Sunday, February 9, 2025
বাড়িখেলাঅঘটনের বিশ্বকাপে দ্যুতিময় নেদারল্যান্ডস

অঘটনের বিশ্বকাপে দ্যুতিময় নেদারল্যান্ডস

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৭ নভেম্বর: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর এমন বিস্ময় জাগানো জয় এটাই প্রথম নয় অবশ্যই। অতীতে ‘অঘটন’ ঘটেছে আরও। নেদারল্যান্ডসই ২০০৯ ও ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল ক্রিকেট আঙিনায়।তবে অস্ট্রেলিয়া আসরে শুধু ডাচারাই নয়, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতও দেখিয়েছে তাদের সামর্থ্যের ঝলক। টি-টোয়েন্টিতে যে এখন খুব একটা পিছিয়ে নেই, ভালোভাবেই পেরেছে তারা সেটার জানান দিতে। পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে নিজেদের অবস্থান।এবারের বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সফল নেদারল্যান্ডস। বাছাই পর্বের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এতদিন বৈশ্বিক আসরে জায়গা করে নিতে হতো তাদের। সেই বৈতরণী পার হতে না পারায় ২০০৭, ২০১০, ২০১২ আসরে অংশই নিতে পারেনি দলটি।কিন্তু এবার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে তারা সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে পরের বিশ্বকাপে। ২০২৪ সালের আসরে খেলতে আর বাছাইয়ের ঝামেলায় পড়তে হবে না তাদের।নেদারল্যান্ডসের মানুষ হয়তো কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপে ভার্জিল ফন ডাইক, ফ্রেংকি ডি ইয়ংদের সম্ভাবনা কতটুকু সেটা নিয়েই উদ্বেলিত। অস্ট্রেলিয়ায় বাস ডে লেডে, কলিন আকারম্যানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স হয়তো ডাচদের বেশিরভাগেরই অজানা। তবে এমন পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেট দল বাড়তি মনোযোগ দাবি করতেই পারে।বাছাই পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া নেদারল্যান্ডস প্রাথমিক পর্বে হারিয়ে দেয় আমিরাত ও নামিবিয়াকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারলেও দেখায় লড়াইয়ের মানসিকতা। দুই জয়ের সুবাদে তারা প্রথমবারের মতো ওঠে সুপার টুয়েলভে।

মূল পর্বেও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স উপহার দেয় দলটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে পারেনি একটুর জন্য। ওই ম্যাচ জিতে গেলে সেমি-ফাইনালের দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই থাকত ডাচরা। অন্য সব সমীকরণ সঙ্গ দিলে হয়তো শেষ চারে উঠেও যেত দলটি।সুপার টুয়েলভে তারা ‘প্রথম’ জয় তুলে নেয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্মরণীয় জয়। শক্তি-সামর্থ্যে এবারের বিশ্বকাপের ফেভারিট দলগুলোর একটি ছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু তাদেরকেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দেয় নেদারল্যান্ডস। টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় দেখায় দুর্দান্ত জয়ে বাঁধনহারা উল্লাসে মাতে তারা।সুপার টুয়েলভে ৫ ম্যাচের দুটি জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বর গ্রুপের চতুর্থ দল হিসেবে নেদারল্যান্ডস শেষ করে এবারের বিশ্বকাপ। আসর জুড়ে তাদের পারফরম্যান্সই বলে দেয়, কতটা বদলে গেছে আইসিসি সহযোগী দলগুলো। ফন মেরওয়া যেমন বলেছেন, গত ১০ বছরের তুলনায় এখন অনেক উন্নতি করেছে সহযোগী দলগুলো, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। যা ক্রিকেটের সার্বিক অগ্রগতির জন্য বেশ ভালো দিক।“অন্য সংস্করণগুলো দেখুন আর টি-টোয়েন্টি দেখুন। সংস্করণ যত ছোট হয়, দলগুলোর শক্তির পার্থক্য তত কমে আসে। আমার মনে হয় না যেটাকে সবাই ‘অঘটন বলে, আগে এত ছিল। দশ বছর আগের কথাই ধরুন, পুরো আসরে হয়তো একবার এমন দেখা যেত। কিন্তু এখন প্রায় নিয়মিতই হচ্ছে।”“এখন দলগুলো নিজেদের কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা পেতে শুরু করেছে। তারা জানে, ম্যাচ জেতার জন্য কী করতে হবে। তো অবশ্যই, আমার মতে গত দশ বছরে কিছু জিনিস নিশ্চিতভাবেই উন্নতি হয়েছে।”

২০০৯ ও ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছিলেন ফন মেরওয়া। এরপর বদলে ফেলেন তিনি দল। মায়ের দেশ নেদারল্যান্ডের হয়ে ২০১৬ ও ২০২১ সালের পর বৈশ্বিক আসরে খেলেছেন এবারও। অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার চান, এমন সব ‘আপসেট’ ক্রিকেটে আরও ঘটবে।“তবে হ্যাঁ, দলগুলো (শক্তি-সামর্থ্যে) শীর্ষ দলগুলোর কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে দেখে ভালো লাগছে। এটি ক্রিকেটের জন্য ভালো। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে এবং সামনে এমন ম্যাচ আরও হবে।”সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে দারুণ গতিতে এগোচ্ছে নামিবিয়া। বছর পাঁচেক আগেও ‘মুমূর্ষু’ অবস্থায় ছিল তাদের ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তারা ছিল অনেক দূরে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মর্যাদাও ছিল না তাদের। সেই দলই টানা দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলে ফেলল। শুধু কী খেলেছে তারা! উপহার দিয়েছে অবাক করা পারফরম্যান্স।গত বছর ওমান ও আমিরাতের আসর দিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলে নামিবিয়া। প্রথমবারেই তারা করে বাজিমাত। প্রাথমিক পর্বে নেদারল্যান্ডসের পর তারা হারিয়ে দেয় আয়ারল্যান্ডকে। জায়গা করে নেয় সুপার টুয়েলভে। সেখানে তারা জেতে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। গ্রুপে ৫ নম্বর হয়ে এবারের বৈশ্বিক আসরে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

