলকে খোঁচা মারা হয়েছে, ‘এটা পেতে পারেন স্টাম্প রক্ষা না করে, আম্পায়ারকে এড়িয়ে।’ বোঝাই যাচ্ছে ইঙ্গিতটা বেয়ারস্টোর সেই আউটের প্রতি।
আউটটি আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৭১ রান তাড়া করতে নামা ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে ফেলার পর ওই ঘটনার সূত্রপাত। ক্যামেরন গ্রিন ওভারের শেষ বলটা বাউন্সার মেরেছিলেন। সেটা ‘ডাক’ করে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বেয়ারস্টো। ওভারের শেষ বল হওয়ায় ইংলিশ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ভেবেছিলেন বলটা ‘ডেড’ হয়ে গেছে।বেয়ারস্টোকে ক্রিজ ছেড়ে বেরোতে দেখেই ‘আন্ডারআর্ম’ থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারি। অস্ট্রেলিয়ানরা আউটের আবেদন জানালে মাঠের দুই আম্পায়ার এহসান রাজা ও ক্রিস গ্যাফানি তৃতীয় আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাসের সহায়তা চান। ইরাসমাস বেশ কিছুটা সময় নিয়ে টিভি রিপ্লে দেখার পর বেয়ারস্টোরকে আউট দিলে শুরু হয় বিতর্ক।অস্ট্রেলিয়ার বিয়ার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিন্তু আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছে। হেডিংলি টেস্টে ‘ইংল্যান্ড বিটার’ বিয়ারের লোগোসংবলিত টি–শার্ট তারা বিনা পয়সায় তুলে দেবে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকদের হাতে। বোঝাই যাচ্ছে, হেডিংলিতে আজ আরেকটি ‘যুদ্ধ’ শুরু হচ্ছে