Friday, March 29, 2024
বাড়িখেলাদিবালার জন্য অপেক্ষা

দিবালার জন্য অপেক্ষা

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৩০ নভেম্বর: বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলার স্মৃতি কি ভোলা যায়? অন্য কেউ হয়তো ভুলতে চাইবেন না, কিন্তু পাওলো দিবালা নিশ্চিত চাইতে পারেন! বৈশ্বিক ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে প্রথম পা রাখার স্মৃতি যে তার জন্য বড্ড বিভীষিকাময়। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল আর্জেন্টিনা; বদলি নেমে অভিষেক রাঙাতে পারেননি দিবালা। এবার যে রঙ ছড়াবেন, দেনা-পাওনার হিসেব চুকাবেন, সে সম্ভাবনাও তো দেখা যাচ্ছে না।কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে খেলে ফেলেছে দুই ম্যাচ, কিন্তু সেরা একাদশে তো দূর অস্ত, বদলি নামার সুযোগও কড়া নাড়েনি দিবালার দরজায়। প্রশ্নটা তাই কিছুটা হলেও জাগছে -কোথায় হারালেন অপার সম্ভাবনার বিচ্ছুরণ ছড়িয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা দিবালা?সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ২-১ হেরে গ্রুপ পর্ব শুরুর ম্যাচে তিনি দর্শক। মেক্সিকোর বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা ম্যাচেও একই অবস্থা। দর্শক হিসেবে একটি হারের তেতো স্বাদের বিপরীতে একটি জয় দেখেছেন, দর্শক হিসেবে তার তৃপ্তির ঢেকুর বলতে এতটুকু। কিন্তু তাতে খেলতে না পারার কষ্ট যে দূর হয় না কোনোভাবে।দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ বুধবার পোল্যান্ডের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নামবে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা, দিবালার সুযোগ পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই এ ম্যাচেও। গত জুনেও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে ফিনালিস্সিমায় আর্জেন্টিনার ৩-০ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে জালের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। ওয়েম্বলির ম্যাচের গোলের পর তার ভক্তরা হয়ত আশা করেছিলেন, বিশ্বকাপে সুযোগ মিলবে ‘দা জুয়েল’ এর। কিন্তু তাদের অপেক্ষাও দিবালার মতো হচ্ছে দীর্ঘ।লিওনেল মেসি নামের এক জাদুকরের সময়ে জন্ম নেওয়া এবং মূলত একই পজিশনে খেলার কারণে দিবালার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে হাল ছাড়ছেন না ইউভেন্তুস ঘুরে এ বছর রোমায় পাড়ি জমানো এই ফরোয়ার্ড। একটু সুযোগের আশায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্রস্তুতিতে ঘাম ঝরিয়ে চলেছেন তিনিও। না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো বাবার স্বপ্ন যে পূরণ করতেই হবে তাকে!

ফুটবলের প্রতি আদোলফো দাইবালার এমনই দুর্নিবার টান ছিল যে, তিন ছেলের জন্মের আগে তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, “কোনো একদিন আমার একটা ছেলে জন্মাবে একটা মিশন নিয়ে এবং সেটা ফুটবল খেলা।” বাবার স্বপ্ন পূরণের বার্তা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ১৫ নভেম্বর দিবালার পৃথিবীর আলোতে আসা। এরপর হাঁটি-হাঁটি পা-পা বয়স থেকে বাবার হাত ধরে ফুটবলের সবুজে পা রাখা। ছেলের ট্রেনিংয়ে সবসময় সঙ্গ দিতেন বাবা। স্বপ্ন দেখতেন একটাই-ছেলে আমার বড় হবে, ফুটবলের আঙিনায় রঙ ছড়াবে।দিবালার তখনও রঙ ছড়ানোর শুরু হয়নি। কিশোর, বয়স মাত্র ১৫ বছর। এমন সময় মাথার উপর থেকে সবচেয়ে বড় আস্থার ছাতাটি সরে গেল চিরতরে। ২০০৮ সালে ক্যান্সারের কাছে হার মেনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন আদোলফো। এরপর ছেলে একটু একটু করে বড় হয়েছে, করদোবার অলিগলি ছেড়ে পালেরমো হয়ে ইউভেন্তুসে আলো ছড়িয়েছে, এখন ছড়াচ্ছে ইতালির শীর্ষ লিগের আরেক দল রোমায়, কিন্তু আদোলফোর দেখে যাওয়া হয়নি কিছুই।২০১৫ সালে ছেলের আর্জেন্টিনার আকাশি নীল-সাদা জার্সিতে অভিষেক, এরপর এক এক করে ৩৪টি ম্যাচ খেলে ফেলা-এর কোনোটাই গ্যালারিতে বসে দেখতে না পারার অতৃপ্তি নিয়ে চলে যাওয়া আদোলফোর। দিবালাও অতৃপ্ত বাবাকে নিজের সামর্থ্য দেখাতে না পেরে। বাবার স্বপ্ন পূরণে তাই কোনো খামতি রাখছেন না তিনি। হয়ত ভাবছেন ঈশান কোণে দাঁড়িয়ে বাবা সেই শৈশব, কৈশরের দিনগুলোর মতোই চোখ রাখছেন তার অনুশীলনে।কাতার বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে এক মুহূর্তও নষ্ট করেন না দিবালা। মার্তিনেসের সঙ্গে সবার আগে চলে আসেন প্র্যাকটিসে। শুটিং অনুশীলনে দেন নিবিড় মনোযোগ। কখনও ভলিতে, কখনও বুলেট গতির শটে জাল কাঁপাতে থাকেন। এমন দৃশ্যও দেখা গেল, দুম করে শট নিলেন দিবালা, পেস্টের পেছনে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকা আর্জেন্টিনা দলের ফটোগ্রাফার ভড়কে গিয়ে পিছু হটলেন!চক্রাকারে পাসিং ফুটবলের অনুশীলনে দিবালাকে দেখা গেল মেসির কাছাকাছি অনুশীলন করতে। বার দুয়েক অধিনায়ক তার পিঠ চাপড়ে দিলেন। কিন্তু তাতে খেলতে না পারার কষ্ট কী ভোলা যায়? ম্যাচ টাইম না পাওয়া শৈশবে স্মৃতি আওড়াতে একবার তিনি বলেছিলেন কান্নার কথা।“ছোট বেলা আমি খেলার সময়টা খুব হিসেব করতাম। যখন আমাকে যথেষ্ঠ সময় খেলতে দেওয়া হতো না, কিংবা যখন আমি পর্যাপ্ত কারিকুরি দেখাতে পারতাম না, ঘরে ফিরে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদতাম।”কাতারে সে কান্নার স্রোত হয়তো বয়ে চলেছে দিবালার মনে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য