Wednesday, February 12, 2025
বাড়িখেলাবড় স্বপ্ন নিয়ে কাতার যাবে রোনালদোর পর্তুগাল

বড় স্বপ্ন নিয়ে কাতার যাবে রোনালদোর পর্তুগাল

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,১১ অক্টোবর: কোনো সাফল্য যেমন আনন্দ আর তৃপ্তির অনুভূতি এনে দেয়, তেমনি আরও বড় সাফল্যের আকাঙ্ক্ষার  বীজও বুনে দেয় সন্তর্পণে। পর্তুগালের ক্ষেত্রেও তাই। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা হয়েছে, পাওয়া হয়েছে নেশন্স লিগের শিরোপার স্বাদও। বাকি আছে কেবল বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু এঁকে দেওয়া। এই স্বপ্ন পূরণের দুর্বিনীত তাড়না নিয়ে রোনালদো-দিয়াসদের কাঁধে সওয়ার হয়ে কাতারে যাবে পর্তুগাল।কাগজে-কলমে পর্তুগালের দুর্বলতা খুব একটা নেই। দলটির সব পজিশনে আছে মানসম্পন্ন ফুটবলার। বড় মঞ্চে জয়ের অভিজ্ঞতাও আছে তাদের অনেকের। তাদের হাত ধরে ২০১৬ সালের ইউরো এবং ২০১৯ নেশন্স লিগের সাফল্যের ধারা এবার বিশ্বকাপে বয়ে নিতে উন্মুখ দলটি। লক্ষ্য পূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতেও সক্ষম দক্ষিণ ইউরোপের দেশটি।সম্প্রতি অবশ্য পর্তুগালের আত্মবিশ্বাসের দেয়ালে ছোট্ট একটু চিড় ধরেছে। সদ্য শেষ হওয়া নেশন্স লিগের গ্রুপ পর্বের পথচলায় স্পেনের কাছে ১-০ গোলে হেরে পথচলা থেমেছে তাদের ফাইনালসের আগেই। ওই হারের পর প্রশ্ন উঠে গেছে দলটির প্রাণভোমরা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে ঘিরে।নেশন্স লিগের সেমি-ফাইনালসে ওঠার জন্য স্পেনের বিপক্ষে স্রেফ ১ পয়েন্টই দরকার ছিল পর্তুগালের। ৮৭তম মিনিট পর্যন্ত তারা ছিল লক্ষ্য পূরণের পথে। কিন্তু বিধি বাম। আলভারো মোরাতা ম্যাচের মোড় দিলেন স্পেনের দিকে ঘুরিয়ে। নেশন্স লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের সঙ্গে তাদের সমর্থকরাও ডুবল হতাশায়।

এই হার ফিরিয়ে আনে পর্তুগালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শেষ মুহূর্তের ভরাডুবির স্মৃতিও। ২০২১ সালের নভেম্বরে নিজেদের মাঠে সার্বিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে বসে সান্তোসের দল। দ্বিতীয় গোলটি তারা হজম করে ৯০তম মিনিটে। ওই হার রোনালদো-দানিলোদেরকে ঠেলে দেয় প্লে-অফের অনিশ্চিত ও চ্যালেঞ্জিং মঞ্চে। কঠিন সে বাধা উতরেই বিশ্বকাপে পা রাখতে পেরেছে তারা। সমর্থকদের সঙ্গে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে ফের্নান্দো সান্তোসোর দল।কয়েকটি প্রজন্মের মিশেলে বেশ বৈচিত্রময় ও ভারসাম্যপূর্ণ দল পর্তুগাল। ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো অধিনায়ক এবং নেতা। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ও গোল করার রেকর্ডও তার।রোনালদোর মতোই পুরনো দিনের যোদ্ধা জোয়াও মৌতিনিয়ো এবং দানিলো। পরের প্রজন্মের আছেন ব্রুনো ফের্নান্দেস, ব্রুনো সিলভা ও জোয়াও কানসেলো। তিনজনেরই বয়স ২৮। সময়ের পরিক্রমায় তারা এখন আরও ঋদ্ধ ও পরিণত। পাদপ্রদীদের আলো উঠে আসার সামর্থ্য আছে ২৫ বছর বয়সী রুবেন দিয়াসের।২২ বছর বয়সী দুই প্রতিভাবান জোয়াও ফেলিক্স, ভিতিনিয়া তাদের তরুণ কাঁধেও দায়িত্ব নিতে সক্ষম। এই নবীনেরা আগামী দিনে পর্তুগালকে টেনে নেবে  ও নতুন স্বপ্ন দেখাবে। রোনালদোর মতো পুরনো দিনের সারথীদের কতটা ভালোভাবে তারা বিদায় দিতে পারলেন, নেটি দেখার উপলক্ষ্যও হয়ে উঠবে কাতারের আসর।

