ইমফল, ৪ জানুয়ারি (হি.স.) : স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি শিখরকে মাউন্ট হ্যারিয়েট বলা হয়। আমরা একে ‘মাউন্ট মণিপুর’-এ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির জন্য পূর্ববর্তী সরকারগুলির একটি নীতি ছিল, ‘পূর্ব দিকে তাকাবেন না’, কিন্তু আমরা দেশের ঈশাণকোণে অবস্থিত এই অঞ্চলের জন্য ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ গ্রহণ করে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছি। বক্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় একদিনের সফরসূচি নিয়ে মণিপুরের রাজধানী ইমফল বিমানবন্দরে বিশেষ উড়ানে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রী নংথমবাম বীরেন সিংহ প্রমুখ। ঝটিকা সফরে এসে তিনি প্রায় ৪,৮০০ টাকার ২২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। এগুলির মধ্যে ১,৮৫০ কোটি টাকার প্রায় ১৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ২,৯৫০ কোটি টাকার নয় (৯)-টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশাল জনসমাবেশে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী পূৰ্ববৰ্তী সরকারগুলির ওপর হামলা করে বলেন, পূৰ্বোত্তর এখন আর অনুন্নত নয়। বিকাশের প্রবেশদ্বারে পরিণত হয়েছে। উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির জন্য পূর্ববর্তী সরকারগুলির একটি নীতি ছিল, ‘পূর্ব দিকে তাকাবেন না’, কিন্তু আমরা দেশের ঈশাণকোণে অবস্থিত এই অঞ্চলের জন্য ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ (পূর্বে তাকাও নীতি) গ্রহণ করে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছি। নয়াদিল্লিতে আগে যে সব সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারা মণিপুর-সহ উত্তরপূর্বকে অবহেলা করে ‘পাহাড়-উপত্যকা খাদ’ তৈরি করে রেখিছিল। কিন্তু কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারগুলি শান্তি, প্ৰগতির ক্ষেত্ৰে নতুন ভোরের সূচনা করেছে। দেশের ঈশাণকোণ উত্তরপূর্ব ভারতকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে চালক হয়ে উঠছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র সংকল্প নিয়ে দিল্লির বিজেপি সরকার গত সাত বছর কঠোর পরিশ্রম করছে। যার ফল উত্তরপূর্ব, বিশেষ করে মণিপুরে পরিবর্তন স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। উদাত্ত ভাষণ দিতে গিয়ে মোদী বলেন, তিনি বলেন, মণিপুর আজ পরিবর্তনের নতুন কর্মসংস্কৃতি ও উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠছে। মোদী বলেন, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্ত নেই। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন না জনতা। এ অঞ্চলে আজ শান্তি ও উন্নয়নের ধারা বইছে। উত্তরপূর্ব জুড়ে শত শত যুবক আজ অস্ত্র ছেড়ে উন্নয়নের তাগিদে সমাজের মূলস্রোতে গা ভাসাচ্ছেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে যখন শেষবার মণিপুরে এসেছিলেন, তখন তিনি এখানকার জনগণের কষ্ট জানতে ও বুঝতে পেরেছিলেন। তাই ২০২৪ সালের পর তিনি মণিপুরে গোটা কেন্দ্রীয় সরকারকে নিয়ে এসেছেন। এখন আর মণিপুরের কোনও সমস্যা নিয়ে রাজ্যবাসীকে দিল্লি ছুটে যেতে হয় না। দিল্লি থেকে প্রতি এক পক্ষকালে কোনও না-কোনও মন্ত্রী বা আমলা এসে এখানকার পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে সমাধান করেন। এটাই পরিবর্তন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এখানকার মইরাঙের ভূমি থেকে দেশের মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছিন, তা এক বিরল দৃষ্টান্ত। মইরাঙে নেতাজি সুভাষের ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী (আইএনএ) প্রথমবারের মতো দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিল। তাই উত্তরপূর্বকে ভারতের স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার। এটা নতুন ভারতের স্বপ্ন পূরণের প্রবেশদ্বার হয়ে উঠছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন, কয়েকদিন পর ২১ জানুয়ারি মণিপুর রাজ্য গঠনের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। তাই এজন্য রাজ্যবাসীকে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। বলেন, বর্তমানে দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষ্যে অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে। এই সময়টা দেশবাসীর কাছে এক মহান অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, আজ যে প্রকল্পগুলির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধন করা হয়েছে, এজন্য আমি আজ আবার মণিপুরের জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সব হচ্ছে আপনাদের জন্যই। কেননা, মণিপুরে আপনারা এমন একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন করেছেন যা পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে, পূর্ণ শক্তির সাথে চলছে। আপনার একটি ভোটের কারণে তা সম্ভব হয়েছে, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি আনুযায়ী আজ সকাল ঠিক ১১টায় ইমফল বিমানবন্দরে বিশেষ উড়ানে এসে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নংথমবাম বীরেন সিংহ, বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রভারী অজয় জামুয়াল, প্রদেশ সভানেত্রী শারদা অধিকারিমায়ুম দেবী, সাধারণ সম্পাদক (প্রশাসন) হনরেইখুই কাশুং সহ দলের কয়েকজন মন্ত্রী