স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২২ জানুয়ারি: স্ত্রীর সঙ্গে একটি মাত্র সেলফি। সেই সেলফিই কাল হল মাওবাদী কমান্ডার জয়রাম রেড্ডি ওরফে চালাপাতির। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর পর অবশেষে ভবলীলা সাঙ্গ হল তাঁর। সম্প্রতি ওড়িশা ও ছত্তিশগড় সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে ২০ জন মাওবাদীর। সেই তালিকায় রয়েছে এই চালাপাতির। যার মাথার দাম ছিল এক কোটি টাকা।
জানা যাচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুরের বাসিন্দা ছিলেন চালাপাতি। পড়াশুনো দশম শ্রেণি পর্যন্ত। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলেও তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল নজরকাড়া। যার দৌলতেই বাকিদের ছাপিয়ে মাওবাদীদের সেন্ট্রাল কমিটির অন্যতম কমান্ডার হয়ে ওঠেন তিনি। একাধিক রাজ্যে মাওবাদী সংগঠনের বাড়বাড়ন্তে চালাপাতির প্রধান ভূমিকা ছিল। এক কোটি টাকা মাথার দাম থেকেই আভাষ পাওয়া যায় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে কত বড় টার্গেট ছিল চালাপাতি।
নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, বস্তারের ঘন জঙ্গলের প্রতিটা অঞ্চল হাতের তালুর মতো চিনত এই মাওবাদী নেতা। শুধু তাই নয়, দাগি এই মাওবাদীর নিরাপত্তায় সর্বদা ৮ থেকে ১০ জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকত। তাঁদের হাতে থাকত একে-৪৭, ইনসাসের মতো অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। এতেই বোঝা যায় মাও-নেটওয়ার্কে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল চালাপাতি। নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার রণকৌশল থেকে শুরু করে মাওবাদীদের রণনীতি তৈরি, অস্ত্রশস্ত্র জোটানো সবকিছুই নিজে হাতে সামাল দিত। তাঁর নেতৃত্বে বস্তার রেঞ্জে আরও নৃশংস হয়ে ওঠে মাওবাদী সংগঠন। তবে এই ভয়ঙ্কর মাও নেতা সম্পর্কে তথ্য থাকলেও তাঁকে চেনার মতো কোনও ছবি ছিল না নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে। সম্প্রতি ৬০ বছর বয়সি চালাপাতির একটি ছবি গোয়েন্দাদের হাতে আসে। কোনও এক সময় স্ত্রীর সঙ্গে সেলফিটি তুলেছিলেন ওই মাও নেতা। ওই ছবির উপর ভিত্তি করেই তাঁর খোঁজ শুরু হয়। অবশেষে মাও বিরোধী অভিযানে এই বিরাট সাফল্য পেল প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ওড়িশা সীমান্ত লাগোয়া গরিয়াবান্দ জেলার কুলহাড়ি ঘাটের জঙ্গলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল নিরাপত্তাবাহিনী। গত সোমবার থেকে টানা ৩৬ ঘন্টার এই অভিযানে খতম হয় চালাপাতি-সহ ২০ জন মাওবাদী। ওড়িশা পুলিশ ও ছত্তিশগড় পুলিশের পাশাপাশি আধাসেনার প্রায় ১০টি আলাদা আলাদা বাহিনী অংশ নিয়েছিল এই অভিযানে। এই সাফল্যের পর এক্স হ্যান্ডেলে বার্তা দেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি লেখেন, ‘মাও-মুক্ত ভারতের লক্ষ্যে এ এক বিরাট সাফল্য। আমাদের পুলিশ ও আধা সেনার যৌথ প্রয়াসে মাওবাদীরা এখন শেষ শ্বাস নিচ্ছে। মাওবাদী মুক্ত ভারতের প্রতিজ্ঞা শীঘ্রই সফল হবে।’