স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৫ এপ্রিল: তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিল নিউ জিল্যান্ড। সিরিজের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানরা জিতেছিল সুপার ওভারে। ডানেডিনে বুধবার ১৯ ওভারে লঙ্কানরা গুটিয়ে যায় ১৪১ রানে। কিউইরা রান তাড়ায় জিতে যায় ৪২ বল বাকি রেখে। দুর্দান্ত বোলিংয়ে কিউইদের জয়ের মঞ্চ গড়ে দেন মিল্ন। আগের দিন মূল ম্যাচে রান বিলিয়ে দেওয়ার পর সুপার ওভারেও ছক্কা ও চার হজম করেছিলেন তিনি। এবার ৪ ওভারে ২৬ রানে তার শিকার ৫ উইকেট। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট আছে তার কেবল দুজনের, টিম সাউদি (৫/১৮) ও লকি ফার্গুসন (৫/২১)। সাইফার্ট পরে তুড়ি মেরে লঙ্কান বোলিং উড়িয়ে দেন যেন ৬ ছক্কায় ৪৩ বলে ৭৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার ইনিংসকে দুটি ভাগে আলাদা করা যায় স্পষ্ট করে। প্রথম ১০ ওভারে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ৮৩। দৃষ্টি তখন তাদের ১৭০-১৮০ রানে। কিন্তু এরপর কিউই বোলাররা ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। পরের ভাগে ৯ ওভারে লঙ্কানরা তোলে স্রেফ ৫৮ রান। শেষ ৮ উইকেট ৫০ রানের মধ্যে হারায় তারা। ম্যাচের শুরুটায় ছিল লঙ্কান ঝড়ের ইঙ্গিত। প্রথম ওভারে মিল্নের বলে পাথুম নিসানকার দুই বাউন্ডারি ম্যাচ শুরু করে তারা। পরের ওভারে বেন লিস্টারকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন কুসাল মেন্ডিস। মেন্ডিস বিদায় নেন পরের বলেই। তবে তিনে নামা কুসাল পেরেরাও রানের দেখা পান ছক্কা মেরেই। মিল্ন প্রথম শিকারের দেখা পান নিসানকাকে ফিরিয়ে। তার পরও পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৫০ রান তুলে ফেলে তারা।
তৃতীয় উইকেট পেরেরা ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। শ্রীলঙ্কাও তখন এগিয়ে যাচ্ছিল বড় স্কোরের দিকে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এই জুটি ভাঙেন মিল্ন। তার স্লোয়ারে আউট হয়ে যান পেরেরা (৩২ বলে ৩৫)। থামে ৪৬ বলে ৬২ রানের জুটি। পরের ওভারে রাচিন রবীন্দ্রর বলে ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান ধনাঞ্জয়াও (২৬ বলে ৩৭)। রবীন্দ্রকেই টানা দুই বলে ছক্কায় পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন শ্রীলঙ্কার আগের ম্যাচের নায়ক চারিথ আসালানকা। তবে নিউ জিল্যান্ডের লড়াইয়ে ফেরার পর্ব তখন শুরু হয়ে গেছে। আসালানকা এক প্রান্তে থাকলেও আরেক পাশে দাসুন শানাকা, ভানিন্দু হাসারাঙ্গারা বিদায় নেন দ্রুত। শেষ দিকে ফিরে লঙ্কানদের লেজ মুড়িয়ে দেন মিল্ন। এক ওভারেই আদায় করেন তিনি তিন উইকেট। ১৯ বলে ২৪ রান করা আসালানকাকে ফিরিয়ে শুরু। এরপর দুর্দান্ত দুটি ইয়র্কারে দুই উইকেট নিয়ে পূর্ণ করেন তিনি পাঁচ উইকেট।
রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন চ্যাড বাওয়েস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দিলশান মাদুশানকার বলে চার মারেন তিনি চারটি। তৃতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান তিনিম, তবে ততক্ষণে ৭ চারে ১৫ বলে ৩১ রান হয়ে গেছে তার। এরপর শুরু হয় টিম সাইফার্টের ঝড়। উইকেট শিকারি কাসুন রাজিথাকে দুটি ছক্কা মারেন পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে। পেস ও স্পিনে দারুণ সব শটের প্রদর্শনী চলতে থাকে। টম ল্যাথাম তাকে স্রেফ সঙ্গ দিয়ে যান। ৩০ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সাইফার্ট। এই সংস্করণে যা তার ষষ্ঠ। পরে ধনাঞ্জয়ার এক ওভারে রিভার্স পুলে চার, স্লগ সুইপে ছক্কা ও আরেকটি রিভার্স শটে ছক্কায় খেলা শেষ করে দেন তিনি। ল্যাথাম তখন অপরাজিত ৩০ বলে ২০ রান করে। অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৬৮ বলে ১০৬।এই ম্যাচে আম্পায়ারিং করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান কিম কটন। প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে পূর্ণ সদস্য দুটি দেশের ম্যাচ পরিচালনা করলেন এই ৪৫ বছর বয়সী। সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ শনিবার কুইন্সটাউনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা : ১৯ ওভারে ১৪১ (নিসানকা ৯, কুসাল মেন্ডিস ১০, কুসাল পেরেরা ৩৫, ধনাঞ্জয়া ৩৭, আসালানকা ২৪, শানাকা ৭, হাসারাঙ্গা ৯, থিকসানা ০, মাদুশান ১, রাজিথা ১, মাদুশানকা ০*; মিল্ন ৪-০-২৬-৫, লিস্টার ৪-০-২৬-২, শিপলি ৩-০-২৫-১, রবীন্দ্র ৩-০-২৪-১, নিশাম ২-০-২০-১, সোধি ৩-০-১৭-০)।
নিউ জিল্যান্ড: ১৪.৪ ওভারে ১৪৬/১ (বাওয়েস ৩১, সাইফার্ট ৭৯*, ল্যাথাম ২০*; থিকসানা ৪-০-১৮-০, মাদুশানকা ১-০-১৮-০, রাজিথা ২-০-২৫-১, মাদুশান ২-০-২১-০, শানাকা ১-০-১০-০, হাসারাঙ্গা ৩-০-২২-০, ধনাঞ্জয়া ১.৪-০-৩১-০)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যাডাম মিল্ন।