অস্ট্রেলিয়া আসর তো শুরুই হয় নামিবিয়ার চমক দিয়ে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই তারা হারিয়ে দেয় এশিয়া কাপে জিতে আসা শ্রীলঙ্কাকে। এরপর অবশ্য পরের দুই ম্যাচে হেরে ছিটকে পড়ে প্রাথমিক পর্ব থেকে। তবে তাদের উন্নতি নজর কড়ার কথা প্রায় সবারই নামিবিয়ার এই উত্থানের পেছনে বড় অবদান পিয়েরে ডে ব্রুইনের। ২০১৯ সালে কোচের দায়িত্ব নিয়ে বদলে ফেলেন তিনি পুরো দলের মানসিকতা। ক্রিকেটারদের হৃদয়ে বপন করেন আত্মবিশ্বাসের বীজ। কাজ করেন তাদের শক্তি-সামর্থ্যের জায়গা নিয়ে, উন্নতির চেষ্টা চালান স্কিলে। তার দৃষ্টিতে এখন দল হিসেবে ভালোই পরিণত নামিবিয়া। “যদি ২০১৯ সালের (এই দলের) দক্ষতার দিকে তাকাই…আর এখন তারা কোথায় আছে। এটা দেখা খুবই আনন্দের, তারা কীভাবে উন্নতি করেছে, দল হিসেবে কীভাবে বিকাশ করেছে। এখন স্কিলের দিকে তারা যেখানে আছে, এর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমরা এটাও জানি, স্কিলে উন্নতি সবসময়ই করতে পারি।”নামিবিয়ার মতো গত বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স করে স্কটল্যান্ড। প্রাথমিক পর্বে তারা হারিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম রাউন্ডে সবগুলো ম্যাচ জিতে জায়গা করে নেয় সুপার টুয়েলভে। সেখানে কোনো ম্যাচ না জিতলেও এবারের বৈশ্বিক আসরে সরাসরি খেলার টিকেট পেয়ে যায় তারা।অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক পর্বে স্কটল্যান্ড উপহার দেয় বড় বিস্ময়। দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দেয় তারা। যদিও পরের দুই ম্যাচে হেরে শেষ পর্যন্ত সুপার টুয়েলভে ওঠা হয়নি তাদের। তবে আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লড়াই করার মানসিকতা দেখায় তারা।টুর্নামেন্টে নিজেদের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছে আরেক সহযোগী দেশ আমিরাতও। ৭ বছর পর বৈশ্বিক আসরে এসে নিজেদের প্রথম ম্যাচ থেকেই আলো ছড়ায় তারা। অল্প পুঁজি নিয়ে দারুণ লড়াই করে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। পরে তো নামিবিয়াকে হারিয়ে তুলে নেয় বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়।বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর দ্যুতিময় পারফরম্যান্সে আবার সামনে এসেছে তাদের কঠিন বাস্তবতা। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বিপক্ষে বিশ্বকাপ ছাড়া আর কোথাও খেলার সুযোগ খুব একটা হয় না তাদের। ২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝের এক বছরে স্রেফ দুটি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেয়েছে স্কটল্যান্ড। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ ছাড়া এই সময়ে নেদারল্যান্ডসও খেলেছে মাত্র দুটি ম্যাচ।

আমিরাত বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছে আয়ারল্যান্ড, নেপাল, ওমানকে নিয়ে আয়োজিত চারদেশীয় সিরিজ, এশিয়া ও বিশ্বকাপ বাছাই মিলিয়ে। একেবারে শেষ সময়ে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় আমিরাত।৩৭ বছর বয়সী ফন মেরওয়া আক্ষেপ করলেন বড় দলের বিপক্ষে খেলতে না পারা নিয়ে। তার মতে, আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হতে পারবে সহযোগী দলগুলো। তাতে বৈশ্বিক আসরের আমেজ, রোমাঞ্চ বেড়ে যাবে বহুগুন। সব ম্যাচই তখন উপভোগের উপলক্ষ হবে। “হ্যাঁ, অবশ্য আমি মনে করি, বিশেষ করে আমাদের জন্য (সহযোগী দল) আরও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা ভালো দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাই-ই না।”শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর নামিবিয়ার অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাসও বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টির আঙিনায় এখন দলগুলোর পার্থক্য খুব একটা নেই। এখন উপযুক্ত সময় তাদেরকে আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া। “আমরা (নিজেদেরকে) শ্রীলঙ্কার সমকক্ষ ভেবেই মাঠে পা রেখেছি। সহযোগী দেশগুলোর জন্য যদি এমন আরও সুযোগ তৈরি করা যায়, তারা গত কয়েক বছরে বড় দলগুলোর সঙ্গে পার্থক্য কমিয়ে নিজেদেরকে সেই পর্যায়ে নিয়ে দেখিয়েছে। আমি মনে করি, এখন সময় আমাদেরকে এমন আরও ম্যাচের ব্যবস্থা করে দেওয়ার।”২০২৪ আসর থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে ২০ দল। নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ডের পথ ধরে বিশ্বমঞ্চে চমক জাগানোর স্বপ্ন নিশ্চয়ই দেখছে আরও অনেক সহযোগী দেশ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য