সান্তোসের মানসিকতা কৌশল

‘সেরাটা আসার এখনও বাকি এবং সেটা এ বছরই আসবে’, এই এক কথায় পর্তুগিজ কোচ বুঝিয়ে দিয়েছেন কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে তার ভাবনা। সান্তোসের এতটা আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ৬৭ বছর বয়সী এই কোচ কেবল সেরা তারকাদেরই পাচ্ছেন না, অফুরন্ত সম্ভাবনাময় নতুন অনেক মুখ তার কাতার মিশনের সঙ্গী।দলে নতুনের এমন সমাবেশ সম্ভব হয়েছে পাইপলাইনে মেধাবী ও উদায়ীমান খেলোয়াড় থাকায়। ২০১৬ সালে ইউরো জয়ের পর নানা বাকবদলের মধ্য যাওয়া দলটিকে কোচ গুছিয়ে নিতে পেরেছেন দিয়েগো কস্তা, রাফায়েল লিয়াওদের মতো তরুণদের নিয়ে। এই দুজনেরই বয়স ২৩। তাদের চেয়েও তিন বছরের ছোট নুনো মেন্দেসও আছেন দলে।২০১৪ সালের মাঝামাঝি দায়িত্ব নেওয়ার পর দলটাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছেন সান্তোস। যদিও নানা সময়ে তাকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। পর্তুগালকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সময় এনে দিলেও সমর্থকদের পুরোপুরি পাশে পাননি সান্তোস। তার ফুটবল দর্শনকে অনেকে মনে করেন মনে করা হয় অতিরিক্ত কার্যসিদ্ধিমূলক এবং রক্ষণাত্মক। নিজেদের বিকল্পগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে না পারায়ও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় সান্তোসকে।  

চাবিকাঠি: ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো

৫-১০ বছর কিংবা এক যুগ নয়, দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে পর্তুগালের জার্সির ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এই ৩৭ বছর বয়সেও থামাথামির কোনো আভাস নেই। বরং সম্প্রতি পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশনের একটি অনুষ্ঠানে পাঁচবারের ফিফা সেরা তিনি ইঙ্গিত দেন ২০২৪ ইউরো পর্যন্ত খেলে যাওয়ার।বয়সকে স্রেফ তুড়ি মেরে ছুটে চলা রোনালদোর সাফল্য ক্ষুধা এমনই দুর্নিবার। পর্তুগালের সাম্প্রতিক সব সাফল্যের সঙ্গে মিশে আছে তার নাম। আন্তর্জাতিক ফুটবলে জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড তার, ১৯১ ম্যাচে করেছন ১১৭ গোল।তবে স্রেফ পরিসংখ্যানই নয়, গোল এবং শিরোপার চেয়ে বেশি কিছু পর্তুগালকে দিয়েছেন রোনালদো। যে হীনম্মন্যতার কারণে প্রথাগত বড় দলগুলোর বিপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে দলটি নিজেদের মেলে ধরার সাহস পায়নি, পেছনে পড়ে থেকেছে দিনের পর দিন, অনেকের মতে দলটির সেই মানসিকত দীনতা কাটিয়ে ওঠার কারণ আর কেউ নন; এই রোনালদো।সময়ের পালায় সেই রোনালদো এখন খোদ পর্তুগিজ সমালোচকদের তোপের মুখে। জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ নয় ম্যাচের আটটিতে তিনি জালের দেখা পাননি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সেরা একাদশেও নিয়মিত নন। সব মিলিয়ে তাই বাঁকা কথা শুনতে হচ্ছে তার মতো কিংবদন্তিকেও।তবে সমালোচনার তীক্ষ্ণ তীর যতোই ধেয়ে আসুক, রোনালদো তো রোনালদোই। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের হৃদয়ে ভয়ের স্রোত বইয়ে দেওয়ার কাজটি তিনি এই বয়সেও করতে পারেন অনায়াসে। সান্তোসের চোখে তাই এই প্রিয় শিষ্য অপূরণীয়। রাশিয়া বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো করার প্রত্যাশা নিয়ে কোচ যে ৪-৩-৩ ছক কষবেন, সেখানে রোনালদোর থাকা নিশ্চিত। গতবার উরুগুয়ের কাছে হেরে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে গিয়েছিল পর্তুগিজরা।

