স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক ,১৫ ডিসেম্বর: পাকিস্তান সফরে নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট দল ঘোষণার দিনই এলো উইলিয়ামসনের টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়ার খবর। সামনের পথচলায় নিজের চাপ কমাতে চান ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। আগামী দুই বছরে রঙিন পোশাকের দুটি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়াকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তিনি।২০১৬ সালে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অবসরের পর নেতৃত্ব পান উইলিয়ামসন। ২২টি জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের দ্বিতীয় সফলতম টেস্ট অধিনায়ক তিনি। তবে জয়ের হারে তিনিই সেরা। নিউ জিল্যান্ডের কিংবদন্তি অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের অধিনায়কত্বে ২৮ জয় এসেছে ৮০ টেস্টে। অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ২২ জয় ৪০ টেস্টেই। জয়ের হার শতকরা ৫৫ শতাংশ, তার ধারেকাছে নেই নিউ জিল্যান্ডের আর কোনো অধিনায়ক।নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় দুটি অধ্যায়ের জন্ম হয়েছে উইলিয়ামসনের জমানাতেই। তার নেতৃত্বে প্রথমবার আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠে তারা। তার অধিনায়কত্বেই জিতে নেয় প্রথম আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা।সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সেমি-ফাইনাল, ফাইনাল নিয়মত খেললেও কোনো বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ এখনও পায়নি নিউ জিল্যান্ড। উইলিয়ামসন এখন তাকিয়ে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।“টেস্ট ক্রিকেটে ব্ল্যাকক্যাপদের নেতৃত্ব দেওয়া আমার জন্য ছিল অবিশ্বাস্য এক সম্মান। আমার কাছে টেস্ট ক্রিকেটেই খেলাটির সর্বোচ্চ চূড়া এবং টেস্ট দলকে নেতৃত্বে চ্যালেঞ্জ আমি উপভোগ করেছি। তবে অধিনায়কত্ব করা মানে মাঠের ভেতরে-বাইরে বাড়তি অনেক শ্রম এবং ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে আমার মনে হয়, এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত (দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া)।”
“নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের সঙ্গে আলোচনার পর আমাদের মনে হয়েছে, আগামী দুই বছরে সাদা বলের দুটি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়াই আমার জন্য ভালো হবে।”এক সংস্করণের নেতৃত্ব ছাড়লেও তিন সংস্করণে খেলা চালিয়ে যাবেন বলেও নিশ্চিত করে দেন তিনি।“নতুন অধিনায়ক টিম (সাউদি) ও সহ-অধিনায়ক টমকে (ল্যাথাম) সহায়তা করতে আমি মুখিয়ে আছি। ক্যারিয়ারের দীর্ঘ একটা সময় ওদের সঙ্গে খেলেছি, ওরা কাজটি ঠিকঠাক করতে পারবে বলেই বিশ্বাস আমার।”“ব্ল্যাকক্যাপদের হয়ে খেলা এবং তিন সংস্করণেই অবদান রাখা আমার এক নম্বর প্রাধান্য এবং সামনের সব ক্রিকেটের অপেক্ষায় আছি আমি।”নানা সময়ে উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে ১টি ওয়ানডে ও ২২ টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাউদি। তবে টেস্ট নেতৃত্বে অভিষেক হবে পাকিস্তানেই। সহ-অধিনায়ক ল্যাথামের অভিজ্ঞতা এখানে বেশি। উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে ৭টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া হয়ে গেছে ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের।সামনে হয়তো ল্যাথামকেই সামলাতে হবে নেতৃত্বের ভার। নতুন অধিনায়ক সাউদির বয়স পেরিয়ে গেছে ৩৪। এই বয়সে নেতৃত্ব পেয়ে রোমাঞ্চিত ৮৮ টেস্টে ৩৪৭ উইকেট শিকারি পেসার।“এই কয়েকটি দিন ছিল অবিশ্বাস্য এবং নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিশাল সম্মানের। টেস্ট ক্রিকেট ভালোবাসি আমি, এখানেই চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ এবং এই সংস্করণে দেশকে নেতৃত্ব দিতে তর সইছে না আমার।”
অধিনায়কত্বে পরিবর্তনের পাশাপাশি পাকিস্তান সফরে নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট স্কোয়াডেও আছে চমক। দলে ফিরেছেন লেগ স্পিনার ইশ সোধি। ১৭টি টেস্ট খেললেও এই লেগ স্পিনারের মূল পরিচয় হয়ে গিয়েছে সীমিত ওভারের স্পেশালিস্ট। সবশেষ টেস্ট খেলেছেন তিনি ২০১৮ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষেই দুবাইয়ে। গত দেড় বছরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন স্রেফ তিনটি ম্যাচ। পাকিস্তানের কন্ডিশনের কথা ভেবেই তবু ফেরানো হয়েছে ৩০ বছর বয়সী লেগ স্পিনারকে।সীমিত ওভারের আরেক স্পেশালিস্ট গ্লেন ফিলিপসও ফিরেছেন টেস্ট দলে। ২৬ বছর বয়সী আগ্রাসী ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট খেলেছেন ২০২০ সালে সিডনিতে। অভিষেক ইনিংসে ফিফটি করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে।কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া পেসার ট্রেন্ট বোল্ট এই সফর থেকে সরিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। চোটের কারণে বিবেচিত হননি আরেক পেসার কাইল জেমিসন।২০০৩ সালের পর এই প্রথম পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে নিউ জিল্যান্ড। ২৬ ডিসেম্বর করাচি টেস্ট দিয়ে শুরু দুই ম্যাচের সিরিজ। পরের টেস্ট ৩ জানুয়ারি থেকে মুলতানে।
নিউ জিল্যান্ড টেস্ট দল: টিম সাউদি (অধিনায়ক), মাইকেল ব্রেসওয়েল, টম ব্লান্ডেল, ডেভন কনওয়ে, ম্যাট হেনরি, টম ল্যাথাম (সহ-অধিনায়ক), ড্যারিল মিচেল, হেনরি নিকোলস, এজাজ প্যাটেল, গ্লেন ফিলিপস, ইশ সোধি, ব্লেয়ার টিকনার, নিল ওয়্যাগনার, কেন উইলিয়ামসন, উইল ইয়াং।