চোখ থাকবে রুবেন দিয়াসে

২০১৬ সালের সাফল্যের পর পর্তুগালের জন্য সবচেয়ে জরুরি ছিল রক্ষণ দেয়াল পুননির্মাণ। পেপে, জোসে ফন্তে এবং ব্রুনো আলভেসরা চল্লিশের পথে থাকায় তরুণ ও তরতাজা ডিফেন্ডারের খোঁজে ছিল তারা। দিয়াসকে দিয়ে কিছুটা পূরণ হয়েছে সে শূণ্যতা।২০১৮ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সী আন্তর্জাতিক অভিষেক দিয়াসের। সেসময় তিনি খেলতেন পর্তুগালের দল বেনফিকায়। ওই ক্রাবে খেলার সময়ই দারুণ পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি নজরে আসেন সান্তোসের। রাশিয়া বিশ্বকাপের দলে সুযোগও পেয়ে যান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।পর্তুগালের ড্রেসিংরুমে দিয়াস এখন আর শিক্ষানবিশ নন। কাতার বিশ্বকাপ অভিযানে দলের অপরিহার্য সদস্যদের একজন তিনি এবং সেটা যৌক্তিক কারণেই। বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার ভিনসেন্ট কম্পানি অবসর নেওয়ার পর ২০২০ সালে যখন ম্যানচেস্টার সিটি দিয়াসকে দলে টানল, প্রিমিয়ার লিগের ওই অভিষেক মৌসুমে ফুটবল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পান তিনি। ডিফেন্সে ৩৯ বছর বয়সী পেপের পাশে দিয়াসের উপস্থিতি পর্তুগালকে ভরসা জোগাচ্ছে। নিখুঁত ট্যাকল এবং বল চালাচালির দক্ষতা দিয়ে এই আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। 

বিশ্বকাপ ইতিহাসে পর্তুগাল

সে অর্থে আলো ঝলমলে নয় দলটির বিশ্বকাপ ইতিহাস। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে কিংবদন্তি ইউসেবিওর অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্সে তৃতীয় হওয়াটা আজও বৈশ্বিক আসরে পর্তুগালের সেরা সাফল্য।এরপর অপেক্ষার অনেক প্রহর শেষে ১৯৮৬ সালে ফের মেক্সিকোতে বিশ্বকাপ খেলতে যায় পর্তুগাল। গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর আবার তারা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী। এরপর আবার ২০০২ সালে কোরিয়া-জাপানের আসরে বিশ্বমঞ্চে পা পড়ে তাদের। এরপর থেকে বিশ্বকাপের আঙিনায় নিয়মিত তারা। এ সময়ের মধ্যে ২০০৬ সালে জার্মানির বিশ্বকাপে পর্তুগাল উঠেছিল সেমি-ফাইনালে।এবার পর্তুগালের দৌড় কতদূর-এ প্রশ্নের উত্তর আপাতত সময়ের হাতে তোলা থাকছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে থাকা রোনালদো নামের এক গোলমেশিন,  জ্বলে ওঠার ক্ষণ গোণা তরুণ কস্তা-লিয়াও-দিয়াসরা থাকায় বড় স্বপ্নই দেখছে পর্তুগিজরা।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য